১৯৯৭ সালের মার্চ থেকে ২০০০ সালের নভেম্বর-ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে হিসেব কষলে আড়াই বছরের সামান্য বেশি। অথচ এই ৩১ মাসে তিন তিনবার অধিনায়ক বদল হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলে। প্রথমে আকরাম খান, তারপরে আমিনুল ইসলাম বুলবুল আর সর্বশেষ নাইমুর রহমান দুর্জয়-এ অল্প সময়ে টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আকরাম খান ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি বিজয়ের সফল মিশনে একদম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অথচ তার দুই বছর না যেতেই ৯৯‘র বিশ্বকাপে প্রথমবার অংশ নেয়া বাংলাদেশ খেলেছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে। আর এক বছর পুরো হবার আগেই ভারতের সাথে টেস্ট অভিষেকে আবার নেতৃত্ব বদল। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে নেতৃত্ব দেয়া আমিনুল ইসলাম বুলবুলের জায়গায় নাইমুর রহমান দুর্জয়ের কাঁধে প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি বর্তায়। কেন এই পালাবদল? আড়াই বছরে কি কারণে তিনবার অধিনায়ক বদল হলো?
এমন নয় ঐ সময়ে তিনজন অধিনায়ক বদলের ঘটনায় সাড়া দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তবে সাধারণভাবে একটি প্রশ্ন উঠেছিল-সফল মিশনের পর অধিনায়ক বদলের ঘটনা ঘটেছিল কেন? সবার জানা, আকরাম খানের নেতৃত্বেই ৯৭‘র আইসিসি ট্রফি জিতে ৯৯‘র বিশ্বকাপ খেলার টিকেট কনফার্ম করেছিল বাংলাদেশ। তাহলে কেন আইসিসির দুই বছর না যেতেই অধিনায়ক বদল? আবার ৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে আইসিসি সহযোগি সদস্য স্কটল্যান্ড আর অতি শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারানোর ঠিক দেড় বছর পর টেস্ট জগতে পা রাখার আগের আবার বুলবুলকে পাল্টে দুর্জয়কে কেনইবা ক্যাপ্টেন করা হয়েছিল?
দীর্ঘ দিন পর ক্রিকেট অনুরাগী ও বাংলাদেশ ভক্ত-সমর্থকদের সে কৌতুহলি প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। সেটা কোন অসমর্থিত সূত্রে পাওয়া নয়। এমন একজন এ প্রশ্নর জবাব দিয়েছেন, যিনি ছিলেন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অভিভাবক, ঐ সময়ে বিসিবি প্রধান। অধিনায়ক বদলের মত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসলে তার হাতেই নেয়া। তিনি সাবের হোসেন চৌধুরী।
কদিন আগে ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের সাথে এক ইউটিউব লাইভে ঐ অধিনায়ক বদলের বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরী যা বলেন, তার সারমর্ম হলো, তখনকার বোর্ড জেনে ও বুঝেই আসলে তিন তিনবার অধিনায়ক পাল্টেছিল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফি বিজয়ের মিশনে ছিলেন আকরাম খান অধিনায়ক। দু বছর পর যুক্তরাজ্যে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া দলে তার বদলে আমিনুল ইমলাম বুলবুলকে ক্যাপ্টেন করা হয়েছিল। সে কারণ ব্যাখ্যা করে বিসিবির ঐ সময়ের সভাপতি বলেন, ‘মূলত একটি কারণে আকরামকে পাল্টে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে অধিনায়ক করা হয়। সেটা হলো, বিশ্বকাপ হয়েছিল ইংলিশ কন্ডিশনে। ঐ কন্ডিশন সম্পর্কে বুলবুলের ধারণা ভালো ছিল। আমার মনে হয় ইংল্যান্ডের মত দেশে বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে তার মত ব্যাটসম্যান ও ক্যাপ্টেন দরকার ছিল। তাই আমরা বুলবুলের কাঁধেই অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব দিয়েছিলাম এবং সে তার দায়িত্ব সাফল্যর সঙ্গে পালন করেছে।’
সেই বুলবুল অধিনায়ক থাকা অবস্থায় টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ। কিন্তু অভিষেক টেস্টের ঠিক আগে দিয়ে তার বদলে নাইমুর রহমান দুর্জয়কে অধিনায়ক করা, সেটা কেন? এই প্রশ্নের জবাবে সাবের হোসেন চৌধুরী জানান, আসলে দুটি কারনে বুলবুলকে বাদ দিয়ে দুর্জয়কে অধিনায়ক করা হয়েছিল। প্রথম কারণ, বুলবুলকে একদম চাপমুক্ত হয়ে খেলার সুযোগ করে দেয়া। আর দ্বিতীয়ত, টেস্ট যাত্রায় এক নতুন অধিনায়ককে দায়িত্ব দেয়া। যাতে করে সেই নতুন অধিনায়ক পরের চার পাঁচ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় দল পরিচালনা করতে পারেন।
সাবের হোসেন যোগ করেন, ‘আমার ধারণা, অধিনায়কত্বর চাপটা মাথায় ছিল না বলেই টেস্ট অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে বুলবুল একদম ফ্রি হয়ে অমন এক অবিস্মরণীয় ইনিংস (১৪৫ রানের) খেলতে পেরেছিলেন। আমার মনে হয় ওটা টেস্টে বাংলাদেশের ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ইনিস। আমরা একটা নতুন যাত্রা শুরু করছি, একজন নতুন ও যুবাকে অধিনায়ক করবো যে পরের পাঁচ ছয় বছর দল পরিচালনা করতে পারে, এটাই ছিল মূল ভাবনা।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন