বিশ্ব ফুটবলে কে সেরা খেলোয়াড় এ নিয়ে কথা কাটাকাটির শেষ নেই। এ নিয়ে যেমন সমর্থকদের মধ্যে দণ্ডের অভাব নেই, ঠিক তেমনই ফুটবলাররাও। মেসি, রোনালদো, পেলে, ম্যারাডনা, জিদান নাকি অন্য কেও। এই প্রশ্নের জবাব চায় সবাই। সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে এই প্রশ্নের উত্তর এখন নয়, আজ থেকে বহু বছর আগে থেকেই হয়ে আসছে। তবে আসলে কে সর্বকালের সেরা? ফুটবল ফ্যানদের কথা, অথবা অন্য সব বিশ্লেষণ বাদে শুধু ফুটবলারদের বিবেচনায় লেখা এই প্রতিবেদনে জানাবো ফুটবলের সর্বকালের সেরা কে।
১৭ বছর বয়সেই বিশ্বমঞ্চ মাতানো পেলে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন তিনটি বিশ্বকাপ জয়ের গর্ব নিয়ে। সঙ্গে তাঁর দাবি অনুযায়ী ১২৮৪ গোলও করেছেন। অন্যদিকে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার ছিয়াশি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক, বহুল প্রচলিত কথাটা এই—আর্জেন্টিনাকে সেবার বিশ্বকাপটা একাই জিতিয়েছেন ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনা জনসাধারনের ভোটে, পেলে ফিফা নির্ধারিত বিচারক-সাংবাদিক-কোচদের ভোটে।
এদিকে বছর পনের ধরে দুজনের ধারাবাহিক ঔজ্জ্বল্যই মেসি ও রোনালদোকে সর্বকালের সেরার মনোনয়নে নিয়ে এসেছে। মেসির বয়স ৩৩ চলছে, দুবছরের বড় রোনালদো এই বয়সেও কী দারুণ ছন্দে রয়েছেন। রোনালদো ২০১৬ ইউরোসহ ব্যক্তিগত অর্জন হয়ে জ্বলজ্বল করছে পাঁচটি ব্যালন ডি’অর। রেকর্ড ছয়বার জেতা মেসি এদিক থেকে রিক্ত—ক্লাব ক্যারিয়ারের পুরোটাই এখন পর্যন্ত কেটেছে বার্সেলোনায়, আর্জেন্টিনার জার্সিতে একটি বিশ্বকাপ ফাইনালসহ তিনটি ফাইনাল খেলেও ফিরেছেন শূন্য হাতে।
পরিসংখ্যান যাই হোক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সবার মধ্য থেকে ব্রাজিলের রোনালদোকেই বেছে নেন ইব্রা। তিনি বলেন, “রোনালদো, দা ফেনোমেনন। সেই সব সময়ের সেরা।” ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী তারকা রোনালদোর প্রশংসা এর আগেও অনেকবারই করেছেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। সব সময়ের সেরা ফুটবলারের প্রশ্নেও ‘দা ফেনোমেনন’-কে বেছে নিলেন এসি মিলানের এই সুইডিশ ফরোয়ার্ড।
ইতালির ২০০৬ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফাবিও কানাভারো আবার এগিয়ে রাখছেন ম্যারাডোনাকে। কানাভারো বলেন, ‘আমি মেসিকে অনেক সম্মান করি। এই প্রজন্মের খেলোয়াড়দের মধ্যে ও সর্বকালের সেরাদের একজন। কিন্তু ম্যারাডোনা অন্যরকম, কারণ সে সময় ফুটবলই অন্যরকম ছিল। প্রতিপক্ষ তাঁকে অনেক লাথি মারত, কিন্তু তিনি সব সময়ই বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেন।’
ফরাসি কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনার চোখেও ম্যারাডোনাই সেরা। ক্যান্টোনা বলেন, ‘অনেকে বলেন পেলে সর্বকালের সেরা, কিন্তু আমার কাছে তা মনে হয় না। ম্যারাডোনা সব সময়ই সেরা থাকবেন। পেলে ও ম্যারাডোনার মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা ছিল ম্যারাডোনার আশপাশে এত দারুণ সব খেলোয়াড় ছিল না। দলটাকে তিনিই একা বয়ে নিয়ে গেছেন। যদি আপনি ম্যারাডোনাকে ওই আর্জেন্টিনা দল থেকে বের করে নিতেন, তাহলে ওরা বিশ্বকাপ জিততে পারত না। কিন্তু পেলেকে ছাড়াও ব্রাজিল জিতত বলেই আমার মনে হয়।’
আবার বর্তমান ম্যানচেস্টার সিটি কোচ গার্দিওলা ২০০৯ সালে সর্বকালের সেরার প্রশ্নে ভোটটা দিয়েছিলেন ম্যারাডোনার বাক্সে। তবে এরপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘মেসিই সর্বকালের সেরা। আমি ওকে পেলের সঙ্গে তুলনা করি।’
এদিকে ফরাসিরাও কম যান না। সাবেক আর্সেনাল কোচ আরসেন ওয়েঙ্গার বলেছেন, “সর্বকালের সেরা ফুটবলার একজনই। আর তিনি হলেন জিনেদিন জিদান।“
সর্বকালের সেরা কে? বিতর্কটাই এমন, এর কোনো একটি উত্তর হয় না। সাবেকদের মতামত দেখলেই তা বোঝা যায়। আর এমন বিতর্ক চলছে আর চলতেই থাকবে। আর এই প্রশ্নের উত্তরে কখনোই কোনো একটা নাম আসবে না। হয়তো বিতর্কটার সৌন্দর্যই এটি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন