আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা ম্যাচের ক্লান্তি আর ঘাম নিয়েই আজ শুক্রবার সুপার ফোরের ম্যাচ খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। কিন্তু শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ রীতি মতো ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত। আগের দিন আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরুটা যেমন শোচনীয়, আজ তার চেয়েও বেশি শোচনীয়। ৬৫ রানের মধ্যেই হারিয়ে ফেলেছে ৫ উইকেট। একে একে ফিরে গেছেন লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিকুর রহীম। এই প্রতিবেদন লেখার সময় বাংলাদেশের রান ২৫ ওভারে ৫ উইকেটে ৭৮।
আগের দিনের ম্যাচ খেলার ক্লান্তি আছে। তবে মাশরাফিদের সেই ক্লান্তি কিছুটা হালকা করার সুযোগ করে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। সেটাও টুর্নামেন্টের ব্যতিক্রমী এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। এশিয়া কাপের গ্রুপপর্বের ৬ ম্যাচেই টস জয়ী দল প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছে। আজ আবুধাবিতে সুপার ফোরের অন্য ম্যাচটিতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছে আফগানিস্তান।
এই তথ্য বলে টস জেতা মানেই প্রথমে ব্যাটিং। কিন্তু রোহিত ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে টস জিতেও তিনি প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন বাংলাদেশকে। যার অর্থ, বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডাররা বাড়তি সাড়ে ৩ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু বোলাররা যদি লড়াই করার মতো পুঁজিই না পান, তাহলে বাড়তি বিশ্রামে লাভটা কি!
লিটন-নাজমুল শুরুটা করেছিলেন খুবই ধীরেসুস্থে। হয়তো পরিকল্পনা ছিল উইকেট ধরে রেখে খেলার। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। দলকে ১৫ রানে রেখে প্রথমে ফিরে যান লিটন দাস। ১৬ বলে ৭ রান করে তিনি ভুবনেশ্বর কুমারের শিকার হয়েছেন। তার ঠিক পরের ওভারেই প্যাভিলিয়নমুখী হন নাজমুল হোসেন শান্ত। দলীয় রান তখন ১৭।
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফুলঝুরি ফুটিয়েই জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছেন বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ওয়ানডেতে প্রথম দুই ম্যাচেই ব্যর্থ। বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে করেছিলেন ১৩ বলে ৭ রান। ভারতের বিপক্ষেও সেই ৭ রান করেই আউট। আজ বল খেলেছেন আরও একটি বেশি। ১৪ বলে ৭ করে নিজের উইকেট দিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহকে।
যুগপত ২ উইকেট হারানোর পরজুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম। দুজনকে বেশ আত্মবিশ্বাসীই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ভালো খেলতে গিয়েই নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন সাকিব। রবীন্দ্র জাদেজাকে আগের দুই বলে ৪ মারা সাকিব পরের বলটিতেও মারতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তার শট আশ্রয় নেয় স্কয়ার লেগ ফিল্ডার শেখর ধাওয়ানের হাতে। উচ্চাবিলাসী শট খেলতে গিয়ে সাকিব বাড়িয়েছেন দলের বিপদ। ১২ বলে ১৭ রান করে ফিরে গেছেন তিনি।
সাকিবের বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই প্রায় যুগপত ফিরে গেছেন মোহাম্মদ মিঠুন ও মুশফিক। রবীন্দ্র জাদেজার ডেলিভারিটি ডিফেন্স করতে গিয়েই নিজের এবং দলের বিপদ ডেকে আনেন মিঠুন। হয়েছেন এলবিডব্লুও। নষ্ট করেছেন একটি মূলবান রিভিউও। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রিপ্লেতে পরিস্কার বল তার ব্যাটে লাগার আগেই প্যাডে আঘাত হেনেছে।
মিঠুন ধাক্কার শোকের মধ্যেই আসে আরও বড় শোকটি। এবার যে আউট বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে পাজরের চোট নিয়েও ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন। তাই ধ্বংসযজ্ঞের পরও তাকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু মুশফিক এদিন সেই প্রত্যাশায় জল ঢেলেছেন নিজের উইকেটটি বিসর্জন দিয়ে!
জাদেজাকে অপ্রয়োজনীয় রিভার্সসুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন চাহালের হাতে। ফিরেছেন ৪৫ বলে ২১ রান করে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় মাহমুদউল্লাহ ১১ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ব্যাট করছিলেন ৫ রানে।
দুবাইয়ে বাংলাদেশ সুপার ফোরের এই ম্যাচটাতে মাঠে নেমেছে দলে দুটি পরিবর্তন এনে। পরিবর্তন দুটি প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিতে দলীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল মুশফিকুর রহীম ও মোস্তাফিজুর রহমানকে।
আজ ভারতের বিপক্ষে প্রত্যাশামতোই তারা দলে ফিরেছেন। তাদেরকে জায়গা দিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা একাদশ থেকে বাদ পড়েছেন মুমিনুল হক ও আবু হায়দার রনি। মুশফিকের বিশ্রামের কারণে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মুমিনুল। কিন্তু প্রথম সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। দীর্ঘদিন পর ওয়ানডে খেলতে নেমে মাত্র ৯ রান করেই আউট হয়ে যান তিনি।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ব্যর্থ হন ম্যাচটিতে সুযোগ পাওয়া আরেক ব্যাটসম্যান নবাগত নাজমুল হোসেন শান্তও। তিনি করেন ৭ রান। কিন্তু মুমিনুলকে হারিয়ে তিনি টিকে গেছেন ওপেনিংয়ে খেলার বিবেচনায়। তামিম ইকবাল নেই। তার পরিবর্তে লিটন দাসের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্তই ওপেন করবেন। আফগানিস্তানের ম্যাচেও তাই করেছেন। মুমিনুলও ওপেন করতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞ ওপেনার হিসেবে নবাগত নাজমুলের উপরেই আস্থা রেখেছেন বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট।
ওদিকে মোস্তাফিজের বিশ্রামের সুযোগেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয়েছে আবু হায়দার রনির। আজ মোস্তাফিজ ফেরায় তাই বাদও পড়তে হয়েছে তাকেই।
বাংলাদেশ একাদশ : লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারত একাদশ : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শেখর ধাওয়ান, আম্বাতি রাইডু, দিনেশ কার্তিক, মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক), কেদার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, ভুবনেশ্বর কুমার, কুলদীপ যাদব, জাসপ্রিত বুমরাহ ও ইউজভেন্দ্রা চাহাল।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন