২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। দেখতে দেখতে ১৯ বছর কেটে গেল। অথচ এই বিশ বছরে টেস্টে যথাযথ উন্নতি হয়নি। গড়ে ওঠেনি টেস্টের কালচার। তাতেই হতাশ অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেয়া নাঈমুর রহমান দুর্জয়।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১৯ বছর ফূর্তি উপলক্ষে যুগান্তরের স্পোর্টস রিপোর্টার আল -মামুনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদ্স্য দুর্জয়। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
যুগান্তর: অভিষেক টেস্টের অনুভূতি?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: অনুভূতি তো আসলে বলে বুঝানো যাবে না। অন্যরকম ফিলিংস ছিল। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকেই আমাদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। খেলার প্রস্তুতি তো সবসময় থাকে। আমাদের মানসিক প্রস্তুতি ছিল ভিন্ন, মানসিক অবস্থাও ছিল অন্যরকম। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট, সবার মধ্যে যেমন উত্তেজনা ছিল তেমনই টেনশনও ছিল।
আমাদের মধ্যে যে উত্তেজনা ছিল অফিশিয়ালি যে ডেব্যু ক্যাপ দেয়া হয় সেটা কিন্তু দেয়া হয়নি। আর আমাদের কিন্তু অভিষেক টেস্টের পুরো দলের একসঙ্গে কোনো অফিশিয়াল ছবিও নেই!
যুগান্তর: টেস্ট ক্রিকেটে ১৯ বছর পার করল বাংলাদেশ, এই সময়ে কতোটা উন্নতি হয়েছে?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: উন্নতির তো অনেক জায়গা ছিল। প্রায় বিশ বছর হতে চলল। অনেক পরিবর্তন অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আরও উন্নতি হওয়ার সুযোগ ছিল। একটা জায়গায় আমার আফসোস লাগে, দেশে এখনও টেস্ট ক্রিকেটের কালচার তৈরি হয়নি। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে জোর দেয়া প্রয়োজন। ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলা দলগুলোর সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো উচিত। তাদের নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।
যারা ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট খেলে তাদের আলাদাভাবে দেখা উচিত। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেভাবে টেস্ট ক্রিকেটের উন্নতির জন্য সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত। আর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ থাকতে হবে। তাহলে উন্নতি অবশ্যই হবে।
যুগান্তর: টেস্ট ক্রিকেটের উন্নয়নে আর কোন কোন জায়গাগুলোতে উন্নতি প্রয়োজন বলে করেন?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: আগে যেগুলো বলেছি সেগুলোতে উন্নয়ন করতে পারলে এমনেতেই উন্নতি হবে। মূল কথা হলো- টেস্ট ক্রিকেটের একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
যুগান্তর: ১৯ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলার পরও স্ট্যাটাস নিয়ে কথা হয়?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: টেস্ট মর্যাদা নিয়ে এখন তেমন কেউ কথা বলছে না। হয়তো মাঝে মধ্যে বলে, সেটা আমাদের কারণেই বলে। এই যেমন আফগানিস্তানের মতো উঠতি দলের সঙ্গে ঘরের মাঠে হেরে যাওয়াটা দুঃখজনক। টেস্টে নবাগত একটি দলের সঙ্গে নিজেদের মাঠে হেরে গেলে কথা তো হবেই! আসলে খেলাধুলায় জয় পরাজয় থাকবেই। তাই বলে একটা উঠতি দলের সঙ্গে অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও হারতে হবে-এটা বেমানান। পরাজয়ের পর উইকেটের দোষ দেয়া হচ্ছে, উইকেট কারা নির্ধারণ করল। ওরা তো (আফগানরা) আর করেনি। আমরাই উইকেট তৈরি করলাম অথচ আমাদেরই হারতে হলো।
যুগান্তর: লম্বা সময় সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলার পরও বিদেশি দলগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমীহ না পাওয়া নিয়ে যদি বলেন?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: সমীহ পাচ্ছি না এ কথা বলছি না। এখন বিশ্বের প্রতিটি দলই বাংলাদেশকে সমীহ করে। আগে এফটিপিতে (ভবিষ্যত সূচিতে) অনেক কম ম্যাচ ছিল। এখন আমরা অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। সবার সঙ্গেই সিরিজ হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া আমাদের মাঠে খেলেছে। এখন আমাদের সঙ্গে সবাই খেলতে চায়। আগে যেমন খেলতে চাইত না। এখন সমীহ করছে। ভালো খেলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও খেলা বাড়বে।
গান্তর: টেস্ট ক্রিকেটে উনিশ বছরে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মাঠে দ্বিতীয়বার টেস্ট খেলার সুযোগ পেল, এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: এটা আসলে দুঃখজনক। ওদের মাঠে আরও অনেক বেশি টেস্ট খেলা প্রয়োজন ছিল। এর আগে ভারতের মাঠে মাত্র একটা টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এবার পূর্ণাঙ্গ সিরিজ হচ্ছে। এখন সিরিজগুলো আসলে পারফরম্যান্সের সঙ্গে সঙ্গে রেভিনিউ একটা বড় বিষয়, সবাই রেভিনিউর কথা চিন্তা করে। ভারত আমাদের সঙ্গে খেললে আগে লস মনে করত। এখন তারা লসের জায়গায় নেই। তারাও দেখছে বাংলাদেশের সঙ্গে খেললে লাভ হয়। তাই খেলতে চাচ্ছে। আমার বিশ্বাস সামনে আরও বেশি ম্যাচ খেলতে চাইবে।
যুগান্তর: ২২ নভেম্বর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ইডেন গার্ডেন্সে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট নিয়ে যদি বলেন?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: দিবা-রাত্রির টেস্ট খেললে দুই দলের জন্যই ভালো হবে। এর আগে তারাও দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলেনি, আমারও খেলিনি। তাই সমস্যা হলে দুই দলেরই হবে। আমি মনে করি ভারতের সঙ্গে প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট হওয়াতে ভালো হয়েছে। তার কারণ আমাদের এখানকার উইকেট আর ভারতের উইকেট একই রকম। ভারত না হয়ে অন্য দেশে প্রথম দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে গেলে বেশি সমস্যা হতো। তাছাড়া দিবা-রাত্রির টেস্টের প্রচলন যেহেতু শুরু হয়েছে, খেলতে তো হবেই।
যুগান্তর: ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা কেমন হতে পারে?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: দেখা যাক, টি-টোয়েন্টি সিরিজে তো ভালো হয়েছে। প্রথমবার ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছে। শেষ ম্যাচে নাইমের মতো অন্যরা দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করলে সিরিজটা আমরাই জিততাম। তবে ম্যাচে-জয় পরাজয় থাকবেই। ছেলেরা ভালো খেলছে, নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করেছে। আশা করছি টেস্ট সিরিজেও ভালো করবে।
যুগান্তর: গত ১৯ বছরে বাংলাদেশের হয়ে ৯৫জন ক্রিকেটার টেস্ট খেলেছেন। তাদের মধ্য থেকে আপনার দেখা সেরা একাদশ?
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: এটা আসলে চিন্তা করার বিষয়। হঠাৎ করেই বলা ঠিক হবে না। তবে বর্তমান দলে যারা খেলছে তাদের মধ্য থেকে সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হকরা থাকবে। যদিও মাশরাফি এখন টেস্ট খেলছে না, তবে দেশের সেরা একাদশ হলে সে থাকবে।
যুগান্তর: মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: আপনাকেও ধন্যবাদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন