ম্যাচের শেষ বল, জোফরা আর্চারের বাউন্সারটা কাঁপিয়ে দিল ইকরাম আলী খিলের হেলমেট। ইংল্যান্ড-আফগানিস্তান পুরো ম্যাচের প্রতিচ্ছবি ধরে নিতে পারেন এটিকে!
ম্যানচেস্টারে মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের তিন কম চার শ রানের পরই ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছিল। আফগানিস্তান কত রানে হারে, সেটাই ছিল দেখার।
শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানকে ২৪৭ রানে থামিয়ে ১৫০ রানের বড় জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা উঠেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেও। আফগানদের ঠিক প্রাপ্তি না হলেও স্বস্তি যে, অন্তত অলআউট হয়নি। উইকেট পড়েছিল ৮টি।
ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক অধিনায়ক এউইন মরগান। তার মাত্র ৭১ বলে ১৪৮ রানের বিধ্বংসী ইনিংসই ইংল্যান্ডকে এনে দেয় বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ ৩৯৭ রান, ৬ উইকেটে। জনি বেয়ারস্টোর ৯০ ও জো রুটের ৮৮ রানের দুটি ইনিংসের অবদানও তাতে কম ছিল না।
তবে সবাই ম্যাচটা মনে রাখবে মরগানের কারণেই। এই ম্যাচেই যে ওয়ানডে ইতিহাসে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৭ ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশির ছক্কার (২৫) নিজেদের রেকর্ডটা ইংল্যান্ড লিখেছে নতুন করে। আফগানিস্তানের ইনিংস মিলিয়ে ছক্কা হয়েছে মোট ৩৩টি। এর আগে বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ৩১টির বেশি ছক্কা হয়নি।
ওল্ড ট্যাফোর্ডে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল সাবধানী। বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা জেমস ভিন্স উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি (৩১ বলে ২৬)। প্রথম পাওয়ার-প্লের শেষ ওভারে তাকে ফিরিয়ে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন অফ স্পিনার মুজিব উর রহমান।
আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো দ্বিতীয় উইকেটে জো রুটের সঙ্গে শতরানের জুটিতে এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। ৬১ বলে ফিফটি করা বেয়ারস্টো এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরি দিকেই। তবে সেঞ্চুরি থেকে ১০ রান দূরে থাকতে গুলবাদিন নাইব দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে ফেরান বেয়ারস্টোকে (৯৯ বলে ৯০)। ভাঙে ১২০ রানের জুটি।
বেয়ারস্টোর বিদায়ের পর ৩০তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নেমেই ঝড় তোলেন মরগান। তার ঝড়টা থেমে যেতে পারত অবশ্য ২৮ রানেই, যদি রশিদের বলে দৌলত জাদরান ক্যাচটা হাতে জমাতে পারতেন। ক্যাচ ফেলার চড়া মূল্য দিতে হয় আফগানদের। জীবন পাওয়ার পরের বলেই ছক্কা হাঁকান ইংলিশ অধিনায়ক।
মরগানের ছক্কা বৃষ্টি এরপর শুধু বেড়েছেই। অন্য প্রান্তে অনেকটা দর্শক হয়েই থাকতে হয়েছে রুটকে। মোহাম্মদ নবীকে ছক্কায় উড়িয়ে মরগান ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৬ বলে। পরের পঞ্চাশ করতে লেগেছে মাত্র ২১ বল। রশিদকে এক ওভারে তিন ছক্কা হাঁকানোর পথে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৫৭ বলে, বিশ্বকাপের ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম, ইংলিশ ব্যাটসম্যানের দ্রুততম।
সেঞ্চুরির পরও থামেনি মরগানের ঝড়। ১১ ছক্কায় সেঞ্চুরি স্পর্শ করার পর বল সীমানার ওপরে আছড়ে ফেলেন আরো ছয়বার। রশিদের এক ওভারে তিন ছক্কা হাঁকান আরো একবার। সব মিলিয়ে রশিদকে মেরেছেন ৭ ছক্কা!
তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পথে এগোচ্ছিলেন রুটও। তবে ৮৮ রানে তাকে ফেরান নাইব। একই ওভারে আফগান অধিনায়ক থামান মরগানের ঝড়ও। শেষ দিকে জস বাটলার, বেন স্টোকস দ্রুত ফিরলেও মঈন আলীর ৯ বলে ৪ ছক্কা ও এক চারে ৩১ রানের ক্যামিওতে বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে ইংল্যান্ড। পেছনে পড়ে কিছুদিন আগে কার্ডিফে বাংলাদেশের বিপক্ষে করা ৩৮৬ রান।
রশিদ ৯ ওভারে খরচ করেন ১১০ রান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। ওয়ানডে ইতিহাসেই রশিদের চেয়ে বেশি রান দেওয়ার ঘটনা আছে মাত্র একটি। দৌলত ও নাইব নেন ৩টি করে উইকেট, তবে ১০ ওভারে দৌলত দেন ৮৫ রান, নাইব ৬৮। মুজিবই যা একটু নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন, ১০ ওভারে দেন ৪৪ রান।
পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় আফগানিস্তান ১০৪ রানের মধ্যেই হারায় প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে। নূর আলী জাদরান মারেন ডাক, নাইব ৩৭ ও রহমত শাহ করেন ৪৬।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে সেরা সময়টা কাটায় আফগানরা। হাশমতউল্লাহ শাহিদি ও আসগর আফগান গড়েন ৯৪ রানের বড় জুটি। ২৮ রানে বেয়ারস্টোর হাতে জীবন পাওয়া আসগর করেন ৪৬ রান। তাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ।
সর্বোচ্চ ৭৬ রান করা হাশমতউল্লাহ বোল্ড হন আর্চারের বলে। আর্চার ৫২ রানে ও রশিদ ৬৬ রানে নেন ৩টি করে উইকেট। ৪০ রানে ২ উইকেট নেন মার্ক উড।
রাইজিংবিডি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন