একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দীনি শিক্ষার সিলেবাস ও কারিকুলামে সুকৌশলে বিকৃতি ঘটিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব শান্তির অন্বেষায় প্রকৃত দীনি শিক্ষা, দাওয়াত ও দীনের সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, ‘প্রকৃত আলেমের হাত থেকে কৌশলে দীনি শিক্ষাকে ছিনিয়ে নিয়ে আলেম নামধারী একটি ভ্রান্ত ও তাবেদার শ্রেণির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যারা ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন নায়েবে রাসূল তৈরির লক্ষ্যে প্রকৃত দীনি শিক্ষার কারিকুলাম প্রণয়নের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত দীনি শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো গেলে বাংলাদেশের আলেমরা শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয় বরং সারা বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ মসজিদকে কেন্দ্র করে বিশ্বময় ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণে সক্ষম হবে।’
তিনি বলেন, ‘ওহিভিত্তিক শিক্ষায় দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির ব্যবস্থা নিহিত থাকায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগ থেকেই দীনি শিক্ষা বিস্তারের কার্যক্রম শুরু হয়। এ শিক্ষার পরশেই মহানবী (সা.)-এর প্রিয় সাহাবিরা আদর্শবান ও সারা বিশ্বের মানুষের অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হিসেবে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ইবরাহীম সালেহ আস সাইয়্যেদ সুলাইমান বলেন, ‘আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে দীনি শিক্ষার বাস্তবায়নে যে কোনও ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন দীনি শিক্ষার যে কারিকুলাম তৈরি করছে, তাতে সহযোগিতা করবে।’ আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যোগাযোগ রক্ষার জন্য একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য।এছাড়া, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের যে কোনও প্রয়োজনে সহায়তা করার আশ্বাস প্রদান করেন ড. ইবরাহীম সালেহ আস সাইয়্যেদ সুলাইমান।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড.আবদুল মান্নান বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে ইসলামি জ্ঞান চর্চায় যত প্রতিষ্ঠান আছে, তন্মধ্যে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয় শ্রেষ্ঠ। তারা ছাত্রদের ধর্মান্ধ নয়,ধর্মভীরু করে গড়ে তোলে।এখানে প্রকৃত জ্ঞানচর্চার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুফী সাধকদের মাধ্যমেই এদেশে ইসলাম এসেছে। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ধর্মকে কলুষিত করতে ইসলামকে পুঁজি করে একটি বিকৃত ইসলাম কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সামনে তুলে ধরছে এবং সেই বিকৃত ইসলামের ধারণাটিকে ভুল প্রমাণিত করতেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রায় ৮০ হাজার আলেম ওলামা রয়েছেন, যারা প্রকৃত ইসলামের খেদমত করে যাচ্ছে।পৃথিবীর ইতিহাসে এত বড় কোনও দীনি প্রতিষ্ঠান নেই, যা বঙ্গবন্ধু করে দিয়ে গেছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইসলামের সঠিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে প্রকৃত কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে দীনি শিক্ষার কারিকুলাম তৈরি করার কাজ হাতে নিয়েছে। এই শিক্ষা কারিকুলামের মাধ্যমে প্রকৃত এলেমওয়ালা আলেম তৈরি হবে এবং অচিরেই বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির একটি ঢাল হিসেবে বিশ্ব দরবারে স্থান করে নেবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুন-অর-রশিদ আসকারী,আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড.আবদেল ফাত্তাহ আবদেল ঘানি মোহাম্মদ ইবরাহীম ও প্রফেসর ড. ইসমাইল মোহাম্মদ আলী আবদেল রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভাশেষে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড.ইবরাহীম সালেহ আস সাইয়্যেদ সুলাইমান বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজের খুতবা পাঠ ও ইমামতি করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন