গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট এবারের আসরে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি। রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ডায়নামাইটস; তারকা ঠাসা দল দুটি মুখোমুখি হওয়ায় ম্যাচটিকে বলা হচ্ছিল ফাইনালের আগেই ফাইনাল। এমন ম্যাচে এসে সাকিবের ঢাকার বিপক্ষে কুলিয়ে উঠতে পারল না মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ফাইনালের আগেই ফাইনাল জিতে নিল ঢাকা।
প্রথমে বল হাতে শাসন করা ঢাকা ডায়নামাইটস পরে ব্যাট হাতেও দাপট দেখিয়ে ম্যাচ জিতে নিল – উইকেটে। যে জয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে উঠে গেল সাকিব আল হাসানের দল। এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ঘরোয়া এই টি-টোয়েন্টি আসরের ফাইনালে উঠল ঢাকা। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে শিরোপা জেতার লড়াইয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে ঢাকা।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা রংপুর রাইডার্স উড়ন্ত সূচনা পাওয়ার পরও নিজেদের স্কোর বড় করতে পারেনি। ১৯.৪ ওভারে ১৪২ রানেই অলআউট হয়ে যায় মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। জবাবে দুর্বার ব্যাটিং করতে না পারলেও ১৬.৪ ওভারে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ঢাকা ডায়নামাইটস।
জয়ের লক্ষ্য ব্যাটিং করতে নেমে রংপুরের মতো দাপুটে শুরু করতে পারেনি ঢাকা ডায়নামাইটস। দলীয় ৪ রানেই ওপেনার উপুল থারাঙ্গাকে সাজঘর দেখিয়ে দেন রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। যদিও প্রথম উইকেট হারানোর ব্যাপারটি গায়েই লাগায়নি ঢাকা। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মিরপুরের ২২ গজে ঝড় তোলেন সুনীল নারিন ও রনি তালুকদার। এদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৩.৫ ওভারে ৪১ রান পেয়ে যায় ঢাকা।
রংপুরের উদ্বোধনী জুটির মতো ঢাকার এই জুটিও বেশি সময় দাপট দেখাতে পারেনি। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে নাজমুল ইসলাম অপুর বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন ৮ বলে ৩টি চারে ১৪ রান করা নারিন। রনি তালুকদারের সঙ্গে যোগ দিয়ে নতুন করে দাপট দেখাতে শুরু করেন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু তাদের জুটিও দীর্ঘ হয়নি। ২০ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৩ রান করে বেনি হাওয়েলে দুর্বল একটি বলে বোল্ড হয়ে যান সাকিব।
লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের একটি ডেলিভারি সাকিবের পায়ে লেগে স্টাম্প ভেঙে দেয়। কিছুক্ষণ পর ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউটের শিকার হতে হয় রনিকে। এরআগে ২৪ বলে ৪টি চারে ঢাকার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৫ উইকেট হারালেও আর বিপদ হয়নি ঢাকার। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেন নুরুল হাসান সোহান ও ম্যাচসেরা আন্দ্রে রাসেল। সোহান ৯ ও রাসেল ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন।
এরআগে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুর রাইডার্স চমক নিয়ে মাঠে নামে। যদিও শুরুতে সেটা চমক ছিল না, একটি পরবির্তন ছিল মাত্র। ক্রিস গেইলের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন রংপুরের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা নাদিফ চৌধুরী। মেহেদী মারুফের জায়গায় সুযোগ পাওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন। ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলকে একপাশে রেখে খুনে স্টাইলে ব্যাটিং করতে থাকেন নাদিফ।
নাদিফের টর্নেডো স্টাইলের ব্যাটিংয়ে ৪ ওভারে ৪২ রানে পৌঁছে যায় রংপুর। চতুর্থ ওভারে নাদিফের ব্যাটিং ঝড়ের কবলে পড়তে হয় ঢাকার স্পিনার শুভাগত হোমকে। টানা তিন ছক্কা মেরে প্রতিপক্ষ ঢাকাকে চাপের মধ্যে ফেলে দেন রংপুরের এই ওপেনার। কিন্তু ওভারেই বাধে বিপত্তি। শুভাগতর করা চতুর্থ ওভারের শেষ বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কাইরন পোলার্ডের হাতে ধরা পড়েন ১২ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা নাদিফ।
ওপেনারকে হারিয়েই যেন দিক ভুলে যায় রংপুর। পরের ওভারের প্রথম বলেই খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ পাঠিয়ে বিদায় নেন পুরো বিপিএলে অনুজ্জ্বল থেকে যাওয়া গেইল। সাজঘরে ফেরার আগে ১৩ বলে ২টি ছক্কায় ১৫ রান করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই মহাতারকা। এতটুকু হলেও ঠিক ছিল। কিন্তু রুবেলের করা দ্বিতীয় বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন পুরো বিপিএলে রংপুরকে পথ দেখানো রাইলি রুশো।
৩ বলে ৩ উইকেটে হারানোর চাপ আর কাটিয়ে ওঠা হয়নি রংপুরের। পরের ব্যাটসম্যানরা উইকেটে গেছেন আর ফিরেছেন। বেনি হাওয়েল, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, নাহিদুল ইসলামরা দলের উপকারে আসতে পারেননি। এরমাঝেও কিছুটা সময় ব্যাট ঘুরিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। ২৭ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ রান রান দলকে কিছুটা পথ এগিয়ে দিয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
মিঠুন ফেরার পর যা করার, রবি বোপারাকে একাই করতে হয়েছে। ডানহাতি এই ইংলিশ অলরাউন্ডার লম্বা সময়ের জন্য সঙ্গী হিসেবে কাউকেই পাননি। এক পাশ আগলে রেখে প্রায় শেষপর্যন্ত ব্যাটিং করে গেছেন বোপারা। মূলত তার ব্যাটেই লড়াইয়ের পুঁজি পায় রংপুর। ২০তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৪৩ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৪৯ রান করেন বোপারা।
রংপুরের ইনিংসে ধ্বস নামানো ঢাকার পেসার রুবেল হোসেন ২৩ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। এ ছাড়া আন্দ্রে রাসেল ২টি এবং শুভাগত ও সাকিব একটি করে উইকেট নেন।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন