স্বল্প পরিসরে খুলেছে দোকানপাট, বদলে যেতে শুরু করেছে রাজধানীর লকডাউনের চিত্র। হাজার হাজার মানুষ এখন রাস্তায়। রাজধানীর বাইরে থেকেও প্রবেশ করছে সাধারণ মানুষ। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশ প্রহরা থাকলেও মানুষ নানা অজুহাত দেখিয়ে ঘরের বাইরে আসছেন। গণপরিবহন ছাড়া রাজধানীর রাস্তায় চলছে প্রায় সব যানবাহন। তবে দেখা গেছে বাস চলার দৃশ্যও।
ঢাকার রাস্তায় বৃহস্পতিবার (১৪ মে) মানুষের ভিড় বেড়েছে। গত ২৬ মার্চ ছুটি শুরুর পর থেকে এত মানুষকে রাস্তায় দেখা যায়নি। রাস্তায় গণপরিবহন না থাকলেও ব্যক্তিগত গাড়ি দেখা গেছে অনেক। লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়েছে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজির সংখ্যাও। আর মতিঝিলে চলতে দেখা গেছে দু-একটি বাসও। তবে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি টহলরত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার রাস্তায় মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ফিরে আসা এবং স্বল্পপরিসরে মার্কেট খুলে দেওয়া। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া যাদের দেখা গেছে তাদের প্রায় সকলেই নিম্নবিত্ত। ফলে পুলিশের তরফ থেকে মানুষকে ঘরের বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাধারণ মানুষ খুব একটা সাড়া দিচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে মানুষ তত বেশি ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসছেন।
রাজধানীর বিজয় সরণী, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল, পুরানো ঢাকার নবাবপুর দেখে এখন বোঝার উপায় নেই দেশে লকডাউন চলছে। অলিতে গলিতে মানুষের জটলা আর ভিড়। সামাজিক দূরত্বের লেশমাত্র নেই। একজন আরেকজনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে কেনাকাটা বা নিজ কাজে ব্যস্ত। অথচ রাজধানীর প্রায় দেড় শতাধিক স্থানে এখন সংক্রমণ হয়েছে করোনা ভাইরাসের।
এ বিষয়গুলো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজধানীবাসীও। তারা বলছেন, মহামারী একবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ঠিক উল্টোদিকে নিজেদের পেটের দায়েই ঘর ছেড়ে বাইরে বেরুতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কিছু মানুষ।
এ বিষয়ে পুরানো ঢাকার নবাবপুর রোডের বাসিন্দা ও কাপড়ের ব্যবসায়ী আনসার আহমেদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে কাপড়ের ব্যবসা করে আসছি। ঈদকে ঘিরে আমাদের কাপড় বিক্রির ধুম পড়ে যায়। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। একদমই বেচাকেনা নেই। পরিবার তো চালাতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই বাইরে বের হলাম।
একটি শিল্প কারখানার মালিক আবুল কাশেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা চালু করতে না পারলেও মজুদকৃত মালামাল বিক্রি করার কথা ভেবেছিলাম। এজন্য একটা প্রস্তুতিও ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনভাবেই সাহস পাচ্ছি না। এছাড়াও সারাদেশ থেকে দোকানিদের মধ্যে খুব একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে নিজেদের চলাফেরা আর অফিসের কর্মীদের বেতন-বোনাস দিতে গিয়ে ভাবতে হচ্ছে দ্বিতীয়বার।রাজধানীতে দেখা গেছে বাস চলার দৃশ্যও।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সালেহিন আক্রাম বলেন, গত দুই মাস ধরে পরিবারের কারো সঙ্গে দেখা করতে পারি না। নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। আমরা যদি নিজেরা সচেতন না হই তবে সামনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। এই অবস্থায় চাইলেও কোন জায়গায় পাঠিয়ে দিতে পারছি না। আবার আমাকেও কাজে আসতে হচ্ছে। চাইলেও তো আর এই কাজ ছেড়ে যেতে পারি না। তবে সাধারণ মানুষ যেভাবে রাস্তায় নেমে পড়ছে তাতে মনে হচ্ছে সামনে আরো পরিস্থিতি খারাপ হবে।
এদিকে দেশে গত একদিনে অর্থাৎ শেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৪১ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৮৬৩ জন। আর মোট মৃত্যু হয়েছে ২৮৩ জনের। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. নাসিমা সুলতানা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন