সিলেটের দাঁড়িয়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন রোকন। সেখানেই চালাতেন নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। ইয়াবা থেকে শুরু করে নারী সবই পাওয়া যেতো টাকার বিনিময়ে। বিষয়টি স্থানীয়দের চোখ এড়ায়নি। ফলো করতে করতে এলাকার মানুষ জানতে পারে ভেতরের বিচিত্র কাণ্ড-কারবার।
বহুল পরিচিত রিমা বেগমকে ওই বাসায় রেখে ‘রঙ্গশালা’ গড়ে তুলেছিল রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া। নিজে পুলিশের এসআই। এ কারণে তিনি প্রায় সময় পুলিশের পোশাক পরেই ওই বাসাতে যাতায়াত করতো। পুলিশের বাসা- ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতেন না। র্যাবের অভিযানে সিলেটের আলোচিত ওই অপরাধ আস্তানার নিয়ন্ত্রক রোকন উদ্দিন ও তার ‘রক্ষিতা’ রিমা বেগম আটক হওয়ার পর বেরিয়ে আসতে থাকে সব তথ্য।
এলাকাবাসী জানান, আগে কখনই ওই এলাকায় এসব ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু রোকন আসার পরপরই পরিবেশ বদলে যেতে থাকে। সিলেটের দাঁড়িয়াপাড়া। নগরীর জিন্দাবাজারের পাশের এলাকা এটি। ব্যস্ততম এলাকাও। বাণিজ্যিক এলাকার পাশে হওয়ার কারণে মানুষের যাতায়াতও বেশি।
ওই এলাকার মেঘনা এ-২৬/১ নম্বর বাসার মালিক প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী। প্রায় ৫ মাস আগে এসআই রোকন উদ্দিন ভূঁইয়া ওই বাসার নিচতলা ভাড়া নেয়। স্ত্রীসহ বসবাস করবে জানিয়ে বাসাটি ভাড়া নেয়। এরপর ওই বাসাতে নিয়ে আসে স্ত্রী পরিচয়দানকারী রক্ষিতা রিমা বেগমকে।
স্থানীয়রা আরও জানায়, রোকনের বাড়ি নগরীর মুন্সিপাড়া আবাসিক এলাকায়। ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা বলে পরিচয় দিলেও তার আদি বাড়ি কুমিল্লায়। পিতার চাকরির সূত্রে রোকন সিলেটেই বেড়ে ওঠে। পড়ালেখা শেষ করে পুলিশে চাকরি নেয়। এরপর থেকে সে সিলেটের মুন্সিপাড়ায় বসবাস করছে। তার স্ত্রী, সন্তানরা বাস করে মুন্সিপাড়াতেই। ওখানেও রয়েছে তার আত্মীয়স্বজন। এসআই রোকনের নাম সিলেটের অপরাধীদের কাছে অপরিচিত নয়। সিলেটের অপরাধের নিয়ন্ত্রক হিসেবেও তাকে চিনেন অনেকেই।
রিমার সঙ্গে প্রায় দুই বছর ধরে সম্পর্ক রোকনের। হাওয়াপাড়া এলাকার হালিমার আস্তানায় যাওয়া-আসার সুবাদে রিমার সঙ্গে পরিচয়। এরপর থেকে রোকন রিমাকে নিয়ে নতুন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। রিমার বাড়ি সিলেটের বাইরে। সুনামগঞ্জের পরিচিত এক নারী রিমাকে হালিমার কাছে পাঠিয়েছিল। ৫ মাস আগে যখন রোকন ও স্ত্রী পরিচয়কারী রিমাকে নিয়ে দাঁড়িয়াপাড়া এলাকার ওই বাসাতে ওঠে তখন বেশ নির্জন ছিল এলাকা। কিন্তু রোকন বাসা ভাড়া নেয়ার পরপরই বদলে যায় দৃশ্যপট।
দাঁড়িয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, রোকনের ওই বাসাটি স্থানীয়রা ‘পুলিশের বাসা’ বলেই চিনতেন। প্রথম প্রথম লোকজন এলেও কেউ কিছু মনে করতেন না। কিন্তু ধীরে ধীরে বাসাতে লোকজন আসা বাড়তে থাকে। অচেনা মহিলারাও বোরকা পরে পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে ওই বাসাতে আসতে থাকে। এ কারণে তাদের নজরে আসে বাসার কর্মকাণ্ড। কিন্তু ভেতরের কর্মকাণ্ড তাদের কাছে অজানা থাকেনি।
তারা বলেন, এসআই রোকন বাসা ভাড়া নিয়ে রিমাকে দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা শুরু করে। ইয়াবার হাট ছিল ওই বাসা। বাসায় গেলে ইয়াবা পাওয়া যায়। সেবনের জন্য রুমও বরাদ্দ আছে। চাইলে টাকা দিয়ে মহিলা পাওয়া যায়। এ কারণে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ওই বাসাতে মানুষের আনাগোনা থাকতো বেশি। পাশাপাশি বাইরে থেকে মহিলারা খদ্দের ধরে ওই বাসাতে নিয়ে যেতো। ওখানে ইয়াবা সেবনসহ অসামাজিক কাজ হতো। এলাকার মানুষ এসব কর্মকাণ্ড জানার পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিক্রম কর সম্রাটের কাছে যান। তারা কাউন্সিলরকে সব কিছু অবগত করেন।
কাউন্সিলর সম্রাট জানান, তিনি বিষয়টি জানার পর নিজেও প্রথমে তদন্ত করেন। এরপর তার কাছেও বিষয়টি রহস্যময় মনে হয়। পরে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করলে তারাও এ ব্যাপারে তদন্ত করে।
এরপর র্যাব সদস্যরা শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে এসআই রোকন ও রিমাকে গ্রেফতার করে। এ সময় ওই বাসা থেকে দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তাদের ওই বাসাতে রেখে জোরপূর্বক দেহব্যবসায় বাধ্য করা হতো।
র্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো. মনিরুজ্জামান জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তারা তদন্ত করে বিষয়টির প্রমাণ পান। পরে অভিযান চালিয়ে দুই ভিকটিমকে উদ্ধার করেন। একই সঙ্গে রোকন ও রিমাকে গ্রেফতার করেন। এদিকে- উদ্ধারের পর দীপা ও তমা নামের ওই শিশু জানিয়েছে, তাদের রিমা বাসায় রেখে অসামাজিক কাজে বাধ্য করাতো। কাজের কথা বলে তাদের নিয়ে এসে এই কাজ করাতো বলে জানায় ওই দুই শিশু। এছাড়া আরো কয়েকজন মহিলাও ওই বাসায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করতো।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন