বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে ‘সুস্থ রাজনীতি’ দিয়ে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘শুধু দিয়ে যাননি, বঙ্গবন্ধু নিজে তা করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। হাসি মুখে মানুষের মনকে জয় করে গেছেন। পিতা লিখে দিয়ে গেছেন- কোনও স্বৈরাচার নয়, এ রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।’
১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘৭৫ এর পরে ইতিহাস ঘেঁটে দেখেন। উনাকে যারা হত্যা করেছিল তারা ভেবেছিল বাংলাদেশ শেষ। কিন্তু না। উনি তাঁর আদর্শকে প্রত্যেক গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে দিয়েছিলেন। প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে এখনও মাটির মধ্যে মানুষের মধ্যে আছে শেখ মুজিবের নাম। এরপর কয়েক দফায় আন্দোলন হয়েছে দেশে, কেউ আমাদেরকে কি দাস করতে পেরেছে?’
ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সে যে কেউ হোক না কেন- তবে এই মাটি স্বৈরাচারের জন্য নয়। এই মাটির মালিক জনগণ, এটা বঙ্গবন্ধুর কথা। শুধু মুখের কথা নয়, তিনি লিখে রেখে গেছেন। যদি সম্ভব হয় আমি আপনাদের দলে দলে নিয়ে গিয়ে সেই দলিল দেখাবো, সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদ।’
মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গণফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ইতিহাসকে দেখেন, কোনও স্বৈরাচার কি আজ পর্যন্ত টিকতে পেরেছে? যে স্বৈরাচার মনে করে ‘আমরা তো হয়ে আছি, আমাদেরকে কেউ কিছু করতে পারবে না’ – তারা বড় ভুল করে।’
সংবিধানে ‘প্রজাতন্ত্রে জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেখানে মৌলিক অধিকারের কথা লেখা আছে, বৈষম্যহীনতার কথা লেখা আছে। গ্রাম-শহরের মধ্যে কোনও বৈষম্য থাকতে পারবে না। নারী-পুরুষদের মধ্যে বৈষম্য থাকতে পারবে না। সকলের স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। এগুলো ছাপিয়ে প্রচার করা উচিত বলে আমি মনে করি। এই কথাগুলো মানুষ পেলে আমি মনে করি আমাদের আর অন্য কোনও রাজনীতি লাগে না।’
ড. কামাল বলেন, ‘পিতা যদি লিখে দিয়ে যান আমরা মালিক, তবে কেউ আমাদের বঞ্চিত করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে মালিক করে দিয়ে গেছেন। কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না। এটা গ্যারান্টি দিয়ে আমি বলতে পারি। সংঘবদ্ধ যদি হন, কোনও শক্তি নাই পৃথিবীতে যেটা আপনাকে বঞ্চিত করতে পারবে।’
কামাল-হোসেন
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকেন। আমি শতভাগ আশাবাদী, এই দেশকে কেউ দাস করে রাখতে পারবে না।’
এরশাদের পতনে তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণীর কথা তুলে ধরে বলেন, ‘নব্বইয়ে স্বৈরাচার এরশাদের পতন আন্দোলনের ৩ মাস আগে ব্রিটিশ মিনিস্টার এরশাদের সঙ্গে মিটিং করে এসে বলেছিলেন- ‘তোমার প্রেসিডেন্ট তো খুব কনফিডেন্ট, সে তো আরও ১৫ বছর থাকবে ক্ষমতায়’। আমার তো তখন বয়স কম ছিল। উনাকে বলেছিলাম- ‘আমি তো ১৫ সপ্তাহও দেখি না’। আমার ভবিষ্যদ্বাণী সেদিন সত্যি হয়েছিল। ১৫ সপ্তাহও এরশাদ টিকতে পারেনি।
ড. কামাল বলেন, ‘ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এরশাদের পতন হলো। জানুয়ারিতে আমি লন্ডনে গেলাম। ওখানে পররাষ্ট্র দফতরে ওই ব্রিটিশ মিনিস্টারের সামনে যেতেই তিনি আমাকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন– ‘তুমি কিভাবে এরকম ভবিষ্যদ্বাণী করলে?’ আমি তাকে বললাম- ‘দেখুন আমাদের একটি মানবিক বৈশিষ্ট্য আছে। অন্যায়ের সামনে আমরা মাথা নত করি না। এটা কিন্তু বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে বলেছেন। তিনি বলেছেন- দেখো তোমরা বাঙালি হলে একটা জিনিস মেনে চলো, অন্যায় যদি চিহ্নিত করা হয়, তোমরা মাথা নত করো না। আমি আমার চারপাশে সেদিন দেখেছিলাম- এরশাদের সময় যেরকম দুর্নীতি হয়েছে, যেসব বৈষম্য হয়েছে- সেটা মানুষের সহ্যের সীমা পার হয়ে গিয়েছিল।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন