খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সাবেক ছাত্রনেতা। আওয়ামী লীগের তিন তিনবারের সাংগঠনিক সম্পাদক। পিতা মরহুম আবদুর রউফ চৌধুরী মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। পারিবারিকভাবেই রাজনীতিতে আসা এ তরুণ বেশ দক্ষতার সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার টিমে কাজ করছেন। রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকাকালীন সংগঠনের দ্বন্দ্ব নিরসন করে ঐক্যের মাধ্যমে রংপুর সিটি নির্বাচনে বিজয়সহ নানা সফলতা দেখিয়েছেন। সম্প্রতি রাজশাহী বিভাগে দায়িত্ব পাওয়ার পরও তার নেতৃত্বের কারিশমায় ঘুচেছে রাজশাহীতে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। ফলে গতবারের ভরাডুবি হওয়া রাজশাহী সিটিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী রাজনীতির সফেদ এ তরুণের সঙ্গে পরিবর্তন ডটকমের কথা হয়েছে নানা ইস্যুতে; নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, গুজব নিয়ন্ত্রণ, বিএনপির আন্দোলন, সুশীলদের আনাগোনা ও ছাত্রলীগসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
সম্প্রতি আলোড়ন ফেলা ছাত্র আন্দোলনকে কীভাবে নিয়েছে আওয়ামী লীগ? এতে সরকারের কী কী ব্যর্থতা ফুটে উঠেছে, আর সফলতাই বা কী কী বলে আপনি মনে করেন?
শিক্ষার্থীরা যে বিষয় নিয়ে আন্দোলন করেছে, সেটি সরকারেরও আমলে ছিল। সড়ক নিরাপদ করতে আমরা আইনও করছিলাম। এ নিয়ে উচ্চ আদালতের একটি অবজারভেশনও ছিল। আইনটি নিয়ে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা চলছিল। বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে গত দেড় বছর ধরে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছিল। এটি চলমান প্রক্রিয়ায় ছিল। সেক্ষেত্রে একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। সরকার এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা আমলে নিয়ে তাদের দাবিনামা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে, বাকিগুলো বাস্তবায়নেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই ইস্যুতে সরকার আর ছাত্রদের আলাদা করার কিছু নেই। সবচেয়ে বড় দুঃখজনক হলো— ছাত্রদের সঙ্গে সরকারের একটা দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছে। আরও বেশি দুঃখজনক ও লজ্জার, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের রাজনৈতিক ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের অনুভূতিগুলো ব্লাকমেইল করলাম।
এদেশে মনে হয় গুজব সর্বাধিক আলোচিত শব্দ। হেফাজত থেকে শুরু করে নানা আন্দোলনে এটি ছড়িয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে সরকার বা আপনার দলের কোনো ভাবনা আছে কী?
এই গুজবের রাজনীতি নতুন কিছু না। সাম্প্রদায়িক শক্তি ’৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও বহু গুজব রটিয়েছে। এরা নৈতিকভাবে পরাজিত ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এই ধরনের গুজবের আশ্রয় নেয়। কখনো ধর্ম, কখনো বর্ণ, কখনো মৃত্যু, কখনো ধর্ষণ, কখনো গুম- এই ধরনের গুজব তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, নাজেহাল করে। মানুষ এবার নতুনভাবে এদের চিনেছে। এদের চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। এরা যে জনগণের জন্য বা দেশের জন্য রাজনীতি করে না, এদের রাজনীতি যে সন্ত্রাসনির্ভর, এরা যে দেশে গণতন্ত্রের নামে গুণ্ডাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, এবার এটি ফুটে উঠেছে। আমরা তো গুজব শব্দটা ডিলেট করতে পারি না। সেটা থাকবেই। আমরা ধারাবাহিকভাবে জনগণকে সচেতন করার জন্য সুস্থ ধারার রাজনীতি করে যাচ্ছি, যার ফলে জনগণ এসব গুজবে সাময়িক বিভ্রান্ত হলেও চূড়ান্তভাবে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন হয়নি।
বিএনপি ঈদের পর নির্বাচনী আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। তারা তাদের দাবি নিয়ে ঈদের পর আন্দোলনে নামবে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
এটা একটা পজিটিভ কথা। গুজব, সন্ত্রাস আর গুণ্ডাতন্ত্র বাদ দিয়ে তারা নির্বাচনী আন্দোলনে যাবে, এটা একটা ভালো খবর। এতকিছুর মধ্যেও তারা একটা ভালো কথা হয়ত বলছে, এটা সুখবর। আমরা এটাই চাই। নির্বাচনী আন্দোলনটাই সুস্থধারার রাজনীতি। এটা যদি তারা করতে পারে, আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই।
সম্প্রতি ২১ আগস্টের রায় হবে জানা গেছে। এই রায়ে আপনাদের চাওয়া কি?
’৭৫ এর ১৫ আগস্টে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই ঘটনার যারা কুশীলব, এর সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, সেই একই ধারার লোকেরা ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ছিল; ’৭১ এবং ’৭৫ এর খুনিদের রক্ষা করা। যেহেতু আমরা বারবার জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলাম ’৭১ এবং ’৭৫ এর খুনিদের বিচার করব। ২১ আগস্টে তো একটা রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে হত্যার মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। এটার বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা আশা করি। এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত এবং ইন্ধনদাতা। আমি আশা করি, বিচারের মাধ্যমে তাদের সকলের চেহারা উন্মোচিত হবে।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর তাজউদ্দিন আহমদের সন্তান সোহেল তাজ ‘স্বৈরাচার চিহ্নিত করার উপায়’ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যার মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের অনেকগুলো বিষয় চলে আসে। এ নিয়ে আলোচনার ঝড় দেখলাম, এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
রাজনীতি একা করার বিষয় না। রাজনীতি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যেখানে একটা প্লাটফর্ম থাকবে। যে প্লাটফর্মে একটা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী থাকবে। যারা পুরো দেশের দায়িত্ব একাই নিয়ে নিতে চায়, তাদের ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নাই। তবে এটা মনে রাখতে হবে; বঙ্গবন্ধু দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এই উন্নয়ন সমৃদ্ধির অভিযাত্রায় আছেন। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো বক্তব্য, রাজনীতিতে আমলে নেয়ার সুযোগ নেই।
সম্প্রতি ছাত্রলীগের কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি হয়েছে। কেমন কমিটি হয়েছে বা সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে এ কমিটি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে আমি যতটুকু জানি, ছাত্রলীগের অতীতে যত কমিটিই হয়েছে, সব কমিটি নিয়ে কিন্তু ছিল। এটাই প্রথম যে, ছাত্রলীগের কমিটি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী নিজেই দিয়েছেন। যে কমিটি সবাই মেনে নিয়েছে, সাধুবাদ জানিয়েছে।
সুশীলদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। এখানে সেখানে বৈঠক শুরু হয়ে গেছে। তারা জোট বেধে সরকারের বিরুদ্ধে নামতে চায়, কীভাবে দেখছেন?
ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না— এদের একটা চক্র আছে। এদের অতীত ইতিহাস কী বলে? এরা কোথাও ঘরসংসার করতে পারেনি। এরা রাজনৈতিক সংসার থেকে পরিত্যক্ত। তারা আবার সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচে বড় রিউমার। তাদের কাছে বাংলাদেশের জনগণের কোনো প্রত্যাশা নেই। কিছু কুশীলব তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে ঠিক, কিন্তু জাতির কোনো প্রত্যাশা নেই।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন