ষষ্ঠ আফ্রিকান দল সেমিফাইনালে উত্তীর্ন!” গত ৬ই জুলাই ফ্রান্সের সেমিফাইনালে কোয়ালিফাই করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আফ্রিকান ফুটবল অনুরাগীরা এভাবেই তাদের উচ্ছাস প্রকাশ করে।
১৯৮২ সালের পর এবারেই পুনরায় আফ্রিকার পাঁচটি দলই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়।
অবশ্য, আফ্রিকান এবং অন্যন্য বহু ফুটবল অনুরাগী এবছরের ফ্রান্সের ফুটবল দলকে শুরু থেকেই ‘সম্মিলিত আফ্রিকান ফুটবল’ দল হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। কেননা, এবারের ফ্রান্সের ফুটবল দলের ২৩ জন সদস্যের মধ্যে ১৪ জনই ছিলেন আফ্রিকান বংশোদ্ভুত। এর মধ্যে আটজন ফুটবলার আবার আফ্রিকান মুসলিম।
অন্যদিকে এবছরের বেলজিয়াম ফুটবল দল যাকে সমালোচকরা মনে করছেন বেলজিয়াম ফুটবলের সোনালী প্রজন্ম, তাদের মধ্যে চারজন মুসলিম ফুটবলার রয়েছেন। এছাড়া ২৩ জন সদস্যের মধ্যে আটজন সদস্যই আফ্রিকান বংশোদ্ভুত।
নিজ জাতিকে নতুন উচ্চতায় উত্তোলন
ক্যামেরন ও আলজেরীয় বংশোদ্ভুত কিলিয়ান এমবাপে গত ৩০শে জুন আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বিশ্ববাসীকে চমকে দেন। ফ্রান্সের পক্ষ হয়ে এই ম্যাচে দুই গোল করার মাধ্যমে ফরাসী এই ১৯ বছর বয়স্ক স্ট্রাইকার এমন এক উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যান, যা তার পূর্বে আর মাত্র একজন অর্জন করেছিলেন। তিনি ব্রাজিলের কালো মানিক পেলে, ১৯৫৮ সালে তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে গোল করার মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন।
গত ২রা জুলাই, বেলজিয়াম যখন জাপানের বিরুদ্ধে দুই গোল হজম করে স্তম্ভিত, তখন দলের মুসলিম সদস্য মারওয়ান ফিলাইনী ও নাসর শাজলী বেলজিয়ামকে সমতায় ফেরান। তারা উভয়ই আবার আফ্রিকান বংশোদ্ভুত।
মেধা পাচার ও বর্ণবাদ
বিশ্বকাপের বিভিন্ন ইউরোপীয় দলের এরূপ অভিবাসী মেধার ঝলক চমকিত হল, তখন উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই অভিবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন সংকটের সৃষ্টি করা হয়েছে।
অভিবাসন ইস্যুতে ইতিবাচক অবস্থানের কারণে জার্মানীতে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সরকার ভেঙে পড়ার হাত থেকে কোনোক্রমে রক্ষা পায়।
ব্রিটেনে বিপুল পরিমাণে অভিবাসনের কারণেই জাতীয়তাবাদীরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পক্ষে তাদের যুক্তি প্রদান করে।
এবং ফ্রান্সে জাতীয়তাবাদী ন্যাশনাল ফ্রন্টের মেরিন লা পেন অভিবাসনের যুক্তিতেই গত বছর বিপুল পরিমাণ ভোট সংগ্রহ করেন এবং অল্পের জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনের কাছে হেরে যান। তারা বর্তমান ফ্রান্সের ইলেক্টরেটসগুলোর এক-তৃতীয়াংশই তাদের দখলে।
লা পেন দুঃখ করে ফ্রান্সের বর্তমান ফুটবল দল সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন,
“যখনই আমি লা ব্লুসের (ফ্রান্স ফুটবল দলের ডাকনাম) দিকে তাকাই, আমি ফ্রান্স বা আমাকে চিনতে পারিনা।”
ইউরোপীয় অভিবাসী আতঙ্কের প্রথম সূচনা আমরা দেখতে পারি যখন তিন বছর পূর্বে অভিবাসন বিরোধী একটি রাজনৈতিক সুইজারল্যান্ডের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
এছাড়া, এবছর ইতালীতে সংসদ নির্বাচনে দেশটির জনপ্রিয় উগ্র জাতীয়তাবাদী দল ‘লিগা নর্ড’ অভিবাসীদের ইতালী থেকে বের করে দেওয়ার প্রচারণা চালায়। নির্বাচনে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করায় বামপন্থী ফাইভ স্টার মুভমেন্টের সাথে একত্রে কোয়ালিশন সরকার গঠন করে।
ইউরোপের এই চিত্র প্রকাশ করছে, আফ্রিকান বা মুসলিম অভিবাসীরা যতই মেধার পরিচয় দিক না কেন, ইউরোপীয় দেশগুলো এখনো অভিবাসী ইস্যুতে তাদের নেতিবাচক মনোভাব ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন