টনটনে টানটান উত্তেজনা ছড়ানো এক ম্যাচই উপভোগ করলাম। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস চলাকালীন একটা সময়ে যেমন মনে হয়েছে রান ৪০০ হলেও হতে পারে তেমনি পাকিস্তানের ব্যাটিং দেখেও কখনো-সখনো মনে হয়েছে ম্যাচটা তারা জিতলেও জিততে পারে! সত্যি বলতে কি, পাকিস্তান দলটা এমনই। ‘আনপ্রেডিকটেবল’। অনেকবারই দেখে গেছে, হারা ম্যাচ ওরা জিতে গেছে আবার জেতা ম্যাচ হেরেছে!
অস্ট্রেলিয়ার দলীয় সংগ্রহ আরও হৃষ্টপুষ্ট হতে পারতো; কিন্তু সেটা হয়নি মোহাম্মদ আমিরের আগুনে বোলিংয়ে। পাক-পেসার প্রথমবার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট পেলেন। চলমান বিশ্বকাপে তিনি এখন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারের তালিকায় উঠে এসেছেন শীর্ষে (৩ ম্যাচে ১০ উইকেট)। তবে দিনটা তো পাকিস্তানের হয়নি। টনটনের ব্যাটিংস্বর্গে ৩০৭ রান তাড়া করে জেতার সামর্থ্য ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু ওই যে বললাম, এই দলটা এমনই। জেতার মতো ম্যাচ হেরে গেছে অনেকবার!
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে একমাত্র সফল আমির। তার বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ১০-২-৩০-৫। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে উজ্জ্বল ডেভিড ওয়ার্নার। অজি ওপেনার সেঞ্চুরি করেছেন। এমন একটা ইনিংস তার খেলার খুবই দরকার ছিল। কেননা, ভারত ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার হারের জন্য ওয়ার্নারের ধীরগতির ব্যাটিংকে দায়ি করছেন অনেকে। আবার আফগানিস্তান ম্যাচে তাকে ইংলিশ সমর্থকদের কাছ থেকে দুয়োধ্বনি শুনতে হয়েছে। প্রিয় প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন ওয়ার্নার। নিষিদ্ধ হওয়ার পর প্রথমবার সেঞ্চুরি করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে শেষ তিন ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন সেঞ্চুরি করেছেন বাঁহাতি এই অজি ব্যাটসম্যান।
পাকিস্তান শুরুতে কক্ষপথ হারালেও দারুণভাবে ম্যাচে ফিরেছিল। হাসান আলি, ওয়াহাব রিয়াজের মতো পেসার পুরোদস্তুও ব্যাটসম্যান বনে গিয়েছিলেন। এটা পাকিস্তানের জন্য ভালো দিক। সামনের ম্যাচগুলোতে কাজে লাগবে! ওপেনার ইমাম-উল-হক একমাত্র ফিফটি করেছেন। হাফিজ-সরফরাজের ব্যাটে রানের চাকা সচল রেখেছিল পাকিস্তান। বল-রান ব্যবধানও কমে এসেছিল। তবে উইকেট না থাকায় জয় পেল না তারা। ১৪৭ রানে ৫ উইকেট হারানো দল ৪৫.৪ ওভারে ২৬৬ রানে অলআউট। ৪১ রানে ম্যাচটি জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
পাকিস্তানের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অস্ট্রেলিয়া সঠিক পথেই আছে। তবে আমাদের ভাবনা বাংলাদেশ দলকে ঘিরে। চলমান বিশ্বকাপে শেষ চার খেলার প্রথম লক্ষ্য টাইগারদের। তবে শ্রীলংকা ম্যাচ বৃষ্টির পেটে যাওয়ার পরই সে স্বপ্ন ধূসর হয়ে গেছে। বাস্তবতা বলছে, সেমিফাইনাল খেলা অসম্ভব বাংলাদেশের জন্য! তবে কাগজে-কলমে কিছু সমীকরণ তো থাকছেই। এটাই আবার আশার আলো দেখাচ্ছে।
চার ম্যাচে ২ পয়েণ্ট নিয়ে টেবিলের সাতে বাংলাদেশ। বাকি আছে ৫ ম্যাচ। দেখা যাক, টাইগাররা বাকি ম্যাচগুলোতে কেমন খেলে। তবে এখন পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে শেষ চারে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের খেলার সম্ভাবনাই প্রবল। অবশ্য ক্রিকেট গোল বলের খেলা!
কখন কি হয়ে যায় তা কেউ আগ থেকে বলতে পারে না। শেষমেষ তাই বাংলাদেশ সেমিতে খেললে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না! টাইগারদের যে সে সামর্থ্য আছে, এ বিষয়ে নিশ্চয় কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না? করার কথাও তো না! তাই তো?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন