দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দাপুটে জয় দিয়ে উড়ন্ত সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে হেরে যখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠার লড়াইয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে নামতে যাবে, ঠিক এমন সময় বৃষ্টিতে ভেসে গেলো বাংলাদেশের স্বপ্ন। ফলে সেমিফাইনালে যেতে বাংলাদেশকে এখন পড়তে হচ্ছে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
মঙ্গলবার বৃষ্টিতে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ পন্ড হয়ে গেলো।দুই দলই ১ পয়েন্ট করে পেলো। এখন সমীকরণ অনেকটা এমন হয়েছে যে, শেষ চারে খেলার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে হয়তো পরের প্রতিটি ম্যাচেই জিততে হবে!
সোমবার রাত থেকেই বৃষ্টি ব্রিস্টলে। সকালে একবার থেমেও গিয়েছিলো। সকাল সাড়ে ১০টায় মাঠের দুই আম্পায়ার রিচার্ড ইলিনয়র্থ ও রিচার্ড কেটলবোরাক মাঠ পরিদর্শনে নামেন, টস করা যায় কিনা দেখতে। তার কিছুক্ষণ পর আবারও শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। দুপুর দেড়টায় দ্বিতীয় দফায় মাঠ পরিদর্শন শেষে জানিয়ে দেয়া হয় ম্যাচটি পরিত্যক্ত। যদিও কার্টেল ওভার হওয়ার জন্য ৪টা ১০ মিনিট পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১০ মিনিট) অপেক্ষা করার সময় ছিলো। কিন্তু ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ডের আউটফিল্ডে অনেক বেশি পানি জমে যায়। সে কারণে অনেক আগেই ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোচ স্টিভ রোডস বলেন, ‘আমরা খুবই হতাশ। আমাদের লক্ষ্যই ছিলো এ ম্যাচ থেকে পুরো ২ পয়েন্ট পাব। কিন্তু তা হলো না। ১ পয়েন্ট হারাতে হলো আমাদের। এটা খুবই হতাশার। তবে বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। এখন সামনের ম্যাচগুলোয় আমাদের জিততেই হবে। পরের ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে।’
ম্যাচ না হওয়ায় হতাশ শ্রীলঙ্কাও। এ মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের আগের ম্যাচটিও মাঠে গড়ায়নি। দুই ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট পায় লঙ্কানরা। সব মিলে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এখন তারা বাংলাদেশের ওপরেই থাকল। সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে বলেন, ‘চেয়েছিলাম ম্যাচটি যাতে মাঠে গড়ায়। আমরা খেলতেই এখানে এসেছিলাম। কিন্তু হলো না। কী আর করার। এখনো আমরা আশা রাখছি শেষ চারে যাওয়ার।’
এবারের বিশ্বকাপের ফরম্যাটটাই অন্য রকম। প্রতিটি দল প্রতিটি দলের সঙ্গে খেলবে। কখন কোন ম্যাচে ‘অঘটন’ ঘটে বলা যায় না। তাই এখনো আশা ছাড়ছেন না কোচ স্টিভ রোডস। তিনি বলেন, ‘জানি না এখন সেমিফাইনালের রাস্তাটা কতটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে গেল। তবে এটা অনেক বড় টুর্নামেন্ট। এখনো অনেক ম্যাচ বাকি আছে। অনেক কিছুই ঘটতে পারে।’
বাংলাদেশের সামনে এখন আরও পাঁচ ম্যাচ আছে। পরের ম্যাচে টনটনে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ ছাড়া আফগানিস্তান, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে হবে।
তবে এবারের বিশ্বকাপে বৃষ্টি বাধায় আরও অনেক ম্যাচই পন্ড হতে পারে। স্টিভ রোডস বলেন, ‘ইংল্যান্ডের আবহাওয়া নিয়ে কিছু বলার নেই। কখন বৃষ্টি হবে কেউ জানে না। এ নিয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজকরাই যেন সমস্যায় পড়েছেন।’ সে কারণেই হয়তো এখনো আশা ছাড়ছেন না কোচ। এর আগে বৃষ্টি অনেকবারই বাংলাদেশকে সুখবর দিয়েছে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে যদিও অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল, তবে নেপথ্যে ছিল ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে পাওয়া ১ পয়েন্ট। ২০১৭ সালে এই যুক্তরাজ্যের মাটিতেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বৃষ্টি আবারও আশীর্বাদ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে। প্রথমে ব্যাট করে ওভালে বাংলাদেশ মাত্র ১৮২ রানে অলআউট হওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া মাত্র ১ উইকেটে করেছিল ৮২ রান। যেন নিশ্চিত হেরে যাওয়া সেই ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় ১ পয়েন্ট পায় বাংলাদেশ। তারপর কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালের টিকিট পায় টাইগাররা। এবার সেই বৃষ্টিই যেন শক্র হয়ে গেল!
তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের হারানোর কিছু নেই।প্রতিটি ম্যাচকেই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। আর নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে সেমিফাইনালে পৌছানোটা কঠিন হবে না মাশরাফীদের জন্য।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন