ওয়াল স্ট্রিট যে বিশ্লেষণ করেছিল বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফটের আয় নিয়ে তারচেয়ে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার বেশি অর্থ কামিয়েছে কোম্পানিটি। বরং কোভিড মহামারী পরিস্থিতি মাইক্রোসফটের এ আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। তার মানে মহামারীর সময় কম্পিউটার, গেম, ক্লাউড কম্পিউটিং এত বিশাল পরিমানে আয় আনতে সাহায্য করেছে মাইক্রোসফটকে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে মাইক্রোসফটের আয় হয়েছে ৪৩.১ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। ওয়াল স্ট্রিটের পূর্বাভাস ছিল মাইক্রোসফটের আয় হবে ৪০.২ বিলিয়ন ডলার। ওয়াল স্ট্রিট এও আভাস দিয়েছিল মাইক্রোসফটের শেয়ারমূল্য ১.৬৪ ডলার বৃদ্ধি পাবে। আদতে এ পূর্বাভাস মিথ্যা প্রমাণ করে তা বেড়েছে ২.০৩ ডলার। এতে সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলার ঘরে গেছে মাইক্রোসফটের। শেয়ারবাজারে এক ঘন্টার লেনদেনে মাইক্রোসফটের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পায় ৬ শতাংশ। দুই ঘন্টা লেনদেনের পরও মাইক্রোসফটের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি ৩ শতাংশ অব্যাহত থাকে। সিএনএন
মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা এক বিবৃতিতে বলেন গত বছরে মহামারী শুরু হওয়ার সাথে সাথে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে ‘ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ এর বিপুল চাহিদার বার্তা আসতে থাকে। এ চাহিদা সামাল দিতে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো গলদগর্ম হয়ে ওঠে। মাইক্রোসফট এ সুযোগ সঠিকভাবেই গ্রহণ করে এবং বিশে^র সর্ববৃহৎ ক্লাউড প্লাটফরমের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। মাইক্রোসফটের ক্লাউড কম্পিউটিং খাতে আয় এখনো অব্যাহত রয়েছে। কারণ মহামারীতে অনেক কোম্পানি নিজেদের ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা সহ বিভিন্ন কাজ থেকে বিরত থাকে এবং তার বিকল্প উৎস হয়ে ওঠে কম্পিউটিং ক্লাউড।
মাইক্রোসফটের এ্যাজুর ক্লাউড প্লাটফরমের আয় গত ত্রৈমাসিকের চেয়ে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস ও গুগল ক্লাউডকে টেক্কা দিয়েই মাইক্রোসফট এ আয় করতে সমর্থ হয়। বাণিজ্যিকভাবে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের এই বিশাল চাহিদা সামাল দিতে মাইক্রোসফটের কর্মীদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। কারণ মহামারীতে অনেক কোম্পানির কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করায় সেক্ষেত্রে কাজের বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হয়। এধরনের চাহিদা পূরণ করেই মাইক্রোসফট এক্ষেত্রে ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মোট আয় করে ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার।
ওয়েডবুশ বিশ্লেষক ড্যান ইভেস বলেন এধরনের ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের চাহিদা আরো বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। বিনিয়োগকারীদের এ খাতে বিনিয়োগেরও পরামর্শ দেন তিনি। এমনকি কোভিড টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর যখন সংক্রমণ হ্রাস পাচ্ছে তারপরও বিশ্লেষকরা বলছেন ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের চাহিদা আরো বজায় থাকবে। আগামী বছর ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে ৫৫ শতাংশ, বর্তমানে যা বাড়ছে ৩৫ শতাংশ হারে। চলতি ত্রৈমাসিকে মাইক্রোসফটের ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে সাড়ে ২১ শতাংশ হারে। এবং তা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানান মাইক্রোসফটের সিএফও এ্যামি হুড। গত ডিসেম্বরে মাইক্রোসফটের নতুন এক্সবক্স সিরিজের এক্স ও এস কনসোলেসের চাহিদা বিশাল পরিমানেই ছিল। ফলে এধরনের দুটি পণ্যের মজুদ গড়তে খুচরা বিক্রেতারা হিমশিম খান। মাইক্রোসফটের চিপ তৈরিকারক এএমডি’কে বাড়তি উৎপাদনে নজর দিতে হয়।
মহামারীর আগে যখন এক্সবক্সের বিক্রি হ্রাস পাচ্ছিল অথচ মহামারী শুরু হবার পর এ পণ্যটির বিক্রি ১৪ শতাংশ বৃদ্ধিতে আয় হয়েছে ১৫.১ বিলিয়ন ডলার। প্রযুক্তি কোম্পানির কম্পিউটার গেম বিক্রি বাবদ নগদের পরিমান এই প্রথমবারের মত ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এক্সবক্স কনটেন্টের আয় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। যা এর আগের বছর ১১ শতাংশ হ্রাস পায়। সত্য নাদেলা আরো বলেন এক্সবক্স সিরিজের এক্স ও সিরিজ এস মাইক্রোসফটের ইতিহাসে সবচয়ে সফলতম ব্যবসা করেছে। আর হুড জানান তার কোম্পানি এখনো এধরনের পণ্য দুটির উল্লেখযোগ্য চাহিদা পাচ্ছে। হুড আশা করছেন চলতি অর্থবছরে কোম্পানির আয় ডাবল ডিজিটেই বৃদ্ধি পাবে তা আয় বা পরিচালনা আয় যেটাই হোক না কেনো।আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন