প্রায় দেড়শ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত ৩০৬৬ জন ১৬০৩৩ বার ডাক তথা শূন্য রানে আউট হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু টেস্ট ক্রিকেটে শূন্য রানে আউট হওয়া ব্যক্তিগত ইনিংসের সংখ্যা ৮৯৮৯। এই এত শূন্যের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত শূন্য কোনটি?- এমন প্রশ্নের জবাবে একমুহূর্তে জন্য হয়তো প্রশ্নকর্তাকেই পাগল ভেবে বসবেন।
তবে উত্তর কিন্তু ঠিকই রয়েছে এমন প্রশ্নের। কেননা ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও বিখ্যাত শূন্যটি এমন একজনেরই দখলে, যাকে গণ্য করা হয় সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাও বিশ্ববিখ্যাত সেই শূন্য রানে তিনি আউট হন নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ইনিংসে।
বলা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি, ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের শেষ কথা স্যার ডোনাল্ড জর্জ ব্র্যাডম্যানের কথা। যিনি আজ থেকে ঠিক ৭১ বছর আগে নিজের শেষ টেস্ট ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়ে যান। যা আজও ইতিহাসের পাতায় হয়ে আছে অমলিন।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন, স্যার ডন তো ক্যারিয়ারে আরও ছয়বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন। তাহলে এই শূন্য রান নিয়ে এত শব্দ খরচ কেনো? উত্তর হলো, এই একটি শূন্য রানই যে ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করতে দেয়নি। সেদিন যদি শূন্য রানে আউট না হতেন ডন, করতে পারতেন মাত্র ৪ রান- তা হলেই ভদ্রলোকের এ খেলায় থাকতো অনন্য এক মাইলফলক।
১৯৪৮ সালের আজকের তারিখে কেনিংটন ওভালে অ্যাশেজ সিরিজের শেষ ম্যাচে, নিজের ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিলেন স্যার ডন। ব্যাট করতে নামার আগে তার ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান ছিলো ৫১ ম্যাচে ৭৯ ইনিংসে ২৯ সেঞ্চুরি ও ১৩ হাফসেঞ্চুরিতে ১০১.৩৯ গড়ে ৬৯৯৬ রান।
এই অতিমানবীয় ১০০+ গড় ধরে রাখতে সেই ইনিংসে মাত্র ৪ রান করলেই হতো ব্র্যাডম্যানের। কিন্তু বিধিবাম। ইংলিশ অফস্পিনার এরিক হোলিসের সোজা এক ডেলিভারিতে ফ্রন্ট ফুটে খেলতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান স্যার ডন। তার ইনিংস থেমে যায় শূন্য রানে।
তবে সেটি ম্যাচের প্রথম ইনিংস হওয়ায় আরেকটি সুযোগ পেতে পারতেন তিনি। কিন্তু ম্যাচের দুই ইনিংস মিলেও ইংল্যান্ড টপকাতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার এক ইনিংসে করা ৩৮৯ রানকে, পরাজিত হয় ইনিংস ও ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে। যে কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে আর নামান সুযোগ পাননি ব্র্যাডম্যান।
ফলে শেষ ইনিংসের পর টেস্ট ক্যারিয়ার শেষে তার গড় ১০১.৩৯ থেকে কমে দাঁড়ায় ৯৯.৯৪! ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান হয় ৫২ ম্যাচের ৮০ ইনিংসে ২৯ সেঞ্চুরি ও ১৩ হাফসেঞ্চুরিতে ৯৯.৯৪ গড়ে ৬৯৯৬ রান। যেখানে মাত্র ৪টি চারের জন্য ম্যাজিক্যাল ১০০ গড় হয়নি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের।
সেদিন আউট হওয়ার পর ড্রেসিংরুমে ঢুকেই তার সতীর্থ কেইথ মিলারের সঙ্গে এভাবে আউট হওয়া যাওয়া নিয়ে আলোচনা করেছিলেন ব্র্যাডম্যান। যা তিনি পরে লিখেছেন তার ‘ক্রিকেটকে বিদায়’ নামক বইয়ে। মূলত আবেগাপ্লুত হয়ে যাওয়ার কারণেই সেদিন হোলিসের বল খেলতে সমস্যা হয়েছিল ব্র্যাডম্যানের।
তিনি বইয়ে লিখেন, ‘আমি যখন শেষবারের মতো মাঠে ঢুকি, তখন যে অভ্যর্থনা পেলাম গ্যালারি থেকে- তা আমাকে আবেগাপ্লুত করে তুলেছিল। একই সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম, এমন অবস্থায় যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই ব্যাটিং করা কঠিন। আমি হোলিসের করা প্রথম বলটা খেলেছিলাম ঠিকই, কিন্তু সে বলটি আমি আদৌ চোখে দেখেছিলাম কি-না নিশ্চিত নই।’
‘আমি জানতাম ২০ বছর ক্রিকেট খেলার পর এটাই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এজন্য আবেগাপ্লুত ছিলাম সত্যিই। তবে অনেকেই যেমনটা বলে থাকে যে সেদিন আমার চোখে পানি থাকায় আমি বোল্ড হয়ে গেছি, তা সত্যি নয়। এরিক হোলিস আমাকে বোকা বানিয়েই বোল্ড করেছিল। সে এজন্য পুরো কৃতিত্বের দাবিদার।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন