বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, জাতির দুর্ভাগ্য এদেশের শিক্ষিতরাই জনগণকে বঞ্চিত করছে। জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালনাকারী গুটি কয়েক লোকের লাগামহীন দুর্নীতির মাশুল দিচ্ছে ১৬ কোটি মানুষ। এ অবস্থায় দুর্নীতির মহামারী থেকে দেশকে বাঁচাতে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা না হলে আদর্শ মানুষ তৈরি হবে না।
বুধবার রাজধানীর এক মিলনায়তনে ১৫ আগস্ট ইসলামী শিক্ষা দিবস ও শহীদ আব্দুল মালেকের ৪৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রশিবির আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, সেক্রেটারি জেনারেল মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক রাজিফুল হাসান বাপ্পি, শিক্ষা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, এইচ আর ডি সম্পাদক জসিম উদ্দিন, মিডিয়া সম্পাদক মনিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
শিবির সভাপতি বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। মেরুদন্ডহীন কোন প্রাণী যেমন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তেমনিভাবে জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংষ্কৃতি, ধর্মীয় চেতনা ও আদর্শের পটভূমিতে প্রতিষ্ঠিত নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতিও বিশ্বের দরবারে শির উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। বাংলাদেশ তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। বর্তমানে আমাদের দেশে মেধার কোন ঘাটতি নেই। কিন্তু ছাত্রলীগ ও সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা অহরহ প্রশ্ন ফাঁস ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় দেশের অমূল্য সম্পদ মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে। আবার রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে অবস্থানরত মেধাবীদের মাঝে নৈতিক জ্ঞানের অনুপস্থিতির কারণে দেশ সামনের দিকে এগুতে পারছে না।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত হয়ে মেধাবীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে দুর্নীতি করছে অবাধে। যা শুধু জনগণকেই বঞ্চিত করছে না বরং বিশ্ব দরবারে জাতির মর্যাদারও হানি করছে। ব্যাংক থেকে শুরু করে কয়লা পাথর পর্যন্ত লোপাট করে নিচ্ছে। অন্যদিকে সামাজিক অবক্ষয়ও চরম আকার ধারণ করেছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদর্শ ও নৈতিক চর্চা না থাকে তাহলে সেখানে আদর্শ মানুষ তৈরি হবে না। বরং নানা রকম অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্ম হবে এবং হচ্ছেও তাই। দেশে পিতৃতুল্য শিক্ষকের কাছে ছাত্রী ধর্ষণ হচ্ছে। শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ও অসাধুতার করুণ পরিণতি অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বহন করতে হচ্ছে। আবার কখনো সম্মানিত শিক্ষকদের মারধর অপমান অপদস্ত করছে তারই ছাত্ররা। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো খুন ধর্ষণ স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সহপাঠিরা একে অন্যের কাছে নিরাপদ নয়। শিক্ষাঙ্গণে অনৈতিক কর্মকান্ডের জোয়ার বইছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নানা রকম কলঙ্কজনক ঘটনার জন্ম দিয়ে জাতিকে লজ্জিত করা হচ্ছে। ভোগবাদী, লোভাতুর মানসিকতা, নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংসে শিক্ষিতরাই এগিয়ে। যেসব মেধাবী শিক্ষিতদের নিয়ে জাতি স্বপ্ন দেখত তারাই আজ জাতির জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। অথচ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়া উচিৎ ধর্মীয় চেতনা, নৈতিকতা ও আদর্শিক ভিত্তির ওপর ভিত্তি করে গণমুখী-বাস্তব ও কর্মমুখী সার্বজনীন। শিক্ষাক্রমে নীতি নৈতিকতার সমন্বয় থাকলে তারা দেশের অভিশাপ না হয়ে সম্পদে পরিণত হত। দেশ এগিয়ে যেত সমৃদ্ধির দিকে। কিন্তু জাতির দূর্ভাগ্য তা আর হয়নি। উল্টো পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামী ভাবধারা মুছে ফেলা হচ্ছে। বই পুস্তক থেকে সুকৌশলে ইসলামী শিক্ষাকে তুলে দিয়ে সেখানে পৌত্তলিকতা ও অনৈতিকতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। ইসলাম ও মুসলিম জাতিসত্ত্বা ধ্বংসের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাআইনের কুপ্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইসলামী মূল্যবোধ বিবর্জিত শিক্ষা ব্যবস্থার পদক্ষেপ উল্টো ফল বয়ে এনেছে। ধর্মহীন শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষানীতি ভবিষ্যত প্রজন্ম ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদি ও হিন্দুত্ববাদি মানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠবে। এর ফলাফল হবে আরও ভয়াবহ। ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে সার্বজনীন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো ছাড়া জাতির প্রকৃত কল্যাণ সম্ভব নয়। একই সঙ্গে ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে সকল স্তরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলামীবিহীন শিক্ষা ব্যবস্থা জাতির জন্য অভিশাপ হবে তা বহু বছর আগেই বুঝতে পেরেছিলেন শহীদ আব্দুল মালেক। তার আশঙ্কাই আজকের বাস্তবতা। তিনি তখনকার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ১২ আগস্ট ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে কথা বলার জন্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্রীদের নির্মম আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ আগষ্ট তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তারা ভেবেছিল আব্দুল মালেককে হত্যা করলেই ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আদর্শহীনদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। শহীদ মালেকের স্বপ্ন পূরণে লাখো তরুণ অবিরাম কাজ করে চলেছে প্রতিটি জনপদে।
তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান রেখে বলেন, নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ গড়ার দায়িত্ব ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের পালন করতে হবে। দেশের প্রতিটি ছাত্রকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে এজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সমাজের প্রত্যেকটি ছাত্রের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌছিয়ে নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার সুফলতা সম্পর্কে প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষকে সচেতন করতে হবে। সময়ের ব্যবধানে আমাদের প্রচেষ্টা সফল হবেই।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন