স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। বড় আশা করে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় গেলেন তাদের এলাকার নিজ দলীয় এমপির বাসায়। আবদার একটাই- ছেলেটার চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। চেয়ারম্যানের কথা নিশ্চুপ হয়ে শুনে কাজের অজুহাতে দ্রুতই বের হতে উদ্যত হলেন এমপি। যাওয়ার সময় কাছে ডেকে নিয়ে শুধু একটি কথাই বললেন, ‘বিষয়টি আমি দেখব’। ব্যস, এই পর্যন্তই। ছেলে যথারীতি চাকরির ইন্টারভিউ দিল। কিন্তু চাকরিটি তার আর হয়নি।
আশাভঙ্গ পিতা এরপর বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় তার এলাকার এমপিকে পেয়ে ছেলের চাকরি না পাওয়ার বিষয়টি অবগত করালে তিনি বললেন, ছেলের চাকরি প্রাপ্তির জন্য চেষ্টার কমতি ছিল না তার। কিন্তু সবকিছু এখন কড়াকড়ি হয়ে গেছে। মেধাতালিকায় থেকেও অনেক ছেলের এখন চাকরি হয় না। দেশ আর আগের মতো নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এখন যোগ্যদেরই চাকরি হচ্ছে।
বিষয়টি মেনেই নিয়েছিলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা। কিন্তু পরে যা শুনলেন তা কোনোভাবেই মানতে পারছিলেন না তিনি। চাকরি হয়েছে একই এলাকার বিএনপি-জামায়াত ঘেঁষা পরিবার বলে চিহ্নিত একজনের ছেলের। একটু খোঁজ নিয়েই জানতে পারলেন বিস্তারিত। বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে ওই ছেলেকে সরকারি চাকরি নিশ্চিত করেছেন সরকারি দলের এই এমপি। পরিবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে সার্টিফাই করেছেন আবার গোয়েন্দা সংস্থা যখন ভ্যারিফাই করতে গেছে সেখানেও টাকা ঢেলে সব ঠিক করেছেন এমপি নিজেই। বিএনপি-জামায়াত পরিবারের জন্য আওয়ামী লীগের এমপির ভালোবাসার উৎস হলো টাকা। পরে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে বিষয়টি অবগত করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা। এমন অভিযোগ একটি-দুটি নয়, অসংখ্য। বেশিরভাগ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতার অভিযোগ, আওয়ামী লীগ কর্মীদের কাছ থেকে টাকা খেতে পারে না বলে এমপিরা তাদের জন্য কিছু করতে নারাজ। এমপিদের পছন্দ বিএনপি-জামায়াত। কারণ তাদের কাছ থেকে সহজেই টাকা আদায় করে নেয়া যায়। টাকা নিয়ে তাদের ডিও দেন। চাকরির তদবিরও করেন বিএনপি-জামায়াতের জন্য। আবার সেই তদবির সফল করতে গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট পক্ষে আনতে আলাদা করে টাকা নেন এমপিরা।
শুধু চাকরির তদবিরই নয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগের অনেক এমপির পছন্দ বিএনপি-জামায়াত কর্মী। কারণ আওয়ামী লীগের লোকজনের কাছ থেকে তারা কমিশনবাণিজ্য করতে পারেন না। অনেক এমপি আবার নিজে কাজ নিয়ে পতিপক্ষ দলের কর্মীদের কাছে অর্থের বিনিময়ে তুলে দেন। এখানেই শেষ নয়, বিএনপি-জামায়াত থেকে আরো আয়ের উৎস আছে এমপিদের। প্রতিপক্ষ দলের সমর্থক কেউ গ্রেফতার হলে তাদের জন্য থানায় তদবির, অর্থের বিনিময়ে কোর্টে জামিনের ব্যবস্থাও করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতা প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায়ও এসব অভিযোগ তুলেছেন। সভা শেষে গণভবনে রাখা নির্দিষ্ট বক্সে লিখিতভাবে এমপিদের বিষয়ে তাদের অভিযোগের কথা জমা দিয়ে যান তৃণমূলের নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা থেকে উল্লেখিত অভিযোগগুলো এসেছে। সাম্প্রতিক যত নিয়োগ হয়েছে তাতে অনেক বিএনপি-জামায়াতপন্থি চাকরি পেয়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেক তৃণমূল নেতা। তারা বলেন, এমপিদের কাছে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা টাকা নিয়ে যায়। তাদের কথা গোপন রাখা হয়। আক্ষেপ করে অনেকে বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু টাকার বিনিময়ে এমপিদের বিএনপি-জামায়াতপ্রীতির কারণে তৃণমূল নেতারা বঞ্চিতই রয়ে গেছেন অথচ ক্ষমতায় না থেকেও বহাল তবিয়তে আছেন বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা। সরকারদলীয় বেশ কয়েক এমপির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাহিদামতো জোগান দিতে না পারায় এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তারা বলেন, একটি এলাকায় হাজার হাজার নেতাকর্মী থাকেন। সবার অনুরোধ তো আর রক্ষা করা যাবে না। যাদের অনুরোধ রক্ষা করা সম্ভব হয় তারা চুপ থাকেন। কিন্তু যাদেরটা সম্ভব হয় না তারাই রাস্তায় নেমে এমপিদের সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন