অলিউল্লাহ নোমান
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সূরকার ড. কামাল হোসেন সাহেবের ৩টি শর্ত গতকাল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। এর পর থেকে বিষয় গুলো সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে। বেশ আগ্রহ নিয়ে শর্ত গুলো পাঠ করেছিলাম। ভালই লাগল দেখে। এমনটা না হলে কেমনে চলে!
জাতীয় ঐক্যের নামে দলছুট, উদ্বাস্তু নেতাদের সাথে বিএনপি ঐক্য করতে হলে কি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন ড. কামালের ঐক্য প্রক্রিয়া? আসুন আগে সে গুলোতে আবার চোখ রাখি।
প্রথম শতর্, জামায়াতে ইসলামীর সাথে সব রকমের সম্পর্ক বাদ দিতে হবে। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কোন সম্পর্ক রাখা চলবে না। বেশ ভাল কথা। জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিতে আপত্তি হয়ত: থাকা রকথা নয়।
দ্বিতীয় শর্ত, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবী জাতীয় ঐক্যের ফ্ল্যাটফরম থেকে করা যাবে না। এটা বিএনপি দলীয়ভাবে করতে পারবে। এইটা বিএনপি কিভাবে গ্রহন করে সেটাই দেখার বিষয়।
তৃতীয় শর্ত হচ্ছে, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ঐক্যজোটগতভাবে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা যাবে না। তিনি তো রাজনীতিতেই আছেন। পুনর্বাসিত হওয়ার প্রশ্ন আসে কেন! তিনি এখন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তাঁকে বাদ দিয়ে কিভাবে জোটে যোগ দেয়ার প্রশ্ন আসবে সেটাই দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে!
আমি অনেক আগেই লিখেছিলাম তাদের বিষয়ে। ড. কামাল হোসেন বড় নেতা জ্ঞানী মানুষ। এতে কোন সন্দেহ নাই। আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট পরবর্তী রাজনীতিতে ড. কামাল হোসেনরা মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। যদি গ্রহনযোগ্য হত তাইলে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার কথা নয়। তিনি তো আর গ্রামে গিয়ে ইলেকশন করেননি। যতবার ইলেকশন করেছেন ঢাকা শহর থেকেই করেছেন। ঢাকার মানুষ সচেতন। তারপরও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবেও মিরপুর থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন।
একজন রসিকতা করে কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ড. কামাল সাহেবরা হলেন,খেয়াঘাটে দাড়িয়ে মাঝিকে ডাকেন- হে মাঝি তোমার তরী তীরে নিয়ে আস। কিন্তু মাঝি তাঁর কথা আর বোঝেন না। তরীও তীরে আসে না। তারা দেশের জনগণের ভাষা বুঝতে পারে না। জনগণের ভাষায় কথাও বলতে পারে না। সুতরাং জনগনও তাদের গ্রহন করে না।
ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তাঁর নিজের এলাকায় জনপ্রিয়তা ছিল। এখনো হয়ত: আছে। তবে নিজের এলাকা ছাড়া অন্য কোন প্রার্থী তাঁর দল থেকে বিজয়ী তো দূরে কথা, জামানত থাকবে না।
আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। তাঁর জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখনো তিনি ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হতে পারেননি। বিএনপি’র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে দলে থাকতে পারেননি। শেখ হাসিনা তাঁকে দল থেকে বের করে দিয়েছেন। দলচ্যুত হওয়ার পর আর কখনো বিজয়ের আলো দেখেননি।
২০১৪ সালে একবার ঐক্য করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই উদ্যোগের সময় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেছিলেন তিনি। বৈঠক থেকে বের হয়েই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, তিনি ‘বঙ্গবন্ধুর’ আদর্শের রাজনীতি করেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোন আন্দোলনে তিনি যাবেন না।
মাহমুদুর রহমান মান্না। ভাল ছাত্র নেতা ছিলেন। ডাকসুর ভিপি ছিলেন। তবে গণরাজনীতিতে তাঁর অবস্থান পরীক্ষা করার সুযোগ এখনো আসেনি।
জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ভোটের হিসাব করলে -০০০১
সব শূন্য এক সাথে যোগ করলে যা হয় তার ফলাফলও তেমনই হওয়ার কথা।
এসব শর্তের পরও জাতীয় ঐক্য নামে অশ্বডিম্ব প্রসব হউক। সেটা আমারদের কাম্য। সেই অশ্বডিম্ব বিস্ফোরিত হয়ে শেখ হাসিনার পতন হউক। সেই অপেক্ষায় থাকলাম।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:এসব শর্ত মেনেও ঐক্য হলে কেউ কিন্তু আশ্চার্য্য হবে না। হলে হতেও পারে।
আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে সবাইকে। এই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার গিতীকার কিন্তু ইন্ডিয়া। শেখ হাসিনা কোন কারনে বেকায়দায় পড়লে তাঁকে উদ্ধারের একটি পথ ইন্ডিয়ার বি টিম দিয়ে তৈরি করা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন