ভারত বেশ কয়েকবার আপত্তি জানিয়েছিল। তবুও, সেই আপত্তি উপেক্ষা করে, ভারতের অনুমতি না নিয়েই আইসিসি সিদ্ধান্ত নিলো নতুন আরো একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করার। ২০২৩ সালের পর ২০৩১ সাল পর্যন্ত ৮ বছরের একটি সাইকেল তৈরি করলো আইসিসি। এই আট বছরে ২টি বিশ্বকাপ, চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সঙ্গে আরও অতিরিক্ত দুটি (নারী ও পুরুষ- উভয় ক্ষেত্রে) টুনার্মেন্ট আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি।
আইসিসির ইচ্ছে, প্রতি বছরই যেন আইসিসি কর্তৃক একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায়। এর ফলে, খেলার ধারাবাহিকতা থাকতে বলে মনে করছে আইসিসি। ক্রিকেটও এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি উপকৃত হতে পারবে বলে তাদের বিশ্বাস।
আবুধাবিতে চলা সপ্তাহ ব্যাপি দীর্ঘ বৈঠক শেষে সোমবার আইসিসি যে সিদ্ধান্তগুলো ঘোষণা দিয়েছে, সেখানেই দেখা যাচ্ছে তারা একটি অতিরিক্ত টুর্নামেন্ট আয়োজন করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের পরই বর্তমান চলমান সাইকেল (চার বছরের) শেষ হবে। এরপরই নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
ইএসপিএন ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, অতিরিক্ত যে একটি টুর্নামেন্ট যোগ করতে চাচ্ছে আইসিসি, সেটা হতে পারে ৫০ ওভারের ফরম্যাটের এবং টুর্নামেন্টটা আয়োজন করা হতে পারে ৬টি দল নিয়ে। অর্থ্যাৎ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একটি ছোট সংস্করণ বলা যেতে পারে তাকে। আইসিসি বৈঠকে উপস্থিত ছিল এমন কয়েকটি সূত্রই ক্রিনইনফোকে জানিয়েছে এসব তথ্য।
আইসিসি চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর বলছেন, ‘আমরা নানা বিকল্প খতিয়ে দেখেছি। আমরা মনে করি, এইভাবে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারলে ক্রীড়াসূচিতে ধারাবাহিকতা আনা যাবে। ভবিষ্যতেও ক্রিকেট এর ফলে উপকৃত হবে।’
অথচ, এমন কোনো টুর্নামেন্ট ক্রীড়া সূচিতে যোগ করার ব্যাপারে আইসিসির প্রস্তাব কিংবা সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। তারা আগে থেকেই ছিল এর বিপক্ষে। বিসিসিআইর নর্ব নির্বাচিত সভাপতি (ইলেক্ট) সৌরভ গাঙ্গুলি তার মনোনয়ন জমা দেয়ার পর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রথম যেটা জানিয়েছেন, সেটা হচ্ছে- তিনি আইসিসি থেকে প্রাপ্ত ভারতের রাজস্ব পূণর্বিবেচনা করে দেখবেন।
সৌরভ গাঙ্গুলি শুরুতেই বলে দিয়েছেন, আইসিসির রাজস্ব আয়ের ৭০ ভাগই আসে ভারত থেকে। সুতরাং, রাজস্ব বন্টনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারতের সঠিক প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে হবে। এর অন্যথা হবে না।
আইসিসির বৈঠকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিরা অনুরোধ জানিয়ে এসেছিল, নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরেকটু সময় নিতে। কারণ, বিসিসিআই’র নতুন নির্বাচিত বোর্ড গঠন হবে খুব শিগগিরই (২৩ অক্টোবর)। তারা এসে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে সব বিষয়ে। আইসিসি যে প্রস্তাব রাখছে, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার বিসিসিআই ছেড়ে দিতে চেয়েছিল পরবর্তী নির্বাচিত কমিটির ওপর।
কিন্তু আইসিসি সে সব আপত্তি কানেই তুললো না। নতুন একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছে। এরই মধ্যে ইএসপিএন ক্রিকইনফো জানতে পেরেছে, বিসিসিআই’র প্রধান নির্বাহী রাহুল জোহরি একটি ই-মেইল পাঠিয়েছেন আইসিসির প্রধান নির্বাহী মানু সাওনির কাছে। যেখানে বিসিসিআইর পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে যে, নতুন টুর্নামেন্ট অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত দ্বি-পাক্ষিক সিরিজগুলো আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় বাধার সৃষ্টি করবে।
রাহুল জোহরি হালকা হুমকির মুখেই আইসিসিকে জানিয়ে দিয়েছে, যদি পরবর্তী এফটিপি (ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম) ইতিমধ্যেই তৈরি করা হয়ে থাকে কাউকে জানানো ছাড়া কিংবা কারো আপত্তি গ্রাহ্য করে, তবে সেটা শুধু অপরিপক্কই হবে না, তা হবে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজগুলো আয়োজনের ক্ষেত্রে হবে অনেক বড় প্রতিক্রিয়া।
আইসিসি বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিসিসিআই’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি অমিতাভ চৌধুরী। মিটিংয়ে তিনি বিসিসিআই প্রধান নির্বাহী রাহুল জোহরির মনোভাবটাকেই টেনে আনেন। কিন্তু আইসিসি বোর্ডের বাকি সদস্যরা জানিয়ে দেন, সময় বাঁচানোর লক্ষ্যে তারা সামনের দিকেই এগিয়ে যেতে চান এবং প্রস্তাবটাকে পাশ করে নিতে চান। সুতরাং, কেবল ভারতছাড়া বাকি সবার সমর্থনের ভিত্তিতে নতুন প্রস্তাব পাশ করে ফেলে আইসিসি।
এরপর আইসিসি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যেখানে লেখা ছিল, ‘বোর্ড (আইসিসির) সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, আট বছরের সাইকেলে, যেটা শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে, মোট আটটি পুরুষ এবং আটটি নারী ইভেন্টের আয়োজন করা হবে। একই সঙ্গে চারটি করে অনুর্ধ্ব-১৯ পুরুষ ও নারী ইভেন্ট আয়োজন করা হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন