ঢাকার প্রায় দুই কোটি মানুষের বাস। এত মানুষের জন্যে ঢাকায় সরকারিভাবে কবরস্থান আছে মাত্র আটটি। এর মধ্যে সব থেকে বেশি মরদেহ দাফন করা হয় আজিমপুর কবরস্থানে। এ কবরস্থানটিতে মরদেহ দাফনের ধারণক্ষমতা পূরণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন নতুন কবরের জন্য সাড়ে তিন হাত জমির বড়ই আকাল এই শহরে।
গতকাল শনিবার আজিমপুর কবরস্থানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আজিমপুর কবরস্থানটি রাজধানীর লালবাগ এলাকায় অবস্থিত। ইতিহাসবিদদের ধারণা, ঢাকা শহরের গোড়াপত্তনের সময়ই এ কবরস্থানটি নির্মাণ করা হয়েছিলো। বর্তমানে এর নতুন ও পুরোনো অংশ মিলিয়ে আয়তন প্রায় ৩৭ একর।
নতুন কবরের জন্য স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রতি দুই বছর পর পর পুরোনো কবরই আবার নতুন করে খুঁড়ে সেখানেই নতুন মৃতদেহকে দাফন করা হচ্ছে। ফলে, হারিয়ে যাচ্ছে অনেকের প্রিয় বাবা-মা, ভাই- বোনসহ মৃত আত্মীয়-স্বজনের শেষ স্মৃতিটুকু। হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয় মানুষটির মতো তার কবরটিও।
কোনটা কার কবর বোঝা মুশকিল। কবরের কাছে দাঁড়িয়ে জিয়ারত করছিলেন মামুন মাহমুদ (৩৮বছর) নামে এক ব্যক্তি। জিয়ারত শেষে কার কবর জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা-মা, ভাই- বোনের । কবরগুলো কোথায় জানতে চাইলে নির্দিষ্ট করে দেখাতে পারলেন না তিনি। বলেন, এখানে পুরোনো কবরে আবার নতুন করে অন্য কাউকে দাফন করা হয়। কার কবর কোনটা, বলা মুশকিল।
জানা যায়, সমাজের বিত্তবানদের জন্যে আজিমপুর কবরস্থানে ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫ বছরের জন্য যথাক্রমে ১ লাখ ৫০ হাজার, ৩ লাখ, ৬ লাখ, ৯ লাখ ও ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে জায়গা বরাদ্দ নেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, এসব কবরেও দেখা যায়, একই জায়গায় দুই থেকে পাঁচটি মরদেহ দাফন করা হয়ে গেছে।
কবরস্থানের মূল গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে একটু দূরেই কিছুটা লালচে রংয়ের একটি পাকা কবরের দেখা মেলে। এ কবরটিতে মোট পাঁচজনকে দাফন করা হয়েছে। প্রথমে কেরানীগঞ্জের আতিয়ার রহমান খোকন এক ব্যক্তিকে ১৯৪৮ সালে কবর দেয়া হয়। এরপর ১৯৯৭ সালে মোহাম্মদ হোসেন নামে ঢাকার মোহম্মদপুরের খীলজি রোডের আরও একজনকে কবর দেয়া হয়। ২০০৪ সালে একই কবরে সর্বশেষ ২০১৮ সালে মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডের রফিকুন্নবী জাহান ওমরাহ্ নামে একজনকে দাফন করা হয় এ কবরটিতে। আজিমপুর কবরস্থানে এ ধরনের অসংখ্য কবরের দেখা পাওয়া যায়। আজিমপুর কবরস্থানটি ৩৭ একর জায়গাজুড়ে এই কবরস্থানটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন।
ডিএসসিসি উপ-সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, এ কবরস্থানে মোট কতজনকে কবর দেয়া হয়েছে, তার সঠিক তথ্য কারও কাছে নেই। তবে, দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫টি মরদেহ এ কবরস্থানে দাফন করা হয়। ভবিষ্যতে কারো কবর যাতে হারিয়ে না যায়, সেলক্ষ্যে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রতিটা কবরের একটি নির্দিষ্ট নম্বর দেয়া হবে। যাতে প্রিয়জনের কবর জিয়ারতে এসে সনাক্ত করতে পারেন।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন