বছর দুই আগে ভারতীয় এক জুয়াড়ির ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও সেটি গোপন করায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে। তবে তথ্য গোপনের ভুল স্বীকার করার শর্ত সাপেক্ষে পরে সাকিবের এক বছরের শাস্তি এরইমধ্যে স্থগিত করে আইসিসি।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো তখন ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করে। যদিও ওই সময় ভারতীয় মিডিয়াগুলোর সংবাদের শিরোনাম দেখলে মনে হবে যেন সাকিব জুয়াড়িদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। অথচ ভারতের অনেক গণমাধ্যমেই ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া ভারতীয় নাগরিক জুয়াড়ি সেই কুচক্রী দীপক আগারওয়ালের নামটি তেমনভাবে সামনে আনা হয়নি।
বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের নিষেধাজ্ঞার খবরের সঙ্গে দীপক আগারওয়ালের নাম ক্রিকেট দুনিয়ার নজরে আসে। ভারতীয় এই জুয়ারি সম্পর্কে ক্রীড়ামোদী মানুষের কৌতুহল হুড়হুড় করে বেড়ে যায় তখন। সবার মনে এক কৌতুহল ছিল- কে এই দীপক আগারওয়াল? কী তার পরিচয়?
ভারতে ক্রিকেট জুয়াড়িদের নিয়ে টানাহেঁছড়া নতুন খবর নয়। ২০১৩ সালে ফিক্সিংয়ের দায়ে নাটকীয়ভাবে গ্রেফতার হয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা বিন্দু সারা সিং ও তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি এন শ্রীনিবাসনের মেয়ে জামাতা গুরুনাথ মায়াপ্পান। বিন্দু ও গুরুনাথ তাদের স্বীকারোক্তিতে দীপক আগারওয়ালের নামটি উচ্চারণ করেছিলেন।
ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক আগারওয়ালের আসল নাম বিক্রম আগারওয়াল। সাকিবের এক পরিচিত ব্যক্তি দীপককে সাকিবের মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন। সেটা ২০১৭ সালের নভেম্বরের ঘটনা। এরপর দীপক আগারওয়াল সাকিবের সঙ্গে হোয়াটঅ্যাপসে ম্যাসেজ চালাচালি শুরু করেন। এক পর্যায়ে সাকিবকে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব দিলে সাকিব তা প্রত্যাখ্যান করেন। তবে বিধিমালা মোকাবেত তখনই বিষয়টি আইসিসিকে জানাতে ভুল করেন সাকিব। সেই লঘুপাপেই এখন গুরুদণ্ড ভোগ করছেন দেশের এই আইকন ক্রিকেটার।
২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ও একই বছরের ২৭ আগস্ট আইসিসির দুর্নীতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আকসু) দুই দফায় জুয়াড়িদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে সাকিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দুবারই সাকিব দীপক আগারওয়াল নামে ভারতীয় এক জুয়াড়ির নাম প্রকাশ করেন।
আকসুর তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আগারওয়াল মোট তিনবার সাকিবকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেন। তবে প্রতিবারই সেইসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। আর সেই বিষয়গুলো নিজের মধ্যেই গোপন রাখেন সাকিব। বিসিবি কিংবা আইসিসি কাউকেই সেই প্রস্তাবের বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে এর আগে বেশ কয়েকবারই গ্রেফতার হয়েছেন আগারওয়াল। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ফিক্সিংয়ের অভিযোগে একাধিককার কারাবরণও করেছেন। আইসিসির চিহ্নিত জুয়াড়িদের কালো তালিকায় উপরের দিকেই আছে এই ইন্ডিয়ান জুয়াড়ির নাম। আইসিসির কাছে এই জুয়াড়ি একজন মোস্ট ওয়ান্টেড।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মাধ্যমে ব্যবসায়ী জগতে পা রাখেন আগারওয়াল। এর পর বনে যান হোটেল ব্যবসায়ী। বর্তমানে চেন্নাই শহরে তার দুটি পাঁচতারকা হোটেল আছে। ১২৯ কক্ষবিশিষ্ট ব্যবসায়িক হোটেল ফরচুন সিলেক্ট পামস ও পাঁচতারতা হোটেল র্যাডিসন ব্লুর মালিক আগারওয়াল। এছাড়াও ভিভিএ হোটেল প্রাইভেট লিমিডেটের প্রধান ও আইটিসি হোটেল গ্রুপের সদস্যও তিনি।
রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে হোটেল ব্যবসায় পা রেখে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া আগারওয়াল একটা সময় ধীরে ধীরে জুয়াড়ি চক্রে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময় নাম বদলে ভিক্টর পরিচয়েও যোগাযোগ করতেন তিনি খেলোয়াড়, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।
আগারওয়ালের বাড়ি ভারতের হরিয়ানায়। দেশটির ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওনে একটি ক্রিকেট একাডেমি রয়েছে তার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে রয়েছে বিচরণ। টি-২০ লিগের একজন প্রমোটর হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে থাকেন। বাড়ি হরিয়ানায় হলেও আগারওয়াল থাকেন দুবাইয়ে। তার জুয়ার ফাঁদে সাকিবের নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই দুবাইয়েও এই জুয়ারির ওপর নজরদারি করছে আইসিসির অ্যান্টি করোপশন ইউনিট।
একজন ভারতীয় জুয়াড়ির কুচক্রে পড়েই আজ বিশ্বসেরা একজন ক্রিকেটারকে মাথায় নিতে হলো নিষেধাজ্ঞার খড়গ। এরকম আগারওয়ালরা কালে কালে যুগে যুগে ক্রিকেটের মতো সভ্য অঙ্গলকে কলুষিত করেছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন