গার্মেন্টে চাকরি করে আয়ের কিছুটা জমিয়েছিলেন এলাকার একটি সমিতিতে। পরিবার নিয়ে কষ্ট হলেও একত্রে মূলধনের সাথে লাভ পাভেন সেই আশায়। ভেবেছিলেন, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করলে স্বচ্ছল হবে পরিবার। কিন্তু সমিতির প্রতিষ্ঠাতা অসহায় গার্মেন্ট শ্রমিক নাছরিন বেগম আশায় ফেলেছেনে গুড়েবালি। সাতাশ মাসের জমানো টাকার লভ্যাংশ দূরের কথা মূলধন পাওয়া নিয়ে জেগেছে শঙ্কা।
শুধু নাছরিনের নয়, এরকম আরো আঁশিজন গ্রাহকের জমানো টাকার কোন হদিস নেই। যাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের গার্মেন্ট শ্রমিক। টাকা ফেরত পেতে গ্রাহকদের পক্ষে দশজন মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মালিক জহুরুল হক মহসিন কারাবাস করলেও পলাতক আরো দুইজন। তবে কষ্টে জমানো অর্থ ফিরে পাওয়া নিয়ে দোলাচলে ক্ষতিগ্রস্তরা।
আশুলিয়ার পশ্চিম বাইপাইল এলাকায় নবজীবন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি সমিতির ৮০ জন গ্রাহক এখন চেয়ে আছেন আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। ২০১৯ সালে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে দুটি মামলা করেছেন দশজন গ্রাহক। মামলায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জহরুল হাজতে আছেন। তার স্ত্রী সহ-সভাপতি সুলেখা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক রতন আলী এখনো পলাতক।
প্রতারক জহুরুল হক (৫০) টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার বেকড়া গ্রামের মৃত গোলাপ খানের ছেলে ও পলাতক রতন আলী (৪০) মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার দুবুলিয়া গ্রামের মৃত তপছের আলীর ছেলে।
সমিতির গ্রাহক ইপিজেড এলাকার শাহিন ফ্যাশনের শ্রমিক নাছরিন বেগম জানান, সাতাশ মাস ধরে স্থানীয় সমিতিতে মাসিক স য় করেন। তিনটি ডিপিএস এ প্রতিমাসে বেতন থেকে দুই-এক হাজার টাকা এই সমিতিতে রাখতেন। এভাবে ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা তার স য় জমা হয়। তার মতো আরো আঁশিজন গ্রাহকরাও টাকা জমিয়েছিলেন। কিন্তু সমিতির মালিক জহুরুল গত বছরের নভেম্বর মাসে তাদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।
মিজানুর রহমান নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, তিন বছর মেয়াদে লাভের আশায় স্ত্রীর নামে ডিপিএস করেন। মাসিক এক হাজার টাকা হারে ত্রিশ মাসে ৩০ হাজার টাকা স য় রাখেন। কিন্তু তিন মাস পূরণ হওয়ার আগেই পালিয়ে যায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জহুরুল। তিন বছর পর লাভ ২২ হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে নিজের কষ্টের সি ত মূল টাকা ফেরত পাবেন কি না এই অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তিনি।
ইউনুস আলী বলেন, তার এফডিআর এর ৫ লাখ টাকার কোন হদিস নেই। আদালতে সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, তার স্ত্রী সুলেখা ও সাধারণ সম্পাদক রতন আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারা। মামলায় বর্তমানে প্রতারক জহুরুল জেলে থাকলেও বাকীরা পলাতক।
তিনি আরো জানান, সমিতির নামে জমি কেনার কথা থাকলেও প্রতারক জহুরুল বাইপাইল এলাকায় গোপনে নিজের নামে ৫ শতাংশ জমি কেনেন। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা। সেই জমিও গত সাত মাস আগে স্থানীয় হাসানুর রহমান রঞ্জু নামে এক ব্যক্তির কাছে গোপনে বিক্রির করেন প্রতারক জহুরুল। বায়নার সাড়ে ৭ লাখ টাকাও ইতোমধ্যে বুঝে নিয়েছে এই প্রতারক। এমন অবস্থায় তার পাওনা টাকা কবে নাগাদ উদ্ধার হবে এ নিয়ে চরম চিন্তিত তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক হারুন অর রশিদ জানান, প্রতারক জহুরুল সমিতির নামে প্রায় এক’শ লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতরণা করেছেন। তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের দায়ের করা একটি মামলায় আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলায় সিআইডি প্রতারক জহুরুলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বর্তমানে জহরুল হাজতে থাকলেও বাকীরা পলাতক।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা খোকন চন্দ্র জানান, এ ঘটনায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই।
মানবকণ্ঠ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন