ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকা থেকে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি অপসারণ করা হয় এনালগ বিলবোর্ড। এর পর বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় ডিজিটাল এলইডি বোর্ড বসানো। এ ক্ষেত্রে পুকুরচুরি করার অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, বিলবোর্ড স্থাপনের বিপরীতে কোটি কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়ে তা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন নগর ভবনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ রাজস্ব বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা।
সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ২০ হাজার টাকা হলেও সূত্র বলছে প্রতি বর্গফুট মাত্র ১১শ টাকা করে ইজারা দেওয়া হয়েছে। আর এ সংক্রান্ত কাজের দায়িত্ব পেয়েছে নগর ভবনের শীর্ষ পদে আসীন যিনি, তার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন ৪টি কোম্পানি।
ডিএসসিসির হিসাবে, তাদের আওতাভুক্ত এলাকায় এলইডি বিলবোর্ডের পরিমাণ ৭৫০টিরও বেশি। এটি খাতা-কলমের হিসাব। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাস্তবে বিলবোর্ড রয়েছে এর দ্বিগুণ অর্থাৎ ১৫শ এরও বেশি।
চার ধরনের ডিজিটাল বিলবোর্ড রয়েছে রাজধানীতে। এগুলো হলো ৮, ১০, ২৪ ও ৯৬ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুট ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১১শ টাকা করে ভাড়া দেওয়ায় ইতোমধ্যেই শতকোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে ডিএসসিসি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভাড়ার এ হার বৈধকরণে ‘এলইডি’র পরিবর্তে ‘প্রজেক্ট কার্টেইল’ নাম দেওয়া হয়েছে। সরকারের বিধিতে বা গেজেটে এমন নামের অস্তিত্বই নেই। ডিএসসিসির বিভিন্ন স্থানে বসানো এলইডি বিলবোর্ডের নাম পরিবর্তন করে বলা হচ্ছে প্রজেক্ট কার্টাইলের আওতায় এগুলো পরিচিতিমূলক ওভারহেড সাইনবোর্ড (অনালোকিত, ডিজিটাল স্ক্রিন প্রজেকশন, ডিজিটাল স্ক্রিন, এলইডি বিলবোর্ড, এলইডি ডিসপ্লেø বোর্ড, এলইডি স্ক্রিন, ডিজিটাল এলইডি বিলবোর্ড,
ডিজিটাল এলইডি ডিসপ্লেø, ডিজিটাল মাল্টিভিশন)।
সিটি করপোরেশনের বিলবোর্ড ইজারার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে একটি গেজেট জারি আছে। এতে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এর ধারা ৮৪-এর বলে সরকার আদর্শ কর তফসিল প্রণয়ন করে। বিজ্ঞাপনের ওপর করারোপের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সেই তফসিলের ২৯৭ নম্বর অনুচ্ছেদের (১) এ উল্লেখ করা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জমি বা ইমারতের এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জমি বা ইমারতের বছরভিত্তিক অনুমোদন বা নবায়নযোগ্য বিজ্ঞাপন ফলকের ক্ষেত্রে (ঘ) এলইডি সাইন ২০ হাজার টাকা বর্গফুট।
অভিযোগ রয়েছে, অ্যানেক্স কমিউনিকেশন, মেসার্স জনতা এন্টারপ্রাইজ, টিসিএল অপটো ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড ও শাহবাগ টেলিভিশনÑ মূলত এই ৪টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ কারবার পরিচালিত হচ্ছে নগর ভবনের শীর্ষ পর্যায় থেকে।
কথিত বিলবোর্ড মালিকদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ডিএসসিসিতে করা আবেদনে করের পরিমাণ কমানোর অনুরোধ করা হলে কর্তৃপক্ষ এলইডি বাদ দিয়ে ‘প্রজেক্ট কার্টেইল’ নাম দিয়ে ২০ হাজার টাকার স্থলে এক হাজার একশ টাকা করে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে দেয়। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষ প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ১০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে ডিএসসিসি অনুমোদনের জন্য। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রাপ্তির পর এ পুনর্মূল্যায়ন করার কথা থাকলেও সেই চিঠি পাঠানোর পর পেরিয়ে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু এর প্রক্রিয়ায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে সিদ্ধান্ত না এলেও বিলবোর্ডের কারবার চলছে দেদার।
ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারও তা স্বীকার করেছেন। তিনি আমাদের সময়কে জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো তা যথাসময়েই পরিশোধ করছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন