বছরজুড়ে বিএনপির ছত্রছায়ায় একসঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও ভোট এলেই বিএনপির সঙ্গে দরকষাকষিতে নামেন জামায়াত নেতারা। তবে দাবি আদায় হোক বা না হোক, শেষ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষেই কাজ করে জামায়াত।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচন সামনে রেখে এবার আগের অবস্থানে চলে গেছে জামায়াত। ভোটের দিন পর্যন্ত যদি জামায়াত এ অবস্থান ধরে রাখে, তাহলে ধানের শীষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এবার তফসিল ঘোষণার আগেই রাসিক নির্বাচনে জামায়াত তাদের মহানগর আমীর সিদ্দিক হোসাইনকে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করে। শেষ পর্যন্ত মেয়র পদে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকেই সমর্থন দেয় জামায়াত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরকষাকষির একপর্যায়ে জামায়াত ৫টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদ ছেড়ে দেয়ার দাবি করেছিল বিএনপির কাছে। কিন্তু সেই দাবি আমলে না নেয়ায় জামায়াতের ভেতরে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি জামায়াত ও শিবির নেতাদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ক্ষোভ আর অভিমানের মিশেলে দেয়া সেই স্ট্যাটাসেও ধানের শীষের প্রার্থীকে জামায়াতের সমর্থন দেয়া নিয়েও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রয়েছে। সেখানে বিএনপির প্রতি হুমকিও ছুড়ে দেয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি, জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া শাখার প্রধান আশরাফুল ইসলাম ইমন সম্প্রতি ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে বলেন, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামায়াত-শিবির দিনরাত বিএনপির মেয়র প্রার্থী বুলবুলের জন্য কাজ করে।
ফলে বুলবুল বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত বুলবুলের পক্ষে জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকর্মী ভোটের মাঠে নামেননি। ভবিষ্যতে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। ইমনের বিরুদ্ধে নাশকতার তিন ডজন মামলা রয়েছে।
এদিকে রোববার ইমন আরেকটি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘২০১৩ সালে বুলবুলের জন্য নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় ছিল জামায়াত। অথচ এবার ২০১৮ সালে তারা এখন পর্যন্ত নাই কেন? এই ব্যর্থতা কার? রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি হওয়ার পরও জামায়াতের সঙ্গবিহীন বিএনপি তাদের মেয়র প্রার্থী বুলবুলকে জিতিয়ে আনা তো দূরের কথা, বিএনপি তাদের প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আনতে পারবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
বিএনপির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ইমন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের জয়ী হওয়ার আশা রেখে তাকে অগ্রিম শুভেচ্ছাও দিয়েছেন।
রাজশাহী জামায়াতের একাধিক সূত্র বলছে, ২০১৩ সালের ভোটে জামায়াত শুধু একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর এবং দু’জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছিল। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে সমঝোতায় সেটা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এবার জামায়াত রাজশাহীতে ১৪টি ওয়ার্ডে দলের একক প্রার্থী দিয়েছে। জামায়াত দুটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডেও নারী কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে।
এসব ওয়ার্ডেও বিএনপির একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির মহানগর ও জেলা নেতারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দেয়ায় বেশি চটেছে জামায়াত ও শিবির। ফলে তারা বুলবুলের ধানের শীষের পক্ষে কোথাও কোনো গণসংযোগে নামেননি।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, জামায়াত সবসময় বিএনপির ছত্রছায়ায় রাজনীতি করেছে। কিন্তু এখন তারা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে। তারা ভাবছে, আগামী দিনে আবারও শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকবে।
মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত জামায়াতের নেতারা বিএনপি নেতার জন্য মাঠে নামাকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন না। তারা দেখছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বুলবুলকে মেয়র বানিয়ে কোনো লাভ নেই। এতে জেল-জুলুম আরও বাড়বে।
তারা ভাবছে, বিএনপিকে সমর্থন না দিলে অনায়াসেই রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী লিটন জিতে যাবেন। কিছুটা হলেও তারা লিটনের কাছে ছাড় পাবে। রাজশাহীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর জন্য মাঠে না নামার কারণও এই একটা।
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর আবু ইউসুফ সেলিম বলেন, ‘কাউন্সিলর পদে বিএনপি-আওয়ামী লীগ কেউই একক প্রার্থী দিতে পারেনি। তারা বলেন, যে জিতে আসবে, সে-ই তাদের প্রার্থী। দলীয়ভাবে কাউন্সিলর প্রার্থী দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভবও নয়। তাই আমরাও ১৬টি ওয়ার্ডে বিএনপির পাশাপাশি একক প্রার্থী দিয়েছি। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডেও দু’জন প্রার্থী দিয়েছি। আমরা কাউন্সিলর নিয়েই ভাবছি।
বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে জামায়াত সমর্থন দেবে কি না, তা এ মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তিনি জানান, ১৯৯৪ সালের সিটি নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ১৯ হাজার ভোট পেয়েছিল। রাজশাহীতে জামায়াতের ৪০ হাজার ভোট রয়েছে। বিএনপি প্রার্থী এবারও জামায়াতের ভোট ছাড়া জিততে পারবে বলে মনে করেন না।
অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে জামায়াত নেতা ইমনের লেখা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বুলবুল ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী। জামায়াত বিএনপির শরিক দল। তাদের উচিত ধানের শীষের পক্ষে দ্রুত মাঠে নামা। তবে তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে প্রয়োজনে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ক্ষোভের প্রশমন ঘটানো হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন