প্রথমে নিরাপদ সড়কের দাবিতে পথে নামা শিক্ষার্থীদের তল্লাশি, এর পরপরই পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ। এ দুই কারণে চট্টগ্রামের সড়ক থেকে উধাও হয়ে গেছে ‘প্রেস’, ‘পুলিশ’ ও ‘আইনজীবী’ ইত্যাদি পরিচয়যুক্ত মোটরসাইকেল, কার-মাইক্রোবাসসহ নানা ধরনের গাড়ি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এমন পরিচয়যুক্ত গাড়ি আর রাস্তায় নামতে দেওয়া হবে না।
বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে অনেক মোটরসাইকেল ও গাড়ির মালিক-চালক তাদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকেই কাগজপত্র হালনাগাদ করে নিয়েছেন। এতে সরকারের কোষাগারে অর্থের জোগান বেড়েছে।চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান আমাদের সময়কে বলেন, পুলিশ, সাংবাদিক ও আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার নামে এতদিন যে গাড়ি চালানো হয়েছে, আইনের চোখে তা এক ধরনের নৈরাজ্য। তাই কয়েক মাস আগেই এ ধরনের গাড়ি ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশ এসেছিল। আমরা ট্রাফিক সপ্তাহ উপলক্ষে সেই আদেশের বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এমন পরিচয়যুক্ত গাড়ির নিবন্ধন বা অন্যান্য কাগজপত্র না থাকলে রাস্তায় দেখামাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, ট্রাফিক সপ্তাহ শুরুর পর থেকে পুলিশ এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭৩২টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি আটক করেছে। কাগজপত্র ঠিক না থাকা, চালকের অনুমতিপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে ৯ হাজার ৯৬৫টি। আর জরিমানা করা হয়েছে ৩০ লাখ ৫ হাজার টাকা।
তবে মাঠপর্যায়ে কাজ করেন পুলিশের এমন সদস্যরা বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট ও দলের অন্য সদস্যদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। তবেই সুফল আসবে। কারণ কাগজপত্র ঠিক না থাকায় পুলিশ গাড়ি আটক করলেও একই বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেসব গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে ফোন করেন। এ ধরনের দ্বৈতনীতির কারণে সুফল পাওয়া যায় না।
ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, উঠতি বয়সী মোটরসাইকেল চালকদের বেশিরভাগই দেশের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন নন। তারা দোকান থেকে গাড়ি কিনেই চালানো শুরু করেন।
একইভাবে কাগজপত্রের কড়াকড়ি না থাকায় এতদিন লোকজন যাচ্ছেতাইভাবে গাড়ি চালিয়েছেন। এ নিয়ে বিআরটিএরও তেমন কড়াকড়ি ছিল না। বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, যারা গাড়ি চালায় তাদের কাজ হচ্ছে নতুন গাড়ি কিনেই সেটির কাগজপত্র করা। নয় তো আইন প্রয়োগ করার জন্য পুলিশ বিভাগ রয়েছে। তিনি বলেন, চাপ না পড়লে কেউ আইন মানতে চায় না। এখন চাপাচাপি শুরু হয়েছে, তাই লোকজনও কাগজপত্র করতে আসছে।
তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, চাপাচাপি সত্তে¡ও সড়ক থেকে এ ধরনের গাড়ি একেবারেই যে রাস্তা থেকে উধাও হয়ে গেছে, তা নয়। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) হারুনুর রশিদ হাজারী আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের ধারণা, এখনো কয়েক হাজার নম্বর-প্লেটবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে অথবা চলাচলের অপেক্ষায় আছে। আমরা প্রতিদিন কোনো না কোনো জায়গায় এ ধরনের গাড়ি আটক করছি। তিনি বলেন, যেসব গাড়িতে পুলিশ লেখা আছে, অনেক সময় যাচাই করে দেখা যায়, সেগুলো আসলে পুলিশের গাড়িই না। পেশাদার সাংবাদিকরাও তেমনই গাড়ির সামনে-পেছনে প্রেস বা সাংবাদিক লেখেন না। বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন