গতকাল দৈনিক নয়া দিগন্ত তাদের প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছিল, “আজ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সাথে ফখরুলের বৈঠক”।
প্রতিবেদনের ভেতরে লেখা হয়--
“জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে নিউইয়র্কে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার রাত ২টায় অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফাইটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। তার সাথে গেছেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।
....একটি সূত্র জানিয়েছে, এ সফরে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথেও বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির সাথে আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব। দলটিকে এই আগ্রহের কথা জানিয়ে গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিবকে নিউ ইয়র্কে যেতে আমন্ত্রণ পাঠান অ্যান্তোনিও গুতেরেস।”
কিন্তু বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে সাক্ষাৎ হয়নি মির্জা ফখরুলের। কারণ জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা প্রেস রিলিজ বলছে গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার অ্যান্তনিও গুতেরেস সাবেক মহাসচিব কফি আনানের দাফন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঘানায় অবস্থান করছিলেন।
বিএনপির সূত্রের বরাতে আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এমনটি জানিয়েছিল। যুগান্তরের ১২ সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “জাতিসংঘের আমন্ত্রণে নিউ ইয়র্ক গেলেন মির্জা ফখরুল”। যুগান্তরের প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়, “জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আমন্ত্রণে নিউইয়র্ক গেলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।”
১২ সেপ্টেম্বর বাংলানিউজের শিরোনাম ছিল, “জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে নিউইয়র্কে ফখরুল”।
বিএনপির সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা ইউএনবি’ও জানিয়েছিল জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক হবে ফখরুলের-- “BNP secretary general Mirza Fakhrul Islam Alamgir left Dhaka early Wednesday for New York to 'meet UN secretary general Antonio Guterres', reports UNB.”
এছাড়া চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল নিউইয়র্কে পৌঁছার পর নিজেই সাংবাদিকদেরকে বলছেন, “আমি জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে এখানে এসেছি।বৈঠকের পর প্রথম আলো জানিয়েছে, জাতিসংঘের একজন সহকারী মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে মির্জা ফখরুল ইসলামের। “জাতিসংঘে বিএনপি: রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা” শিরোনামের প্রতিবেদনে পত্রিকাটি আজ শুক্রবার লিখেছে, “বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেঙ্কার সঙ্গে বৈঠক করে।”
দৈনিক নয়াদিগন্তের দেয়া তথ্য অনুযায়ী জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে দেখা হয়নি। কিন্তু দেখা না হলেও আমন্ত্রণটি কি বিএনপির কাছে জাতিসংঘ মহাসচিব পাঠিয়েছিলেন? বা জাতিসংঘের অন্য কোনো স্তরের কর্মকর্তার কাছ থেকে পাঠানো হয়েছিল? নাকি আদৌ জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোনো আমন্ত্রণই পাঠানো হয়নি? এ নিয়ে বিপরীতমুখী তথ্য ও বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
চ্যানেল টোয়েন্টিফোর জানাচ্ছে, “বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে কোনো আমন্ত্রণ জানাননি জাতিসংঘ মহাসচিব। বরং বিএনপির অনুরোধে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে আলোচনা করেছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লেভ জানকো। এ কথা জানিয়েছেন তার অফিসের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশন অফিসার জোয়স লুইস ডায়াজ।”
সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত “মির্জা ফখরুলকে আমন্ত্রণ জানাননি জাতিসংঘ মহাসচিব” শিরোনামের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, “এ নিয়ে সহকারী মহাসচিব মিরোস্লেভ জানকোর সাথে যোগাযোগ করে চ্যানেল 24। তার অফিস থেকে জানানো হয়, বিএনপির অনুরোধেই মিরোস্লেভ জানকো সাথে মির্জা ফখরুলে বৈঠক হয়। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের সাথে এমন বৈঠক নিয়মিত করা হয়ে থাকে বলেও জানানো হয়। ইমেইলে এও জাতিসংঘ আশা করছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে সুষ্টু, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য। মহাসচিবে আমন্ত্রণ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্যে কাঙ্ক্ষিত নয় বলে মন্তব্য করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ ও মহিউদ্দিন আহমদ বুলবুল।”
বিএনপিকে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল কিনা এবং হয়ে থাকলে সেটির কোনো কপি আছে কিনা- bdfactcheck.com এর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল দলটির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে। তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমি কিছু জানি না। মহাসচিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরলে উনি বলতে পারবেন।”
এ বিষয়ে জানতে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লেভ জ্যঙ্কোকে bdfactcheck.com এর পক্ষ থেকে ইমেইল করা হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত ইমেইলের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি; পেলে সাথে সাথেই তা যোগ করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন