দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। নানা আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ব্যবস্থা’র দাবি ছিল দলটির। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার শুরুতেই তা নাকচ করে দেয়।
ক্ষমতাসীনরা সংবিধানের আওতায় ‘নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা’র ফর্মুলা দেন যাতে সরকারি দল ছাড়াও বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি থাকবেন। এর প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে বিএনপি সহায়ক সরকার ব্যবস্থা মানলেও এর প্রধান (শেখ হাসিনা) নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে। এর মধ্যেই গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা উপলক্ষে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ভেবেছিলেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। জানাবেন সহায়ক সরকারের রূপরেখা। কীভাবে ওই সরকার গঠিত হবে, তা জানাবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সহায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তার বক্তব্যে কিছুই বলেননি।
গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ওই গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘জনগণ কতটুকু পেল সেটাই আমার কাছে সব থেকে বিবেচ্য। এর বাইরে আমার আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।’ তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই স্বাধীনতা পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়েছিল বলেই আজ দেশে এত উন্নয়ন।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মৃত্যুকে ভয় পাই না। যতক্ষণ বেঁচে আছি ততক্ষণ মানুষের জন্য কাজ করে যাব। দেশ ও মানুষের উন্নয়নে বাবা বেহেশত থেকে দেখে যেন শান্তি পায়।’
এর আগে গতকাল বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অনেক মানুষ আসবে, তার জনপ্রিয়তা আজকে প্রমাণিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, প্রধানমন্ত্রী, তার সরকার ও তার দলের এত জনপ্রিয়তা, তিনি (শেখ হাসিনা) আজকে একটা ঘোষণা দেবেন, আগামী নির্বাচন হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তাহলেই হবে এই বিরাট জনসভার সার্থকতা।’ এদিকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কোনো কথা না বলায় বিএনপির প্রত্যাশা যেমন পূরণ হলো না; তেমনি তারা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের বিষয়ে স্পষ্টত কিছু জানতে পারলেন না।
রাজধানীতে অনুষ্ঠানে মওদুদ আহমদ কোটা সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণে দুর্নীতি, কারাবন্দি খালেদা জিয়া, দলের নানা কর্মসূচি ও প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা নিয়ে কথা বলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকেও জনসভা করার অনুমতি দেওয়ার দাবি তোলেন মওদুদ।
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া কারাবন্দি অবস্থায় আমাদেরও জনসভা করতে দেন। আমরা প্রমাণ করব আজকে আপনাদের যে জনসভা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি জনসমাগম হবে আমাদের সমাবেশে।’ আজকে প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন। তাহলে আমরা কেন ধানের শীষে ভোট চাইতে পারব না, আমরা কেন জনসভা করতে পারব না।’ কোটা সংস্কারের বিষয়ে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে এমন কোনো রায় নেই যে, এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা যাবে না। এ ধরনের কোনো রায় তারা দেখাতে পারবেন না। আমি আহ্বান জানাই, আওয়ামী লীগের কোনো নেতা বা যে কোনো আইনজীবীকে-তারা এ রায়টা দেখাক। এই রায়ের অজুহাত দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী সরে এসেছেন। যে ওয়াদা দিয়েছিলেন, যে বক্তব্য তিনি সংসদে রেখেছিলেন, তিনি সেটা থেকে সরে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট’র অষ্টম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সংঘাতের রাজনীতির পথ সুশাসনের জন্য হুমকি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মওদুদ। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা অনিয়মের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গভর্নর মো. ফজলে কবীরের পদত্যাগ দাবি করেন। মওদুদ বলেন, ‘এই সোনা চুরির দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হবে। গভর্নরের উচিত হবে অবিলম্বে পদত্যাগ করা, তার নিজের সম্মান রক্ষা করার জন্য। তিনি (গভর্নর) যদি ওই পদে থাকেন, সেখানে কোনো রকমের সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। যে কারণে তার সরে যাওয়া উচিত।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন