দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের দেশকে, দেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। আমরা প্রথম থেকে বারবার বলে আসছি, আমাদের নেত্রী জেলে যাওয়ার পূর্বেও মিটিংয়ে বলে গেছেন। তাই আসুন আমরা দল-মত নির্বিশেষে এক হয়ে, এই যে দানব আমাদের বুকের ওপর ভর করে বসে আছে এই দানবকে আমরা সরিয়ে দেই। যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের মুখে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়, সেদেশে আপনি কি আশা করছেন?’
শুক্রবার(১৭ আগষ্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশ ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশ আয়োজিত সাংবাদিক নির্যাতনবিরোধী সংহতি সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাতের আঁধারে মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের অপরাধ তারা নাকি ছেলেদের আন্দোলনে উস্কানি দিয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ তো সব সময় করে তারা। আজকেও তারা বলেছে আমরা নাকি উস্কানি দিচ্ছি। আমরা তো প্রথম দিন থেকেই সমর্থন দিয়েছি। প্রকাশ্যে ছাত্রদের এই ন্যায় সঙ্গত, যুক্তি সংগত আন্দোলনকে সমর্থন করেছি। সেই সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। আমরা ছাত্রদের এই কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনকে আমরা অবশ্যই সমর্থন জানাবো এবং জনগণকে আহ্বান জানাবো যে শুধু এই নিরাপদ সড়ক নয়, নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন, আপনারা জেগে উঠুন এবং আপনার দেশকে পুনরায় স্বাধীন করুন।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরবর্তী গ্রেফতার-নির্যাতন নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘একটা মেয়ে বেল পিটিশন করেছে, সেটা কোর্ট থেকে রিজেক্ট করেছে। তার কি অপরাধ? সেকি খুনি না ডাকাত? সে কি চোরাচালানি, সে কি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে? তার আজকে আপনি জামিন আবেদন বাতিল করে দিচ্ছেন। যেসমস্ত ছেলে-মেয়েরা ঢাকার বাইরে থেকে এসে কষ্ট করে মেসে থেকে লেখাপড়া করছে, তাদের রিমান্ড বাতিল করা যাবে না বলছেন। আর যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে গেছে, শেয়ারমার্কেট লুট করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন পর্যন্ত প্রকাশ করেন না। কারণ তারা সবাই আপনাদের লোক।’
খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জাফরুল্লাহ সাহেব ঠিক বলেছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সব জায়গায় বিএনপির ভুত দেখতে পান, তিনি সব জায়গায় জিয়া পরিবারের ভুত দেখতে পান। না হলে সেই ১৯৭৫ সালের ঘটনায় কীভাবে তিনি খালেদা জিয়াকে যুক্ত করেন জোর করে, তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যুক্ত করেন। আর যা আসে মুখে তাই তিনি বলছেন। আমরা এই কথাগুলো বলতে চাই না। আমরা বলতে চাই আপনি রাজনীতিবিদ, আপনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন। আপনার মুখ দিয়ে এধরনের অর্বাচীন কথাবার্তা কখনোই শোভা পায় না। কিন্তু এটা আপনার স্বভাব। আপনি আপনার স্বভাবের মধ্যে দিয়ে এধরনের হাস্যকর অর্বাচীন কথাবার্তা বলেন। দয়া করে এ ধরনের কথাবার্তা বন্ধ করুন। আমরা তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দয়া করে সঠিক পথে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’
‘১/১১ র পদধ্বনি শুনতে পারছি’- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি একটি মারাত্মক কথা বলেছেন। তিনি ১/১১’র পদধ্বনি শুনতে পারছেন। এরপরও আপনারা সরকারে আছেন? এখনও পদত্যাগ করছেন না? সরকার তো আপনাদের আর আপনারা ১/১১’র পদধ্বনি শুনতে পারছেন? আমাদের একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না। এই ১/১১’র বেনিফিশিয়ারি কিন্তু আওয়ামী লীগ। এতটাই বেনিফিশিয়ারি যে তাদের নেত্রী বিদেশ যাওয়ার আগে বলেছিলেন আমরা এই ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সব কর্মকাণ্ডের বৈধতা দিবো, দিয়েও ছিল, পার্লামেন্ট এ আইন পাশ করেছে। এরপর আপনারা ১/১১ শুনতে পারছেন কেন?’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন