ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভা আগামীকাল শনিবার। এ সভায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি ও তা বাস্তবায়নের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ইশতেহার প্রণয়নে কমিটি গঠন এবং বিভাগীয় নির্বাচনী বর্ধিত সভা, জেলায় জেলায় নির্বাচনী বর্ধিত সভা (যেখানে থানা ও পৌরসভার নেতারাও থাকবেন) এবং এজেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের চূড়ান্ত তাগাদা, নির্বাচনী আইন ও বিধি নিয়ে পর্যালোচনা, মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু, প্রচার কৌশল নির্ধারণ এবং বিগত ও আগামী জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করা হবে এ বৈঠকে।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। গত ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চেয়ারম্যান করে ১৩৪ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে আওয়ামী লীগ। এতে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমামকে কো-চেয়ারম্যান এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সদস্য সচিব করা হয়। এ কমিটিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচটি ইমাম যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে আলোচনার জন্য বেশকিছু এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৈঠক থেকে কিছু সিদ্ধান্ত আসবে বলে আমরা আশা করছি।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই আট বিভাগে আটটি বর্ধিত সভা করা হবে যেখানে নেতাকর্মীদের নির্বাচনী নির্দেশনা এবং করণীয় নিয়ে নির্দেশনা দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে এসব সভার দিন-তারিখ ঠিক করা হবে। পাশাপাশি থানা, উপজেলা ও পৌরসভা নেতাদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে বর্ধিত সভার প্রস্তাব আজকের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তাব অনুমোদন হলে কেন্দ্র থেকে জেলা নেতাদের চিঠি পাঠানো হবে।
সূত্রমতে, বেশ কিছুদিন আগেই এজেন্ট প্রশিক্ষণের একটি খসড়া সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছিল। নানা জটিলতায় তা আর বাস্তবায়ন করা হয়নি। এবার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে চূড়ান্তভাবে এর দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। সে অনুযায়ী দ্রুত কাজ শুরু হবে। এদিকে প্রায় এক বছর আগে সারা দেশে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছে শাসক দল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সব কেন্দ্রে কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়নি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে এর সর্বশেষ তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়া হবে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে মনোনয়ন নিয়ে খুব একটা আলোচনা না-ও হতে পারে। তবে, কবে থেকে মনোনয়ন ফরম আহ্বান করা হবে সেটার তারিখ নির্ধারিত হতে পারে এ বৈঠকেই। মনোনয়ন ফরম তোলা এবং জমা দেয়ার সময়সীমা এবং মনোনয়ন ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ বৈঠক থেকে জানানো হতে পারে।
সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশনের যেসব আইন ও বিধি নিয়ে শাসক দলের বক্তব্য আছে আগামীকালের বৈঠকে সেসব চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। যেমন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিশন আরপিও সংশোধন এবং ইভিএম প্রচলন নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে।
সূত্র জানায়, এ বৈঠকেই দলের প্রচার উপ-কমিটিকে নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল, মাধ্যম, বার্তা নির্ধারণ করার চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়া হবে। প্রচারণায় কী কী বিষয় থাকবে, কী কী বিষয় গুরুত্ব পাবে সে সম্পর্কে একটি গাইডলাইন দেয়া হবে প্রচার উপ-কমিটিকে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের পর থেকে সংশ্লিষ্ট নেতারা নির্বাচনী পরিসংখ্যান সংগ্রহ করেছেন। দেশের সব কটি আসনের এ সংক্রান্ত তথ্য তাদের হাতে আছে। কোন আসনে কয়টি ভোট কেন্দ্র, কতজন ভোটার, কতজন পুরুষ ভোটার, কতজন নারী ভোটার সে সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের কাছে কী কী ফ্যাক্টর কাজ করে বা ভবিষ্যতে করতে পারে, সেগুলো চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। পাশাপাশি কোন আসনে দল কতবার জিতেছে, ব্যক্তি হিসেবে কে কতবার জিতেছেন, কার জনপ্রিয়তা কেমন, মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কে বা কারা সেসব পরিসংখ্যানও সংগ্রহ করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত সব তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
আজ সম্পাদকমণ্ডলীর সভা : আজ আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা। বিকাল সাড়ে ৪টায় দলের সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন