এখন আর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নির্বাচক প্যানেল দুই সদস্যের নয়। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনের সঙ্গে তৃতীয় নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন বর্ষীয়ান বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। বুধবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেয়া হয়েছে এ সিদ্ধান্ত।
রাজ্জাককে নির্বাচক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্তটিকে সময়োপযোগী হিসেবে মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। তার মতে, মানুষ হিসেবে ভালো হওয়ায় রাজ্জাকের কাছ থেকে নির্বাচক হিসেবেও দারুণ কাজ পাওয়া যাবে না। কেননা নির্বাচক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ কাজ করবে না রাজ্জাকের।
আজ (বৃহস্পতিবার) এক ভিডিওবার্তায় রাজ্জাককে তার নতুন দায়িত্বে অভিনন্দন জানিয়ে এ কথা বলেছেন ফারুক আহমেদ। তিনি জাতীয় দলের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েই সুযোগ পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহমীরা। যারা পরবর্তী সময়ে হয়েছেন দলের কাণ্ডারি। ফারুকের প্রত্যাশা, রাজ্জাকও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে খেলোয়াড় বাছাই করবেন।
ফারুক বলেন, ‘আমি প্রথমেই আব্দুর রাজ্জাককে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমার মনে হয়, এটা খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন দুইজন নির্বাচক দিয়ে নির্বাচক প্যানেল চালিয়েছি। যদিও শুধু দুইজন নির্বাচক নন, তাদের সঙ্গে বোর্ডের কয়েকজন পরিচালক আছেন নির্বাচক কমিটিতে। তবে আমার মনে হয়, যেহেতু আব্দুর রাজ্জাক সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট খেলা ছেড়েছে (রাজ্জাক আনুষ্ঠানিক অবসর নেননি) এবং বাংলাদেশ আধুনিক ক্রিকেটে যা করেছে তার অনেকটাই সে দেখেছে। ফলে তার জন্য খেলোয়াড় বাছাই করা খুব সুবিধা হবে।’
রাজ্জাককে ভালো মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একটা জিনিস আমি খুব ভালোভাবে বিশ্বাস করি, আপনি যে কাজই করেন, মানুষ হিসেবে ভালো হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচক কমিটিতে এ বিষয়টা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এ জিনিসটা বলার কারণ হলো, মানুষ ভালো হওয়া মানে আপনি নৈতিকতার দিক থেকে স্বচ্ছ অবস্থান আছেন। অনেক সময় আমরা দেখি খেলোয়াড়ি জীবনে যদি কোনো ক্ষোভ থাকে, তাহলে সেটা পরে শোধ নেয়ার একটা ব্যাপার থাকে। যেটা রাজ্জাকের মধ্যে কখনও আমি দেখিনি।’
এসময় রাজ্জাককে কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ফারুক বলেন, ‘আমি যখন বিমান দলের অধিনায়ক ছিলাম, দীর্ঘ ২০ বছর আগে সে (রাজ্জাক) আমার অধীনে খেলেছে। সে অত্যন্ত চমৎকার একজন মানুষ। খেলোয়াড় হিসেবে তার সামর্থ্যও আমরা সবাই জানি। তাই সে যেহেতু ভালো মানুষ, সেদিকটা বিবেচনা করলে আমার মনে হয় সে (নির্বাচকের) কাজটাও খুব ভালোভাবে করবে। কারণ তার মধ্যে কাউকে ঠকানো কিংবা কারও ওপর প্রতিশোধপরায়ন হওয়ার বিষয়টা নেই। আমি সর্বোপরি তার সাফল্য কামনা করছি।’
এসময় নতুন দায়িত্ব পাওয়া রাজ্জাককে দুইটি পরামর্শ দেন ফারুক, ‘দল নির্বাচনের বিষয়টা খুবই জটিল একটা ব্যাপার। খুব সহজেই এটা বলা যায় না যে কীভাবে করতে হবে। ছোট দুইটি পরামর্শ, বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন যে পর্যায়ে গেছে, আমরা সবাই জানি এখন যেহেতু কিছু ক্রিকেটার পাইপলাইনে তৈরি হয়ে আছে যেখান থেকে আমরা ২৫-৩০ জন ক্রিকেটারের নাম বলতে পারব। সেটা শুধু নির্বাচক কমিটি নয়, যেকোনো দর্শককেও যদি আপনি বলেন, সে কিন্তু ২৫টা খেলোয়াড়ের নাম বলে দিতে পারবে। এর পরে কী? এ জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা হলো এক।’
‘দ্বিতীয়ত হলো, আপনি খেলোয়াড় যে তৈরি করবেন, এখন কিন্তু সময় এসেছে নির্বাচকদের কিছু নির্দিষ্ট জায়গা নিয়ে কাজ শুরু করার। সেটা কেমন? যেমন ধরেন আপনি ৬-৭ নম্বরের একজন ব্যাটসম্যান খুঁজছেন, একজন অলরাউন্ডার খুঁজছেন, জাতীয় দলের জন্য একজন অলরাউন্ডার খুঁজছেন- এসব নির্দিষ্ট দিক নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা এতদিন সাধারণ কাজ করেছি। বাংলাদেশ দল এখন ওয়ানডেতে খুব ভালো খেলছে। সব ফরম্যাটেই এখন মোটামুটি ভালোই খেলছে।’
‘তাই এখন দল নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট হতে হবে আমাদের। এটাই আমার পরামর্শ থাকবে। শুধুমাত্র গৎবাঁধা পাঁচটা ওপেনিং ব্যাটসম্যান দলে নিয়ে তার মধ্যে দুইজন ওপেনার, একজন তিন নম্বর, একজন পাঁচ-সাত নম্বরে খেলিয়ে দিলাম- এরকম না করে বিশেষ জায়গাগুলোর জন্য বিশেষ খেলোয়াড় নিয়ে এখন কাজ করতে হবে। এজন্য কিন্তু কষ্ট করতে হবে। কোনোকিছুই কিন্তু এমনি এমনি হয় না। এটাই আমার পরামর্শ থাকবে রাজ্জাক ও নির্বাচক কমিটির প্রতি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন