জোটের ঐক্য ‘ভেঙে’ প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। তাই সিলেটে এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সরল অঙ্ক বিএনপির জন্য জটিল হয়ে উঠেছে। ২০ দলীয় জোটের দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের হিসাব কিছুটা হলেও সহজ করে দিয়েছে।
৩৬০ আউয়ালিয়ার পুণ্যভূমি সিলেটে রাজনৈতিক ঐক্যের বিরুদ্ধে জামায়াতের এই প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশ। নির্বাচনী মাঠ সহজ করতে কেন্দ্রীয়ভাবে জোটের একাধিক বৈঠক হলেও ভোটের মাঠ ছাড়তে রাজি হয়নি জামায়াত। বিষয়টি কেন্দ্রীয় বিএনপি কিছুটা চিন্তিত হলেও জামায়াতকে তেমনটা আমলেও আনছে দলের নীতিনির্ধারকরা।
সিলেটে এবারও বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল ইসলাম চৌধুরী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান এবং জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
শহরের জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, বন্দরবাজার, শেখঘাট, কুমারপাড়াসহ নগরির কিছু এলাকায় ঘুরে নির্বাচনি আমেজ ভালোভাবেই টের পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রার্থীর পাশাপাশি জামায়াতের ইসলামীর স্বতন্ত্র প্রার্থীর টেবিলঘড়ি মার্কার পোস্টার ছেয়ে গেছে। ভোটের হিসাব যাই হোক, পোস্টারের সংখ্যায় প্রধান তিন প্রার্থীর কেউ কারো চেয়ে কম নয়।
আধ্যাত্মিক এই নগরির সৌন্দর্য হচ্ছে রাজনৈতিক সৌহার্দ্য। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ঘিরে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতের সম্পর্কের ছেদ ঘটলেও এবার মাঠের আবহ অনেকটাই আলাদা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাকালে বলেন, কয়েকদিন আগেও জামায়াত শিবিরের যেসব নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের দা-কুমড়া সর্ম্পক ছিল। এখন দুই দলের নেতা-কর্মীরা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পোস্টার টানাচ্ছেন, প্রকাশ্যে নির্বাচনি সভা করছে। মামলার ভয়ে যেসব জামায়াত নেতাদের এতোদিন সিলেটে খুঁজে পাওয়া যায়নিা, তারা এখন টেবিলঘড়ির মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে থেকে শহরের দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সিলেটের ভোটারদের একাংশ মনে করেন, জামায়াত মূলত তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্যই সিলেটে প্রার্থী দিয়েছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আর্শীবাদ রয়েছে জামায়াতের সঙ্গে। সিটি নির্বাচনে সিলেটের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ৮ টিতে কাউন্সিলর পদে জামায়াতের প্রার্থী রয়েছে। জামায়াতের প্রার্থী মাঠে থাকায় ভোটের হিসাবে আওয়ামী লীগের লাভ হলেও দীর্ঘমেয়াদে সিলেটের রাজনীতিতে জামায়াতের খুঁটি আরও পাকাপোক্ত হলো।
কারো কারো মতে, বিএনপি-জামায়াতের ভোটের সমন্বয়ে গতবার আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছিল। এবার ভোট ভাগাভাগি হলে লাভ হবে আওয়ামী লীগের। যদিও বিএনপি নেতাদের মতে, ১৫ হাজারের বেশি ভোট নেই জামায়াতের। এ ভোট ফলাফল নির্ধারণ করবে না।
শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একজন বর্ষীয়ান ভোটার আলাপকালে বলেন, জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে এমন অনেকে কাজ করছেন যাদেরকে আমরা চিনি না। কিছু তরুণকে দেখা যায়, কোনো একটা মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে একসাথে এরপর প্রার্থীর পক্ষে জনসংযোগ শুরু করে। একইভাবে পাশ্ববর্তী মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়া শেষে আবার কিছুক্ষণ নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে এশার নামাজের পর এলাকা ছেড়ে চলে যায়। ভোটকে কেন্দ্র করে তাদের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি সবার চোখেই পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, অনেকদিন পর জামায়াত তাদের সাংগঠনিক শক্তি দেখানো সুযোগ পেয়েছে সিলেটে, এই সুযোগটির ষোলআনা কাজে লাগাবে জামায়াত।
সিলেটের বিএনপির নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে জামায়াত মেয়র প্রার্থী দিয়েছে। এ বিষয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ আমাদের সময়কে বলেন, সারাদেশে জামায়াতের নেতাকর্মীরা যেখানে প্রকাশ্যে আসতে পারে না, সেখানে সিলেটে তারা বড়ো বড়ো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে আওয়ামী লীগের অংশীদারিত্বেও সর্ম্পক রয়েছে। বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে জামায়াতের প্রার্থী মেয়র পদে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ মানতে নারাজ জামায়াত নেতারা। জানতে চাইলে জামায়াত প্রার্থী সিলেট মহানগরের আমীর এসহানুল মাহবুব জুবায়ের আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা আগেই বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের অন্য শরীকদের জানিয়েছিলাম, সিলেটে আমাদের প্রার্থী থাকবে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই আমরা এগিয়েছি।’
সরকারের সঙ্গে আঁতাতের প্রশ্নে তিনি বলেন, জামায়াত কোনো অনৈতিক সুবিধায় বিশ্বাস করে না। অন্য কোনো দলের কাছ থেকে সে রকম সুবিধা কখনো নেয়নি এবং নেবেও না।
জামায়াতের প্রার্থী মাঠে থাকায় ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে কী না জানতে চাইলে সিলেট সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, একজন প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে করতে পারেন। এটা স্থানীয় নির্বাচন। দলীয় প্রতীক থাকলেও এই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হয় না। স্থানীয় সমস্যাগুলো কার দ্বারা সমাধান হবে সেটা দেখে স্থানীয়রা ভোট দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আমাদের সময়কে গতকাল বলেন, কোন দলের প্রার্থী মাঠে রয়েছে এটা আমাদের দেখার বিষয় না। নির্বাচন সকলের জন্য উন্মুক্ত। আমরা বিশ্বাস করি সারাদেশের অন্যান্য এলাকার মতো সিলেটের মানুষও সরকারের উন্নয়নের ধানাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা মার্কার প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।
একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দীন আহমেদ কামরান আমাদের সময়কে বলেন, সিলেটে একটি সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রয়েছে বলেই সকল প্রার্থী সমানভাবে তাদের নির্বাচনি প্রচার চালাতে পারছে। যে দলের যতো প্রার্থীই মাঠে থাক না কেনো সিলেটের জনগণ নৌকা মার্কার পক্ষেই তাদের রায় দেবে বলে আশাবাদী তিনি।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন