দিনের আলো নিভে গেছে। সবাই ফিরছে আপন গৃহে। রাতের শহরে জেগে আছে চাঁদ। আর চাঁদের সঙ্গে রাতজাগা মানুষের সংখ্যাও কম নয়; এ শহরে। রাতে অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক অনেক কাজ চলে বিরতিহীন। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই শ্রমজীবী মানুষ দিনে-রাতে সমানতালে কাজ করছে।
রাতের বিশ্রামকে পায়ে মাড়িয়ে সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে অগ্রসেনানীর ভূমিকা রাখছেন রাতজাগা শ্রমিকরা। তাদের শ্রম-ঘাম আর হাতের স্পর্শে এগিয়ে যাচ্ছে একবিংশ শতাব্দির সভ্যতা। দিনের মতই রাতেও মানুষজন নানামুখী কর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এক তৃতীয়াংশ লোক রাতে কর্ম করে দিনে ঘরে ফেরে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে রাতের আরাম-আয়েশ, বিশ্রাম ত্যাগ করেছেন তারা।
রাতজাগা মানুষজন নানামুখী পেশায় ব্যস্ত। চিকিৎসক- নার্স থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য,পরিচ্ছন্নকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, রেস্তোরাঁ শ্রমিক, ছাপাখানার শ্রমিক, গাড়ী চালক, টি-স্টল, মুদি দোকানী, দিনমজুরও রাতে কাজ করে। মাঝিমাল্লারাও জেগে থাকেন খেয়া পারের যাত্রীর অপেক্ষায়। এমনকি গণমাধ্যমেরকর্মীরাও রাত জেগে তথ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকাকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কাজে ঝাড়ু হাতে বেড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী কিরণ দাস। তখন রাতের ২ টা বাজে। ঝাড়ু হাতে নগরের ধুলোবালি আর্জনা পরিস্কার করছেন তিনি। ভোরের আলো ফুটে উঠার আগ পর্যন্ত কাজ করবেন। রাত জেগে কাজ করা প্রসঙ্গ জানতে চাইলে কিরন দাস ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ঢাকাবাসী ঘুম থেকে জেগে যেনো পরিচ্ছন্ন নগরী দেখতে পায়; সেজন্য আমরা এখন রাতেও কাজ করি। বর্তমান মেয়র ব্যরিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের আমালে আমরা পরিচ্ছন্নকর্মীরা রাতেও কাজ করছি। ২ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত কাজ করবো।
রাত তখন আড়াইটা; বাবুবাজার ব্রিজের নিচে গিয়ে দেখা গেলো ছোট্ট একটি খাবারের দোকানে ভিড় লেগে আছে। ভাই-ভাই বিরানী হাউস। বাবুবাজার ও জিন্দাবাহারের ছাপাখানার শ্রমিকরা খাবারের জন্য ছুটে আসছেন। একের পর এক ডিম-পরোটার অর্ডার পরছে। কথা বলে জানা গেলো, আগন্তুকদের কেউ কেউ রাতে লেবারী করে, কেউ আবার ছাপাখানায় কাজ করে। ভাই-ভাই বিরানী হাউসের কর্মচারী রাকিব। সে দিনে বিশ্রম করে, রাতভর পরিশ্রম করে। রাকিব ব্রেকিংনিউজকে বলেন, যারা রাত জেগে কাজ করে তারা এখানে খেতে আসেন। আমাদের দোকান প্রতিরাতেই খোলা থাকে। আমি রাত ১২ থেকে সকাল ১১ টা পর্যন্ত কাজ করি। আবার দিনে অন্যরা কাজ করে।
নির্মাণ শ্রমিকদেরও দেখা গেছে রাত জেগে কাজ করতে। ইমারত নির্মাণে অনেক কাজ রাতে গুছিয়ে রাখেন তারা। রাতেও টানা ১২ ঘন্টা কাজ করছেন ভাগ্য নির্মাণের জন্য। পাবনার বেড়া উপজেলা থেকে ভাগ্য লাল মিয়া ও তার বন্ধু আব্দুল হালিম। নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কয়েকদিন দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তারা রাতে কাজ করেন। তারা এখন রাতে মজদুরি করেন। লাল মিয়া ও তার বন্ধু আব্দুল হালিম কাজ করছেন পাটুয়াটুলীর একটি নির্মাণাধীন ভবনের জন্য। তারা ছাঁদ ঢালাইয়ের পাথর উপরে তুলছে। লাল মিয়া বলেন, ভাগ্য নির্মাণ করতেই ঢাকায় আসছিলাম। বউ-বাচ্চাদের সুখের জন্যই রাতের পরিশ্রম করি। আমরা ৩৬ জন রাত জেগে কাজ করি।
রাজধানীর ফরাশগঞ্জে ভ্যানে বসে লুডু খেলতে দেখা গেছে ভ্যান চালকরা। তারাও রাত জেগে ক্ষ্যাপ মারেন। তারা। এক জাগার পন্য অন্য জাগায় পৌঁছাতে দেয় তারা।
সদরঘাটের পন্টুনে রাত জেগে আছে পথশিশুরা। রাত জেগে তারা লুডু খেলছে। রাত জাগার কারণ জানতে চাইলে পথশিশু সাদ্দাম বলে, রাতে ৪টায় লঞ্চ আসবে। লঞ্চ আসলে সেখানে গিয়ে বোতল টোকাবো। আমাদের আগে কেউ যাতে না যায় সেজন্য আমরা বসে বসে লুডু খেলছি।
নৌকা পারাপারের যাত্রীদের জন্য রাত জেগে থাকতে দেখে গেছে মাঝিমাল্লাদেরও। রাজধানীর ফরাশগঞ্জ খেয়া ঘাটে যাত্রীদের পারাপারের জন্য নৌকায় রাত কাটে মাঝিদের। যাত্রীদের জন্য রাতের আরাম-আয়েশ আর বিশ্রাম ত্যাগ করে ঘাটেই থাকছেন তারা। আবার জেলেরা রাত জেগে মাছও ধরছে, সকালে বাজারে তুলবে।
এ ইট-পাথরের নগরীতে বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায় রাতজাগা মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন