চলমান ক্রিকেট বিশ^কাপের সেমিফাইনাল যাত্রার জটিল সমীকরণের মধ্যে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ-ভারত। এই ম্যাচ নিয়ে এখন যত উত্তেজনা উপমহাদেশসহ ক্রিকেট বিশে^। এই উত্তেজনার আর একটি কারণ, রবিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের ‘ইচ্ছাকৃত‘ হারের সমালোচনা। এই হারের কারণে বাংলাদেশের সেমিতে যাওয়ার পথ অধিকতর কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আজকের ম্যাচে ভারতকে হারালে সেমির সমীকরণ আবার ভিন্ন রূপ নিতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারত উভয় দলের জন্যই ম্যাচটা অনেকটা ‘ডু অর ডাই’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ হারলে সরাসরি বাদ, পরের ম্যাচে পাকিস্তারে বিপক্ষে জিতেও লাভ হবে না। আর ভারত হারলে তাদেরও বাদের শঙ্কায় পড়তে হবে। আর জিতলে মোটামুটি শেষ চার নিশ্চিত হয়ে যাবে কোহলিদের। এ অবস্থায় জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না কোনো দল।
ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে শক্তিধর ও ঐতিহ্যবাহী ক্রিকেটশক্তি ভারতের বিপক্ষে আজ বিকালে মাঠে নামছে চমক জাগানিয়া দল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে দুই দলেরই অষ্টম ম্যাচ এটা।
একসময় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ছিল আকাশছোঁয়া উত্তেজনা। তাতে ভাটা পড়ছে দিন দিন। পাকিস্তানের জায়গাটা সময়ের সঙ্গে দখল করে নিচ্ছে ক্রিকেটের নতুন শক্তি বাংলাদেশ। সা¤্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়েই বিপুল আগ্রহ আর উত্তেজনা দেখা গেছে ক্রিকেটামোদীদের মধ্যে।
২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে এই ভেন্যুতেই ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেবার অভিজ্ঞতা সুখের ছিল না টাইগারদের। আজ একই মাঠে টাইগারদের সামনে একই প্রতিপক্ষ। মাঠের লড়াইয়ে দেখা যাক কী হয়, তবে গ্যালারিতে এগিয়ে থাকবে ভারতীয়রাই। তবে বাংলাদেশি প্রবাসীরাও আজকের ম্যঅচের গ্যালারি রাঙাতে তৈরি। ১০ হাজার টাইগার সমর্থক থাকতে পারে মাঠে। তারা মিছিল করে মাঠে যাবে। চার-পাঁচ গুণ বেশি দামেও টিকিট কিনেছেন অনেকে।
মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের বাংলাদেশের জন্য বড়ই দু:সংবাদ, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। কাঁধের পুরনো চোট তো ছিলই তার সঙ্গে আফগানিস্তান ম্যাচে যোগ হয় পায়ের পেশিতে টান। আফগানদের বিপক্ষে ব্যাট করার সময়ই খোড়াতে খোড়াতে ক্রিজ বদল করতে হয়েছিল এই টাইগার ব্যাটসম্যানের। এরপর অবশ্য ফিল্ডিং করতে হয়নি এই অল-রাউন্ডারের। পরের দিন টিম হোটেলের সামনে দেখা যায়, ক্র্যাচে ভর দিয়ে কোনমতে হাঁটছেন তিনি।
সেদিনই শঙ্কা জাগে ৩৩ বছর বয়সী এই তারকার খেলা নিয়ে। আফগান ম্যাচ শেষে টানা ৫ দিনের ছুটি পায় গোটা দল। ধরা হচ্ছিল এর ভেতরই সুস্থ হয়ে উঠবেন মাহমুদুল্লাহ।হয়েছেও তাই।
ছুটি শেষে রোববার দলের সঙ্গে অনুশীলনও করেছেন তিনি। বোলিং না করলেও ঘাম ঝরিয়েছেন ব্যাট হাতে। আশা জাগছিল ভারতের বিপক্ষে খেলা নিয়েও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন জানিয়েছেন, মাহমুদউল্লাহ'র খেলার সম্ভাবনা খুব কম। সুজনের কথায় ধোঁয়াশা থাকলেও দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু সোমবার নিশ্চিত করেন, মাহমুদুল্লাহ'র না খেলার বিষয়টি।
নান্নু বলেন, ‘বর্তমানে মাহমুদউল্লাহ যে অবস্থায় আছে তাতে কালকের ম্যাচ খেলতে পারবে না। কারণ ওর ফিটনেস আপ টু দ্য মার্ক না। যেহেতু ইনজুরি রয়েছে সেহেতু আর কিছু করার নেই। সে হিসেবে খেলার কোনও সম্ভাবনা নেই।’
অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের জায়গায় কে খেলবে সেটা নিশ্চিত না করলেও নান্নু বলেন, রিয়াদের জায়গায় একজন ব্যাটসম্যান নেয়া হবে। ভারতের বিপক্ষে না খেললেও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার আশা নির্বাচকদের। বাংলাদেশ স্কোয়াডে মোহাম্মদ মিঠুন ও সাব্বির রহমানদের মতো ব্যাটসম্যানরা রয়েছেন।
বিশ্বকাপে এ দুই দল প্রথম মুখোমুখি হয় ২০০৭ আসরে। প্রথম দেখাতেই শক্তিশালী ভারতকে পরাজিত করে বড় বিস্ময়ের জন্ম দেয় বাংলাদেশ।
এ পরাজয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। এরপর দুই দল পরস্পরের মুখোমুখি হয় ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে। এ দুই ম্যাচেই অবশ্য বড় জয় পায় ভারত। কিন্তু ডু অ ডাই ম্যাচের আগে কোনো দলই নিশ্চয়ই পরিসংখ্যান ঘাটতে চাইবে না। আজ জিতে শেষ চার নিশ্চিত করতে চাইবে। বাংলাদেশ চাইবে টিকে থাকতে।
এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে সমান ৭ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশের অবস্থান ৬ নাম্বারে। পরের দুটি ম্যাচ জিতলে পয়েন্ট দাঁড়াবে ১১তে। অন্যদিকে এক ম্যাচ হাতে রেখে ইংল্যান্ডের পয়েন্ট ১০। তাদের অবস্থান চারে। সুতরাং বাংলাদেশের শেষ দুটি ম্যাচে জিতলেই চলবে না, প্রার্থনা করতে হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংলিশদের পরাজয়। তাহলেই সেমিতে যেতে পারবে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ৮ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে একমাত্র দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়াই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে। তবে রোববার ভারত জিতলে তারাও শেষ চার নিশ্চিত করতে পারত। কিন্তু ইংলিশদের কাছে হেরে ৭ ম্যাচে ৫ জয়ে তাদের পয়েন্ট ১১, অবস্থান দ্বিতীয়। মজার ব্যাপার হলো- কোহলিরা যদি নিজেদের শেষ দুটি ম্যাচে হেরে যায়, তাহলে আসর থেকে বাদ পড়তে পারে তারাও।
এদিকে তিনে থাকা নিউজিল্যান্ডও ১১ পয়েন্ট অর্জন করেছে। তবে ইংলিশদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিততে না পারলে কেন উইলিয়ামসনদেরও কপালে জুটতে পারে দুর্গতি।
সেমির দৌড়ে টিকে থাকা আরেক দলের নাম পাকিস্তান। পাঁচে থাকা সরফরাজরা ৮ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট অর্জন করেছে। ফলে বাংলাদেশকে শেষ ম্যাচ হারাতে পারলে তাদেরও সম্ভাবনা টিকে থাকবে। তবে টাইগারদের সেমিতে উঠতে হলে ভারত ও পাকিস্তানকে হারানোর পাশাপাশি নেট রান রেটের দিকে নজর রাখতে হবে। কেননা, তখন রান রেটই হতে পারে একমাত্র নিয়ামক।
২০১৯ বিশ্বকাপের শেষ প্রান্তে এসে কঠিন সমীকরণের মুখোমুখি বাংলাদেশ। অথচ এত হিসেব-নিকেশের প্রয়োজনই হতো না, যদি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি জিততেন বা ভাগ্য খারাপ হওয়ায় সহজ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে না যেত।
তবে ৩০ জুন ভারত ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশের জন্য সমীকরণটা আরও জটিল হয়ে পড়েছে। ফলে আজ ও পরের ম্যাচ জিতলেই কেবল হবে না, নেট রান রেটও বাড়াতে হবে সাকিব-মুশফিকদের।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন