একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে কোনো ইস্যুতে আন্দোলন করে শক্তি ক্ষয় করবে না বিএনপি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই সরকার বিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে বিএনপি। এ জন্য রূপরেখা তৈরি করছে তারা। ওই আন্দোলনে সরকার পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আদায়ই হচ্ছে মূল লক্ষ্য।
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক শীর্ষ নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক শক্তি ক্ষয় করেছে বিএনপি। মাঠ পর্যায়ের নেতাদের নামে অনেক মামলা রয়েছে। ফলে অনেকেই রাজপথে থাকতে পারছেন না। যুবদল ও ছাত্রদলের অনেক নেতাই এখন কারাগারে রয়েছেন। হাজার হাজার নেতা-কর্মী মামলার হুলিয়া মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়ালেও আন্দোলনে কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি। সরকার কঠোর অবস্থান নিয়ে শক্ত হাতে সবগুলো আন্দোলনই মোকাবেলা করেছে। এ পরিস্থিতিতে আপাতত: আর বড়ো কোনো আন্দোলনে যাবেনা বিএনপি। সরকার ছোট-খাট অনেক ইস্যু তৈরি করলেও সেসব ইস্যুতে মাঠে নামবে না বিএনপি। তিনি জানান, একটি চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য শক্তি জমিয়ে রাখা হচ্ছে। যে আন্দোলন হবে সংক্ষিপ্ত এবং কার্যকরী।
ওই নেতার মতে, চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রণীত রূপরেখা অনুযায়ী আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই মাঠে নামবে বিএনপি। সম্প্রতি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের শতাধিক নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে তৃণমূলের নেতাদের মূল দাবি ছিল, ‘নো খালেদা, নো ইলেকশন’। দলীয় চেয়ারপার্সনের মুক্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। নির্বাচন নিয়ে সরকারের পাতা ফাঁদে যেনো বিএনপি পা না দেয়। এছাড়া সিলেট ও কক্সবাজারের নেতারা জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। তারা বলেছেন, জামায়াত নির্ভরযোগ্য মিত্র নয়। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এটি প্রমাণিত হয়েছে। একই সঙ্গে তারা বাম ও ডান ঘরানার সবগুলো দলের সঙ্গে একটি জাতীয় ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন। যাতে স্বল্প সময়ে একটি জোরদার আন্দোলন করা সম্ভব হয়। এছাড়া সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলের কমিটিগুলো দ্রুত ঘোষণা করা। যেসব জেলায় আংশিক কমিটি রয়েছে সেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং যেখানে দীর্ঘদিন ধরে কমিটি নেই সেখানে নতুন করে কমিটি ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
আপাতত নির্বাচনের তফসিল পর্যন্ত দল গোছানো এবং আন্দোলনের জন্য শক্তি সঞ্চয় করাই হবে মূল কাজ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনসহ সব কিছুই চলে যাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। ফলে চাইলেও ততটা মারমুখী হতে পারবে না প্রশাসন। ঢাকাসহ সারাদেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যাতে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ না থাকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের অভিজ্ঞতার বিষয়ে বিএনপির দৃষ্টি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময়ে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর চাপেই আন্দোলন থেকে সরে এসেছিল বিএনপি। তারা বিএনপিকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলো যে, আর কিছুদিন পরেই আরেকটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আপনারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। তাদের প্রতি সম্মান জানিয়েই সে সময়ে আন্দোলন থামিয়ে দেয়া হয়।
এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন হবে জানিয়ে ওই নেতা বলেছেন, আন্দোলনের চূড়ান্ত ফলাফল মাঠ থেকে না নিয়ে উঠবেনা বিএনপি। এজন্য দলকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আন্দোলনের জন্য কয়েক স্তরের নেতা-কর্মীকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। যারা প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত থাকবে। সরকার কতো জনকে হত্যা করবে কিংবা প্রশাসন কতোজনকে গুলি করতে পারবে। হাজার হাজার লোক যখন মাঠে নেমে আসবে প্রশাসনও বাধ্য হতে নিরপেক্ষ আচরণ করতে। ২০০৬ সালের লগি-বৈঠা মিছিল পরবর্তী ওয়ান ইলেভেনের পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে অন্য কেউ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসুক। আমরা আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় থাকতে দিবো না। সাময়িক পরিস্থিতির পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তাতে বিএনপি ভালো করবে এমন আশা ওই বিএনপি নেতার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন