একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডিসেম্বরের শেষদিকে ভোট হবে। সরকারও বসে নেই। নির্বাচনকালীন ‘ছোট সরকার’ গঠনের তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখেই অক্টোবরে হবে এই সরকার।রাজপথের বিরোধী দল বিএনপিও নীতিগতভাবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে সর্বশেষ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এবং তারপর থেকে সিইসি কেএম নূরুল হুদা ও কমিশনের কর্মকর্তাদের বক্তব্য বিএনপিকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
দলটির নেতারা এখন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো ধরনের আস্থা রাখতে পারছেন না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে বর্তমান সরকারের উপরও তাদের বিন্দুমাত্র ভরসা নেই।
বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের ভাষ্যে, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনেই বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু পরিবেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিন সিটিতে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি হয়েছে। এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম হবে না— এমন গ্যারান্টি যে সিইসি দিতে পারেন না, তার পক্ষে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
আর ইসি সচিব আগ বাড়িয়ে বলেই দিয়েছেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। এর মাধ্যমে তারা সত্যিকার অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। ফলে এই সরকার ও কমিনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া বৃথা।
বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা জানিয়েছেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় নির্বাচনের মতো এটিও বর্জনের পথেই হাঁটবে বিএনপি। তবে এজন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তারা।
এরপরও আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গুলশান কার্যালয়ে তিন দফা বৈঠক করেছেন। সেখানে নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যু উঠে এসেছে।
সামগ্রিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্য চাই। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাই। ইসির দায়িত্ব লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। দলগুলোকে আস্থায় নেয়া।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করি, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। তবে আমরা চাইলেই তো হবে না। এখানে অনেক খেলা চলছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতিই নিয়ে রাখছি।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিলেই ভোটাধিকার নিশ্চিত হয় না। তিন সিটির নির্বাচনে আমরা কি দেখলাম, ভোট কেন্দ্রেই ভোটাররা যেতে সাহস করেননি। আমরা বলছি না নির্বাচনে যাব না। কিন্তু, সেজন্য সবার আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভোটের আগে শুধু আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, বিষয়টি এত সরল নয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা দরকার, তা নিশ্চিত হলেই কেবল বিষয়টি বিএনপি শক্তভাবে ভেবে দেখবে।’
জাতীয় ঐক্য প্রশ্নে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্যমঞ্চ তৈরির চেষ্টা করছি। এজন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। ঐক্যবদ্ধ হয়েই এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্ম আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না।’
এছাড়া সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, দেশে দু’জন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। তাদের একজন খালেদা জিয়া, অন্যজন শেখ হাসিনা। কিন্তু, বাস্তবতা হলো— একজন জেলে, অন্যজন প্রধানমন্ত্রী থেকে নির্বাচন করবেন। এটা তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করতে চাই। নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের পরিবর্তন হোক। কিন্তু, নির্বাচনের নামে কোনো প্রহসনের খেলায় অংশ নিতে চাই না।’
চলতি বছরের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে পারে। এজন্য অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। আর নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা করার যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন