ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (ডিসিসি) প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিভক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন। সূত্র: আমার সংবাদ।
বাবার সাফল্যের প্রেরণায় পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে মেয়রের দায়িত্বে এলে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা উন্নয়নের আশায় বুক বাঁধেন। কিন্তু গত চার বছরেও জনদুর্ভোগ থেকে ডিএসসিসির বাসিন্দাদের মুক্ত করতে পারেননি তিনি। পুরান ঢাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা যায়।
অথচ মেয়র হওয়ার আগমুহূর্তে নির্বাচনি ইশতেহারে জলাবদ্ধতা, যানজট নিরসন, খেলার মাঠ, ফুটপাত, হকার ও বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন নগরবাসীকে। ইশতেহারে দেয়া সমস্যাগুলোর সমাধান করতে না পারলেও বছরে বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে তার।
তবে এ বিদেশ ভ্রমণ নগরবাসীর কোনো সমস্যা সামাধানে অভিজ্ঞতা অর্জন, প্রশিক্ষণ কিংবা কোনো সেমিনারে নয়, ব্যক্তিগত কাজেই ২০১৮ সালে ৫১ দিন বিদেশে থেকেছেন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাসে ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত কাজে ১৫ দিন বিদেশে থেকেছেন।
সাঈদ খোনের বিদেশ সফরের ২০১৮ ও ১৯ সালে কিছু হিসাব নিম্নে দেয়া হলো : ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর ব্যক্তিগত সফরে অস্ট্রেলিয়ায় যান এবং ১৯ দিন কাটিয়ে ১৬ জানুয়ারি ঢাকায় ফেরেন। দেশে ফেরার পর একমাস যেতে না যেতেই ফের ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত সফরে ২৬ তারিখ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।
এরপর ওমরাহ পালনের জন্য ২৯ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত সৌদি আরব, আর স্ট্রং সিটি নেটওয়ার্ক গ্লোবাল সামিট ও ব্যক্তিগত সফরে ৭ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। এরপর গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের জন্য ১২ থেকে ১৪ সেপ্টম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে।
অর্থাৎ, এক বছরে দেশের বাইরে থেকেছেন ৫১ দিন। এর মধ্যে নগরীর জন্য মাত্র চারদিন সময় ব্যয় করেছেন, আর ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ৪৭ দিন বিদেশে ছিলেন। সফরসূচি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ২ থেকে ৬ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এবং ২১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে থেকেছেন।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ১২টি সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন নিঃসন্দেহে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এখানকার মেয়র একটু বেশি বিদেশ সফর করবেন এটি স্বাভাবিক। তবে তা হবে নগরীর স্বার্থ বিবেচনায় রেখে।
কিন্তু তা করেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বিদেশ সফরে দেশের সব মেয়রের রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। তার পূর্বসূীরদের অনেকে ২৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত বিদেশ সফর করলেও কারোরই ৫১ দিনের বেশি বিদেশে কাটানোর রেকর্ড নেই। এক বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশ সফর করে সবার রেকর্ড ভেঙেছেন ডিএসসিসির মেয়র।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, একজন মেয়র বিদেশ সফরের সময় নির্দিষ্ট হারে হাতখরচ, দৈনিক ভাতা, ট্রানজিট ভাতা, টার্মিনাল ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা হিসেবে আনুষঙ্গিক ভাতা, বিমানবন্দর কর ও বিমান ভাড়া বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০১৮ সালের বিদেশ সফরের খরচ-সংক্রান্ত কিছু কাগজ ঘেঁটে দেখা যায় চারটি সফরের মধ্যে তিনটিই তার ব্যক্তিগত।
দেশ-বিদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো মনে করে, মেয়র সাঈদ খোকন সফরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হচ্ছে ব্যক্তিগত কিংবা সেমিনার-অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা, নগরীর স্বার্থ সুরক্ষা দর-কষাকষিতে এসব সফর ভূমিকা রেখেছে, এমনটা বলার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয়ে ঘন ঘন বিদেশ সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
সাবেক ও বর্তমান সচিবদের মতে, নিয়মিত বিরতিতে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের বিদেশ সফর চোখে লাগছে। কারণ, এ সফরগুলোর বেশির ভাগই ব্যক্তিগত। কাজেই সিটি কর্পোরেশনের জন্য দু’একটা সফরে গিয়ে তিনি যেসব আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তাতে নগরীর ভূমিকা কিংবা গুরুত্ব কতটা বেড়েছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
বাবার হাত ধরেই রাজনীতিতে নামেন পুরান ঢাকার মাজেদ সর্দারের নাতি সাঈদ খোকন, ১৯৮৭ সালে ওয়ার্ড শাখার আইন-বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগে নাম লেখান। ১৯৯৯ সালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে অংশগ্রহণ, পরে ২০০৪ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন তিনি।
তবে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার মধ্যে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে ‘কিংস পার্টি’ পিডিপিতে যোগ দিয়েছিলেন সাঈদ খোকন। তবে তার দাবি, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চাপে পড়ে তা করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।
সাঈদ খোকন যখন ডিএসসিসির দায়িত্ব নিলেন, তখন পুরান ঢাকার অনেক মানুষ বলেছিলেন, এবার পুরান ঢাকার রাস্তাঘাট, ড্রেনেজের উন্নয়ন হবে। এখন দেখি কোনো উন্নয়ন নেই। আগেও যেমন বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, এখনো তাই। এতে মানুষের আশায় গুড়ে বালি পড়েছে।
এই মেয়র দিয়ে কোনো রকম কাজ হয়নি। সাঈদ খোকন চার বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। এই চার বছরে তার উল্লেখযোগ্য অর্জন নেই। তবে নগরবাসীর জন্য সাফল্য না আনলেও তিনি পরিচ্ছন্নতার নামে করেছেন একটি বিশ্বরেকর্ড। সেই রেকর্ডটা হলো— গিনেস বুকে ডিএসসিসির নাম লেখিয়েছেন। অথচ রাস্তার আশেপাশে ময়লার ভাগাড়।
মেয়রের কাছে প্রশ্ন, আপনি যে এই বিদেশ সফর করছেন, তাতে কি দেশের কোনো লাভ হচ্ছে। দেশের টাকা আপনি কেন এভাবে খরচ করছেন?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন