ক্রমেই সত্যিকারের জায়ান্ট দলে পরিণত হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। টাইগাররা ইতোপূর্বে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয়ের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। এ সময় তারা হোম ও এ্যাওয়ে সিরিজে বিশ্ব সেরা দলকে পরাজিতও করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত জয় করতে পারেনি তিন বা চার দলের অংশগ্রহনে কোনো সিরিজের শিরোপা। এ পর্যন্ত তারা একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও টি ২০ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলেছে ছয়বার। কিন্তু ফাইনাল খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। জয় করতে পারেনি ত্রিদেশীয় বা এর বেশি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টের শিরোপা।
তবে এবার আয়ারল্যান্ড সফরে ত্রিদেশীয় সিরিজের গ্রুপ পর্বে বেশ শক্তিশালী পারফর্মেন্স দেখাচ্ছে টাইগাররা। সপ্তমবারের মতো এমন টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছেছে তারা। আজ ডাবলিনে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোকাবেলা করবে মাশরাফি বাহিনী।
এর আগে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার বিপক্ষে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। এই প্রথম ত্রিদেশীয় ইভেন্টের ফাইনালে ক্যারিবীয়দের মোকাবেলা করতে যাচ্ছে টাইগাররা। এই ম্যাচে কি বাংলাদেশ জয়লাভের মাধ্যমে দুর্ভ্যাগ্য দূর করতে পারবে?
সপ্তম টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার আগে বাংলাদেশ দলের ছয়টি ফাইনালের পরিসংখ্যান নিচে দেয়া হলো:
ত্রিদেশীয় ওডিআই টুর্নামেন্ট, ১৬ জানুয়ারি ২০০৯ ঢাকা (শ্রীলংকার কাছে ২ উইকেটে হার) : ২০০৯ সালে শ্রীলংকার কাছে ২ উইকেটের হৃদয় বিদারক ওই হারটি দিয়েই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের পরাজয়ের ধারা। এরপর থেকে ওই হারের গন্ডিতেই ঘুরপাক খেতে হয়েছে টাইগার দলকে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় ওই সিরিজে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা ছাড়া বাকী দল হিসেবে অংশ নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
লো স্কোরিং ম্যাচে টাইগার দলের ১৫২ রান সংগ্রহ করা স্বাগতিক দলের হয়ে সর্বাধিক ৪৩ রান করেছিলেন রকিবুল হাসান। ম্যাচে বাংলাদেশ যে হারবে সেটি প্রত্যাশিতই ছিল। শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কানায় কানায় পুর্ন দর্শকদের উপস্থিতিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ যখন ৫ রানের বিপরীতে ৬ উইকেট সংগ্রহ করেছিল তখন সবাই আশা করছিল প্রথমবারের মত সিরিজ জিততে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কুমার সাঙ্গাকারা এরপর ৫৯ রান সংগ্রহ করে লংকান ইনিংসটি মেরামত করেন। এরপর পারভিজ মাহরুফের অপরাজিত ৩৮ রান এবং মুত্তিয়া মুরালিধারনের ১৬ বলে হার না মানা ৩৩ রানে ভর করে টাইগারদের জয় ছিনিয়ে নেয় সফরকারী শ্রীলংকা।
এশিয়া কাপ, ২২ মার্চ ২০১২ ঢাকা (পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হার) : শ্রীলংকার কাছে হৃদয় বিদারক ২ উইকেটে পরাজয়ের তিন বছর পর বাংলাদেশ ২য় ফাইনালে উঠে জয়ের আভাস দিচ্ছিল। কিন্তু এই দফায় পাকিস্তানের কাছে তারা হার মানতে বাধ্য হয় দুই রানে। এই হার ছিল আরো বেশী হৃদয় বিদারক। এই হার বাংলাদেশ শিবিরকে এতটাই নাড়া দিয়েছিল যে টাইগার দলের সবচেয়ে শক্তিশালী মনোবলের অধিকারী সাকিব আল হাসানকের দেখা গেছে শিশুদের মত কাঁদতে।
ওই আসরে গ্রুপ পর্বে ভারত ও শ্রীলংকার মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। অবশ্য গ্রুপ পর্বেও পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল টাইগাররা। ম্যাচে জয়ের জন্য বাংলাদেশকে ২৩৫ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় পাকিস্তান। তামিম ইকবালের ৬০ ও সাকিব আল হাসানের ৬৮ রানের সংগ্রহে ওই লক্ষ্যকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে বাংলাদেশ। এরপর নিয়মিত উইকেট পতনের পরও জয়ের পথেই ছিল স্বাগতিকরা। শেষ ওভারে এসে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৯ রান। ১৭ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন নির্ভরযোগ্য ব্যাাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তিনি। মাত্র দুই রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ।
এশিয়া কাপ, ৬ মার্চ ২০১৬ ঢাকা (ভারতের কাছে ৮ উইকেটে পরাজয়) : এই ফাইনাল ম্যাচটি ছিল একপেশে। প্রথমবারের মত টি২০ ক্রিকেটের ফাইনালে উঠে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। টি২০ বিশ্বকাপের আসরকে সামনে রেখে এশিয়া কাপের ওই টুর্নামেন্টটিকে ৫০ ওভারের পরিবর্তে টি২০ ফর্মেটে নিয়ে আসা হয়েছিল। বৃষ্টির কারণে কার্টেল ওভারে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ছিলনা কোন নাটকীয়তা। ১৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ১২০ রান সংগ্রহ করে। যা ভারতের বিশ্বকাঁপানো লাইনআপের সামনে ছিল একেবারেই অপ্রতুল। মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৩.৫ ওভারে লক্ষ্যে পৌছে যায় ভারত।
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ঢাকা (শ্রীলংকার কাছে ৭৯ রানে হার) : এই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়েছিল শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ে। ওই আসরের ফাইনালেও শ্রীলংকার কাছে পরাজিত হয় বাংলাদেশ।
আসরে ফেভারিটের তকমা ছিল স্বাগতিক বাংলাদেশের গায়ে। কারণ তারা এর আগে জয় তুলে নিয়েছিল শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। শুরুতে জিম্বাবুয়েকে আট উইকেটে হারানো বাংলাদেশ শ্রীলংকাকে হারিয়েছিল ১৬৩ রানের বিশাল ব্যবধানে। এরপর জিম্বাবুয়েকে ফের ৯৩ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনাল নিশ্চিত করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে ফিরতি মোকাবেলায় শ্রীলংকার কাছে ১০ উইকেটে পরাজিত হবার কারণে আন্ডারডগ হিসেবেই ফাইনালে খেলতে নামে টাইগাররা। কিন্তু সফরকারী দলটিকে ২২১ রানে আটকে দিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে বাংলাদেশ। সবাই আশা করেছিল এই দফায় জয় পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের হতাশ করে ৪১.১ ওভারেই ১৪২ রানে অল আউট হয়ে যায় টাইগাররা।
নিদাহাস ট্রফি টি২০ ফাইনাল, ১৮ মার্চ ২০১৮, কলোম্বো (ভারতের কাছে ৪ উইকেটে হার) : এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য আরো একটি হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়া ঘটনা। যেখানে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জয় করেছিল ভারত। ম্যাচটি জয়ের মূল নায়ক ছিলেন দিনেশ কার্তিক। তার ৮ বলে ২৯ রানের ইনিংসটিই মুলত ভারতীয়দের জয়ে মুল ভুমিকা পালন করেছে। যদিও শেষ বল পর্যন্ত ব্যাট করতে হয়েছে তাদের। ওই বলের বিপরীতে জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৫ রান। কিন্তু বলটি সীমানা ছাড়া করে ছয় রান সংগ্রহ করে বিজয় ছিনিয়ে নেন তিনি।
এর আগে সাব্বির রহমানের ৫০ বলে ৭৭ রানের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৬৬ রান। জবাবে ভারতীয় দলটিকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন রোহিত শর্মা। তিনি ৫৬ রান সংগ্রহ করে দলকে এগিয়ে দেয়ার পর অসাধারন এক সমাপ্তি টানেন দিনেশ কার্তিক। ফাইনাল সহ ওই আসরে সর্বমোট তিনবার বাংলাদেশকে হারায় ভারত। তবে স্বাগতিক শ্রীলংকাকে দুইবার হারিয়ে ফাইনালের টিকিট লাভ করেছিল বাংলাদেশ। তন্মধ্যে ২১৫ রানের সর্বাধিক লক্ষ্য তাড়া করে অসাধরন একটি জয়ও রয়েছে টাইগারদের। যেখানে ৩৫ বলে অপরাজিত ৭২ রান সংগ্রহ করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। এটিই ছিল টি২০ ক্রিকেটে তার সেরা ব্যাটিং।
এশিয়া কাপ ফাইনাল, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ দুবাই (ভারতের কাছে ৩ উইকেটে পরাজয়) : এটি ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের দ্বিতীয় ফাইনাল জয়। যে ম্যাচে পরাজিত হবার ফলে ছয়টি আসর থেকে শিরোপা বঞ্চিত হয় টাইগাররা। ওই টুর্নামেন্টে ভারত ছাড়া বাকী সবগুলো দলকেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। দলের মূল খেলোয়াড় সাকিব আল হাসানকে বাইরে রেখেই আসরে অংশ নিয়েছিল টাইগাররা। তার আঙ্গুলে তখন ইনজুরি ছিল। আসরের মাঝপথে ইনজুরিতে পড়েন আরেক গুরুত্বপুর্ন তারকা তামিম ইকবাল। যে কারণে মাঝপথে দেশে ফিরে আসতে হয় তাকেও।
ফাইনাল ওই ম্যাচে লিটন দাসের ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে দারুন এক সুচনা করে টাইগাররা। ১২১ বলে ১১৭ রান সংগ্রহ করেন লিটন। তারপরও দলের বাকী ব্যাটসম্যানদের ব্যার্থতায় ৪৮.৩ ওভারে ২২২ রানে অল আউট হয়ে যায় টাইগাররা।
জবাবে ভারতকেও ধুকতে হয়েছে টাইগার বোলারদের সামনে। রোহিত শর্মার ৪৮ রানের সংগ্রহই ছিল দলের সর্বাধিক। হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেনি কোন ভারতীয়। তবে শেষ পর্যন্ত ঠিকই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় ভারত। শেষ বলে কেদার যাদবের বাউন্ডারী স্পর্শ করা শটের কল্যানে জয় নিশ্চিত হয়ে ভারতীয়দের।
সূত্র : বাসস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন