আইপিএল ২০২১-এর ফাইনালে শুক্রবার মুখোমুখি হবে চেন্নাই সুপার কিংস ও কলকাতা নাইট রাইডার্স। দুবাইয়ে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।
মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন চেন্নাইয়ের সামনে চতুর্থ শিরোপার হাতছানি। অন্যদিকে ওয়েন মরগানের কলকাতাকে ডাকছে তৃতীয় আইপিএল শিরোপা।
এর আগে একবারই আইপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। ২০১২ সালের সেই আসরে চেন্নাইকে হারিয়ে শিরোপা জিতে কলকাতা।
যেভাবে ফাইনালে চেন্নাই-কলকাতা
এ বছর এপ্রিলে আইপিএলের ১৪তম আসরটি শুরু হয়েছিল ভারতে। তবে বেশ কিছু খেলোয়াড় করোনা আক্রান্ত হওয়ায় এক মাসের মাথায় গত মে-তে আসরটি স্থগিত হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফের মাঠে গড়ায় টুর্নামেন্ট।
আইপিএল স্থগিত হওয়ার সময় টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে ছিল চেন্নাই। আবর আমিরাতে সেই স্থান ধরে রেখেই লিগ পর্ব শেষ করে দলটি। যদিও লিগ পর্বে নিজেদের শেষ তিন ম্যাচেই হার মানে দলটি।
প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে টেবিলের শীর্ষ দল দিল্লি ক্যাপিটালসকে ৭ উইকেটে হারিয়ে আসরের ফাইনাল নিশ্চিত করে চেন্নাই।
ভারত পর্বে কলকাতার অবস্থা মোটেও সুবিধাজনক ছিল না। সাত ম্যাচে মাত্র দুই জয়ে শেষ দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে ছিল দলটি। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজেদের শেষ সাত ম্যাচের পাঁচটিতেই জয় তুলে নেয় কলকাতা। নিশ্চিত করে চতুর্থ স্থানটি।
এরপর এলিমিনেট ম্যাচে তৃতীয় স্থানে থাকা রয়্যালস চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে পা রাখে কলকাতা। যেখানে বুধবার দিল্লিকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে দলটি।
ফাইনালে নজর থাকবে যাদের ওপর-
চেন্নাই: মহেন্দ্র সিং ধোনি, মইন আলি এবং ঋতুরাজ গায়কোয়াড়
চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ম্লান ছিলেন। তবে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচে তাকে পুরোনো দিনের মতো ফিনিশার হিসেবে আবির্ভূত হতে দেখা যায়। দিল্লির বিপক্ষে জয়ের জন্য ১৩ রান প্রয়োজন ছিল চেন্নাইয়ের। এমন অবস্থায় ৬ বলে ১৮ রানের ইনিংসে দলকে জয় উপহার দেন ধোনি।
ফাইনালে যাই ঘটুক না কেন, সবার নজর থাকবে এই ৪০ বছর বয়সী সাবেক ভারতীয় অধিনায়কের দিকে। এটিই তার শেষ আইপিএল হবে, নাকি ২০২২ সালেও ফিরে আসবেন সেটা নিশ্চিত নয়। তাই সবার আগ্রহটা আরো বেশি তাকে ঘিরে।
ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার মইন আলি পুনরায় আইপিএল শুরুর পর এখনো ব্যাট হাতে নজর কাটতে পারেননি। আরব আমিরাত পর্বে আট ইনিংসে মাত্র ১৪.২৫ গড়ে রান করেছেন, দুই ম্যাচে ডাকও মেরেছেন। ভারত পর্বে ৬ ম্যাচে রান করেছিলেন ৩৪.৩৩ গড়ে।
তবে বল হাতে ভালো করছেন মইন। তাকে খেলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে ব্যাটারদের। টুর্নামেন্টে যাদের ইকোনমি রেট সবচেয়ে ভালো, তাদের একজন মইন।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসির সঙ্গে ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের দারুণ একটা উদ্বোধনী জুটি গড়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত ৬০৩ রান তার। পাঞ্জাব কিংসের লোকেশ রাহুলকে পেছনে ফেলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হতে মাত্র ২৪ রান প্রয়োজন তার।
২৪ বছর বয়সী গায়কোয়াড়ের গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক। তবে ভারতের বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি তার। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত মোট চার ব্যাটার সেঞ্চুরি পেয়েছেন। তাদের মধ্যে গায়কোয়াড় একজন। অন্য তিনজন হলেন- জস বাটলার, সঞ্জু স্যামসন এবং দেবদূত পাডিকাল।
কলকাতা: সুনিল নারিন, ওয়েন মরগান এবং ভেঙ্কটেশ আইয়ার
কলকাতার হয়ে শেষ ছয় ম্যাচ খেলতে পারেননি আন্দ্রে রাসেল। ইনজুরির কারণে ফাইনালেও অনিশ্চিত তিনি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক তারকা সুনিল নারিন হতে পারে কলকাতার বড় ভরসা। তার আগ্রাসী ব্যাটিং এবং স্পিন বোলিং টি-টোয়েন্টিতে দারুণ কার্যকরী। ফিটনেস ইস্যুতে যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তার। তবে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে এলিমিনেটর ম্যাচে নারিন সেই সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণ করেছেন।
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ওয়েন মরগান কলকাতাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে এবারের আইপিএলে ব্যাট হাতে ব্যর্থ তিনি, বিশেষ করে আরব আমিরাত পর্বে। শেষ আট ইনিংসে মাত্র একবার ডাবল ফিগারে পৌঁছতে পেরেছেন। ডাক মেরেছেন দুইবার। তবে তার শান্ত নেতৃত্ব কলকাতার জন্য খুবই কার্যকরী হয়েছে। ধোনির বিপক্ষে তার কৌশলগত যুদ্ধ হবে ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে পিচে অনেক ব্যাটারই যেখানে রান করতে হোঁচট খেয়েছে, সেখানে ভেঙ্কটেশ আইয়ার দারুণ খেলেছেন। ৪০ গড়ে ৩২০ রান করেছেন তিনি। ২৬ বছর বয়সীর আইপিএলে অভিষেক হয়েছে গত মাসেই। তবে এর মধ্যেই তিনটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন, পুরো টুর্নামেন্টেই যা কলকাতার অন্য ব্যাটারদের চেয়ে বেশি। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ৪১ বলে ৫৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসও খেলেনে তিনি। হয়েছেন ম্যাচসেরা।
এবং সাকিব আল হাসান
আইপিএলে এবার বাংলাদেশ থেকে দল পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। কাটার মাস্টার ফিজের দল রাজস্থান রয়্যালস অবশ্য বিদায় নিয়েছে লিগ পর্ব থেকেই। তবে সাকিবের কলকাতা পৌঁছে গেছে ফাইনালে। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত টানা ৬ মৌসুম কলকাতায় খেলেছিলেন সাকিব। ওই সময়ে দুটি শিরোপাও জিতেন দলের হয়ে। এ বছর আবারো কলকাতায় ফিরে শিরোপা জয়ের হাতছানি তার সামনে। বাংলাদেশের ভক্তরা তাই কলকাতার হয়েই গলা ফাটাবে নিশ্চিত!
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন