সুখ স্মৃতিটায় এখনো এতটুকু ধুলো জমেনি। সেদিনের মতোই চকচকে, ঝকঝকে। এখনো চোখ বুঝলেই বাংলাদেশের কিশোরী ফুটবলাররা সমান আভায় দেখতে পান গত ডিসেম্বরের শীতল বিকেলের সেই আনন্দ-নৃত্যের দৃশ্য। মাত্রই তো ৮ মাস আগের কথা।
এই তো গত বছরের ডিসেম্বরে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম বারের মতো টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ৮ মাসের ব্যবধানে আবারও সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ। শিরোপার পথে এবারও শেষ বাধা সেই ভারত।
আগামীকাল শনিবার ভুটানের থিম্পুতে টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেই ভারতেরই মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। মারিয়া-তহুরারা পারবেন ভারতকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো শিরোপা ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে? বাংলাদেশের কিশোরীরা শুধু আত্মবিশ্বাসীই নয়। ফাইনাল যুদ্ধে নামার আগে মারিয়া-তহুরারা রীতিমতো বল ছুঁয়ে ‘শপথ নিলেন’ ভারতকে হারানোর।
বল ছুঁয়ে সবাই এক সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করলেন, ‘আমাদের আসল পরীক্ষা ফাইনালে। এই পরীক্ষায় আমাদের পাশ করতেই হবে। জাতিকে আরেকটি বিজয়ানন্দ উপহার দিতে হবে। ঝড়ের গতিতে এতদূর এসে থামা যাবে না। ট্রফি আমাদের হাতে আছে। এটা হাতেই রেখে দিতে হবে।’
এমন ধনকুবন্ধ সাহসী পণ তারাই করতে পারে যাদের সামর্থ আছে। সত্যিকার অর্থেই ভারতকে হারানোর সামর্থ বাংলাদেশের কিশোরীদের ভালো মতোই আছে। গত ডিসেম্বরের ওই আসরে শুধু ফাইনালেই নয়, গ্রুপপর্বেও ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। বরং গ্রুপপর্বের জয়টা ছিল আরও বড়, ৩-০ গোলের।
এক আসরেই দুইবার হারানো। তাহলে এবার কেন নয়? বরং মাঠের পারফরম্যান্স তো এবার বাংলাদেশী কিশোরীদের মাথায়ই পরিয়ে দিচ্ছে ফেভারিটের মুকুট। ভুটানে ফাইনালের পথে ৩ ম্যাচে প্রতিপক্ষদের মোট ২২ গোল দিয়েছে বাংলাদেশের কিশোরীরা। বিপরীতে হজম করেনি একটিও। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ১৪-০ তে ভাসানোর পর নেপালকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে। সর্বশেষ সেমিফা্ইনালে স্বাগতিক ভুটানকেও ভাসিয়েছে ৫-০ গোলে।
অবশ্য ভারতও ফেভারিট তকমার মর্যাদা রেখেই পা রেখেছে ফাইনালে। ৩ ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষকে দিয়েছে ১৫ গোল। বিপরীতে খেয়েছে ১টি। কিন্তু এই তথ্যটাই বলে দিচ্ছে, শনিবারের ফাইনালে বাংলাদেশই ফেভারিট। বাংলাদেশী কিশোরীদের নৈপুণ্যকে ভারতের উপরে তুলে ধরছে আরও একটি বিষয়। যে নেপালকে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হারিয়েছিল, পরশু সেমিফাইনালে সেই নেপালের বিপক্ষে ভারত জিতেছে কষ্টে, ২-১ গোলে।
এখন লক্ষ্য দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্স ধরে রেখে ফাইনালে আরেকবার ভারতবধ করা। লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের কিশোরীরা নিয়ে ফেললেন শপথও। টুর্নামেন্টজুড়ে পায়ের অবিশ্বাস্য জাদু দেখিয়ে আসছেন যারা, তাদের ‘শপথ’ নিশ্চয় বিফলে যাবে না। যেতে পারে না!
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন