চুক্তির আওতায় থাকা নারী ফুটবলাররা পাঁচ বছর বিয়ে করতে পারবে না- নারী ফুটবলারদের নিয়ে বাফুফের নারী ফুটবল উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরনের এমন বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
উনার এমন অপরিণত কথায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকেই। কেউ আবার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাহফুজা আক্তার কিরন বলেন, ‘চুক্তির আওতায় থাকা নারী ফুটবলাররা পাঁচ বছর বিয়ে করতে পারবে না।
এমনকি ক’দিনের মধ্যে ক্যাম্পে থাকা নারী ফুটবলারদের অভিভাবকদের ডেকে এনে আরও কিছু শর্তাবলী যুক্ত করে চুক্তি সই করানোর পরিকল্পনা করছে বাফুফে। যদিও বর্তমান ক্যাম্পে থাকা অনেক নারী ফুটবলারের বয়সই ১৫-১৮। রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ১৮ বছর ও তার ঊর্ধ্ব বয়সী মেয়েরা বিয়ে করতে পারবে। কিন্তু বাফুফে রাষ্ট্রীয় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলিই যেন দেখাল।
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলে অগ্রণী ভূমিকা রাখা নারী ক্রীড়াবিদ ও রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুন নাহার ডানা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদিকার কথা, ‘কোনো সংস্থারই উচিত নয় কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ
। এটা একটা সাধারণ নির্দেশনা থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে কাগজ-কলম করে চুক্তি করা যায় না।’ পাশাপাশি তিনি নারীদের নিরাপত্তার কথাও বলেন, ‘সম্প্রতি ভারোত্তোলনে একটি কেলেংকারির ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী ক্রীড়াবিদরা শঙ্কিত।
এমন সময় ফুটবল ফেডারেশনের এমন পদক্ষেপ অন্য ক্রীড়াবিদ ও ফেডারেশনগুলোর জন্য চাপ হিসেবে কাজ করতে পারে।’ ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেয়ে খেলোয়াড়দের শিক্ষার বিষয়ে জোর দিয়ে ডানা বলেন, ‘বাফুফে যদি মেয়েদের পড়াশোনা করায়, মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে পারে- তাহলে মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। অন্য কারও কথায় প্ররোচিত হবে না।’
সাবেক তারকা অ্যাথলেট নেলী জেসমিনের কথা, ‘রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ম রয়েছে যে, ১৮ বছরের নিচে কোনো মেয়েকে বিয়ে করানো যাবে না। কিন্তু বাফুফে যে আইন করেছে তার ফাঁদে পড়তে পারে ১৮ বয়সের বেশি ফুটবলাররাও। যতই বলকু না কেন, বেতন কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য তারা চুক্তি করছে। কিন্তু বিষয়টি সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো হবে না।’
সাবেক তারকা ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু বাফুফের এই পরিকল্পনাকে আল্লামা শফীর বক্তব্যের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম আল্লামা শফী বলেছেন, মেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠানো যাবে না। ঠিক তেমনি বাফুফের চুক্তির মারপ্যাঁচে পড়ে ২০-২১ বছর বা এর বেশি বয়সে গিয়েও পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কারণে মেয়েরা বিয়ে করতে পারবে না।
ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন পুরুষ ফুটবলাররা। তবে নারী ফুটবলারদের সাফল্য দিয়েই চলছে তারা। মারিয়া মান্ডা, মৌসুমীদের সাফল্যেই পৃষ্ঠপোষকরা আসছে বাফুফেতে, যা দিয়ে চলছে বাফুফে। তাই নারী ফুটবলারদের মাসিক বেতনের আওতায় আনতে গিয়ে উঠতি বয়সী ফুটবলারদের নানা আইনে বাঁধতে যাচ্ছে বাফুফে।
সূত্রে জানা গেছে, তিন ক্যাটাগরিতে নারী ফুটবলারদের বেতন দেয়া হবে। সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি মাসিক বেতন মাত্র ১০ হাজার টাকা, যা বর্তমান সমাজ ও বাজারমূল্যে খুবই কম। এই নামমাত্র পারিশ্রমিক দিয়ে বাফুফে নারী ফুটবলারদের অনেক অধিকার হরণের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন