নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদের স্ত্রী বেঁচে আছেন এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ বলে দাবি করেছেন ঢাকায় বসবাসরত জ্যেষ্ঠ ছেলে তোহান মোহাম্মদ (৩৮)।
নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল শফিকুর রহমান অণু সন্ত্রাসীর গুলিতে ড. আবদুস সামাদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করলেও এই তথ্য মানতে নারাজ ছেলে তোহান।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে তার মা দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে বাবার খোঁজে সেখানকার হাসপাতালে যাবেন। তখন বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) দিনগত রাত ১২টার ৩৫ মিনিটের দিকে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে একথা জানান ছেলে তোহান মোহাম্মদ।
তোহান স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরের একটি বাসায় থাকেন। তিনি একটি বেসরকারি ফার্মে চাকরি করেন।
ড. আবদুস সামাদ নাগরিকত্ব নিয়ে স্ত্রী কেশোয়ারা সুলতানা (৫৮), দুই ছেলে তারেক মোহাম্মদ ও তানভীর মোহাম্মদকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। তারেক সেখানে একটি ফার্মে চাকুরি করেন আর তানভীর এখনো পড়াশোনা করছেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগে চাকরি ছেড়ে ২০১৩ সাল থেকে ড. আবদুস সামাদ নিউজিল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। তিনি স্থানীয় লিংকন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক এবং হামলার শিকার আল নুর মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন।
‘আব্বা হাসপাতালে। তিনি জীবিত নাকি মৃত এটা জানি না’ এমনটি জানিয়ে জ্যেষ্ঠ ছেলে তোহান মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার (১৫ মার্চ) দিনগত রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত (বাংলাদেশের সময়) আম্মার সঙ্গে কথা হয়েছে। আম্মা ভালো এবং সুস্থ আছেন। তিনি আব্বার সঙ্গে মসজিদে যাননি।’
‘আম্মাকে বললাম, সারা বাংলাদেশের সমস্ত লোক জানে তুমি মারা গেছো। শুনে আম্মা হাসলেন। আম্মাকে বললাম, আব্বার খবর কী? আম্মা বললো, তোমার আব্বার খবর আমরা জানি না’ বলছিলেন তোহা।
তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ওখানে নিখোঁজদের জন্য একটি সিস্টেম খুলেছে। আব্বাকে পাচ্ছি না সেখানে পোস্ট করে তারা (দুই ভাই) ঘুমিয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো উত্তর আসেনি। কি হয়েছে না হয়েছে শিগগির জানা যাবে।’
তোহান বাংলানিউজকে আরো বলেন, ওরা (মা ও দুই ভাই) রেডি হচ্ছে। হসপিটালে যাবে, গিয়ে খোঁজ নেবে, কার কী হয়েছে? এখনো কে কে মারা গেছে এটা সরকারের তরফ থেকে বলা হয়নি। লোকজন বলছে অমুক অমুক মারা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আব্বা গুলি খেয়েছে এটা অনেকে দেখেছে। কেউ বলে বুকে, কেউ হাঁটুতে, কেউ বলে মাথায়, কেউ বলে ঘাড়ে গুলি খেয়েছে। উনি হাসপাতালে এটাই সবাই জানে। বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে তা আমরা জানি না।
‘আম্মা ও দুই ভাই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন। এখন সেখানে সকাল ৬টা বাজে। এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে তারা হাসপাতালে যাবেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে শুনবেন। আজকের দিনে মোটামুটি সবকিছু জানা যাবে। আমার দুই ভাইও অনিশ্চিত। তারাও কিছুই জানছে না। কনসাল জেনারেল আমার বা আমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।’
এই হামলার ঘটনায় শেষ খবর পর্যন্ত ৪৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ৪৯ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আর হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রধান হামলাকারী অস্ট্রেলিয়ান বলে জানা গেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন