‘গোল দাও, উৎসব করো’—ব্যাপারটা যেন একেবারে পানসে হয়ে গেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৫ মহিলা ফুটবল দলের জন্য। গতকাল থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে রীতিমতো বিধ্বস্ত করে গুনে গুনে ১৪ গোল দিয়েছে শামসুন্নাহাররা। মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের জয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট একজন ফুটবলারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। আটজনই গোল দিয়েছে কাল!
নিয়মিত স্ট্রাইকার তহুরা তো গোল দিয়েছেই। কখনো ওভারল্যাপ করে দুর্দান্ত গোল করছে আনাই মগিনি। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করেছে ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন। মনিকা চাকমার ফ্রি কিক থেকে দেওয়া গোলটাও ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। শামসুন্নাহার জুনিয়র করেছে হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল। তহুরা, আনাই, সাজেদা ২টি করে গোল করেছে। এ ছাড়া মারিয়া, মনিকা, আঁখি ও শামসুন্নাহার সিনিয়র করেছে ১টি করে গোল।
এমন নয় যে এই টুর্নামেন্টেই প্রথম আটজন খেলোয়াড় গোল পেয়েছে। বয়সভিত্তিক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে গত কয়েক বছরে এভাবেই সাফল্য আসছে বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে। এর মধ্যে গত মার্চে হংকংয়ে জকি ক্লাব অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্টে দলের বেশির ভাগ ফুটবলারই গোল উৎসবে মেতে ওঠে। ওই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল মালয়েশিয়া, ইরান, হংকং ও বাংলাদেশ। তিন ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রতিপক্ষের জালে গোল দিয়েছিল ২৪টি! হয়েছিল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে জয়ের ব্যবধান ছিল ১০-১। ওই ম্যাচে গোল পেয়েছিল ৭ জন! পরের ম্যাচে ইরানের মেয়েদের বিধ্বস্ত করেছিল ৮-১ গোলে। ওই ম্যাচে গোল করে চারজন ফুটবলার। হ্যাটট্রিক করেছিল শামসুন্নাহার জুনিয়র ও তহুরা। যমজ বোন আনাই ও আনুচিং করেছিল ১টি করে গোল। টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে হংকংকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে তহুরা হ্যাটট্রিক করে, শামসুন্নাহার সিনিয়র, সাজেদা ও আনুচিং করে ১টি করে গোল।Eprothomalo
কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন দীর্ঘদিন ধরে এই মেয়েদের তৈরি করেছেন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার উপযোগী করে। দলের মেয়েদের ফিটনেসে ভীষণ সন্তুষ্ট কোচ, ‘এই দলের সবচেয়ে ভালো দিক হলো ম্যাচের শুরু থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ওরা একই ধারায় খেলতে পারে। এটা আমাদের জন্য বিশাল প্লাস পয়েন্ট। মেয়েদের ফিটনেস ভালো। ট্যাকটিক্যালি ও টেকনিক্যালি ওদের মধ্যে বোঝাপড়া দারুণ।’
দলের সবার গোল করার সামর্থ্য রয়েছে। এটা নিয়েও যেন গর্বের শেষ নেই ছোটনের, ‘এটা আমাদের জন্য ভালো দিক। স্ট্রাইকাররা কাল হ্যাটট্রিক পাইনি। কিন্তু মিডফিল্ডাররা পাচ্ছে। এটা আমাদের টিমের এক ধরনের স্ট্র্যাটেজিও বলা যায়। হংকংয়ে যেমন আটজন প্লেয়ার গোল পেয়েছে। কাল এখানেও আটজন গোল পেয়েছে। এখানে আনাই গোল করবে, নীলা গোল করবে, আঁখিও গোল করবে। আঁখির তো প্রত্যেক টুর্নামেন্টে গোল রয়েছে। আমাদের এই দলে নির্দিষ্ট করে কারওর গোল করার বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো ফুটবলার দলের জন্য গোল করবে এবং দল জিতবে। অন্যান্য দলের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যই এখানে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন