‘আমি রাজনৈতিক কর্মী। রাজনীতির সঙ্গে হাত ধরাধরি করে সাংস্কৃতিক কর্মীরা চলে। আমি আপনাদের বিনয়ের সঙ্গে বলছি, রাজনৈতিক কর্মীরা বহুত সময় ক্ষমতার পেছনে ছুটতে যেয়ে হোঁচট খায়। লোভ, অর্থের পেছনে পা পিছলে ছিটকে যায়। সুতরাং রাজনৈতিক কর্মীরা বহুত সময় আপস করে এবং নীতিভ্রষ্ট হয়।’
ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এই চৌধুরী মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ‘গাঙচিল’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রের মহরতে এসে ইনু এ কথা বলেন।
রাজনৈতিক কর্মীরা আপস করলে এবং নীতিভ্রষ্ট হলেও সংস্কৃতিকর্মীরা মোটেও তেমনটা নন বলে মনে করেন হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘আমার দেখা সাংস্কৃতিক জগতের যারা কর্মী তারা কিন্তু কখনোই নীতিভ্রষ্ট হয় না। তারা কিন্তু সব সময় আদর্শে অবিচল থাকে। গর্দান চলে যাবে, কিন্তু আপস করবে না, আপস করবে না।’
কিছুদিন আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপন্যাস নিয়ে ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেন পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূল। গত আগস্টের শেষ দিকে রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় নায়ক-নায়িকার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়। আজ দুপুরে ঢাকা ক্লাবে মহরত অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ সকালে সাংবাদিকদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকায় মহরতে আসতে দেরি হয় হাসানুল হক ইনুর। বক্তব্যের শুরুতে তাই বললেন, ‘বিলম্ব হয়েছে, এই জন্য আমি কোনো কৈফিয়ত দিতে চাচ্ছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ওখানে সাংবাদিকদের নিয়ে একটা অনুষ্ঠান ছিল, সেটা শেষ করে আসতে হয়েছে। আপনারা যাঁরা অপেক্ষা করেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ।’
তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার সুবাদে চলচ্চিত্রের অনেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হয় হাসানুল হক ইনুকে। তবে আজকের অনুষ্ঠানটিকে ভিন্নধর্মী উল্লেখ করেছেন তিনি। বললেন, ‘ভিন্নধর্মী একটা অনুষ্ঠান এই জন্য যে, আমার সহযোদ্ধা, সহকর্মী এবং মুক্তিযুদ্ধের মাঠের যুদ্ধের সাথী আমার অতিপ্রিয় ওবায়দুল কাদের সাহেবের একটা উপন্যাসকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেই অনুষ্ঠানে আজকে আমি এসেছি। অনেক মহরত অনুষ্ঠানে গিয়েছি। সেটা বড় কথা নয়, আজকেরটা ভিন্ন। আমার সঙ্গে আমার সহকর্মী, সহযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর আছেন, আমার সহকর্মী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম আছেন। চলচ্চিত্রজগতের দিকপালেরা আছেন। নায়িকারা আছেন, অভিনেত্রীরা আছেন।’
ইনু তাঁর বক্তব্যে এ-ও বলেন, ‘“গাঙচিল” একটা উপন্যাস, ওবায়দুল কাদের সাহেব লিখেছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব ছোটবেলা থেকে ছাত্ররাজনীতি করেছেন। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করতেন। তিনি কবিতা লেখেন, লেখালেখি করেন এবং সংস্কৃতি জগতে তাঁর পদার্পণ আছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালে শেখ হাসিনার সরকার যখন প্রথম দায়িত্বভার নেন, তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। যথেষ্ট পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছেন।’
‘গাঙচিল’ উপন্যাস ও ছবিটি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আজকে যে বইটা (সিনেমা) নিয়ে মিলিত হয়েছি, একটা বঙ্গোপসাগরের ছোট্ট দ্বীপ, সেই দ্বীপের সুখ-দুঃখের কাহিনি, মানুষের কথা, ভালোবাসার কথা, চেতনার কথা, সংগ্রামের কথা—এই উপন্যাসে আছে। আমাদের পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ কীভাবে এটাকে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন, তা নির্ভর করছে তাঁর ওপর।’
নির্মাতাকে উদ্দেশ করে ইনু বলেন, ‘মনে রাখবেন, চমৎকার উপন্যাস হতে পারে, কিন্তু চমৎকার চিত্রনাট্য দরকার। চিত্রনাট্যের পর অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আসবেন। আমি আশা করি, যাঁর হাতে এই দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে তিনি দক্ষ ব্যক্তি। আমাদের দর্শকেরা ছবিটি ভালোভাবে গ্রহণ করবেন।’
‘গাঙচিল’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি অভিনয় করবেন ফেরদৌস, পূর্ণিমা, ঋতুপর্ণা, তারিক আনাম খানসহ আরও অনেকে। আজকের অনুষ্ঠানে তাঁরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নাসিরুদ্দীন দিলু, সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ, অভিনয়শিল্পী জ্যোতিকা জ্যোতি, কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগ, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, প্রযোজক শেলী মান্না প্রমুখ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন