হারিকেন। টিমটিমে আলোয় কি এক নৈসর্গিক ছায়া। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি নিদর্শন। কত গল্প, উপন্যাসে হারিকেনের উপমা ব্যবহার হয়েছে তার শেষ নেই। অনেক বাড়িতে সন্ধ্যায় হারিকেন জ্বালানোর আগে পৌঁছাতে না পারলে পিটুনি খেতে হয়েছে, এমনও শোনা গেছে। হারিকেন জ্বলা মানে পড়াশোনার সময় হয়ে গেছে। সে সময় পড়াশোনাসহ সব ধরনের প্রয়োজনেই ঘরে ঘরে হারিকেন জ্বলত।
বর্তমানে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যাপক প্রসারে কমে গেছে হরিকেনের চল। এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশের মতো খুলনাতেও কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে হারিকেন। বিদ্যুতের প্রসার, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিভিন্ন ধরনের চার্জার বাতির ব্যবহারে হারিকেনের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। তাই হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।
তবে এখনও দেশের কিছু কিছু চরাঞ্চলসহ দুর্গম এলাকায় কুপির পাশাপাশি হারিকেনের প্রচলন রয়েছে। তবে চার্জার বাতির অধিক ব্যবহারের কারণে সেটাও সংখ্যায় খুব কম। এক সময় এটা হারিয়ে জাদুঘরে চলে যাবে। তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো হারিকেন দেখতে জাদুঘরে যাবে। বইয়ের পাতায় খুঁজবে হারিকেনের ইতিহাস।
একটা সময় ছিল যখন গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে হারিকেন দেখা যেত। তখন হারিকেন মেরামত করতে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিস্ত্রী বসতো। উপজেলার প্রতিটি বাজারে ছিল হারিকেন মেরামতোর অস্থায়ী দোকান। তারা বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে ঘুরে হারিকেন মেরামতের কাজ করতেন। এছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়েও হারিকেন মেরামত করতেন। কিন্তু এখন আর হারিকেনের ব্যবহার তেমন একটা না থাকার ফলে হারিকেন মিস্ত্রীদেরও আর দেখা যায় না।
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বাইনতলা এলাকার নাহিদ ইসলাম। তিনি জানান, রাতে পড়তে বসার আগে হারিকেন নিয়ে ভাই-বোনদের মধ্যে টানা-টানি চলতো। হারিকেন নিয়ে কত গল্প শুনেছি। কিন্তু এখন ঘরে ঘরে পৌছে গেছে বিদ্যুৎ। তাছারা বাজারে বিভিন্ন ধরনের চার্জার এলইডি বাল্ব অনেক কম দামে পাওয়া যায়। যার কারনে এখন আর হারিকেনের প্রয়োজন হয় না।
একই এলাকার আরাফাত শেখ বলেন, এক সময় হারিকেন নিয়ে ডাকপিয়নরা ছুটে চলতেন গ্রামের পর গ্রামে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই রাতের বেলায় হারিকেন নিয়ে বের হতেন। হারিকেনের আলো গৃহস্থালির পাশাপাশি ব্যবহার হতো বিভিন্ন গ্রাম্য যানবাহনেও। কিন্তু আধুনিকায়নে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বাতিতে বাজার ভরপুর। যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের আলোর অন্যতম উৎস ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।
রূপসা উপজেলার খাজাডাঙ্গা গ্রামের হারিকেন মেরামতকারী আরমান গাজী ব্রেকিং নিউজকে বলেন, এক সময় বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিজের হাতে অনেক হারিকেন মেরামত করেছি। কিন্তু এখন কারও ঘরে হেরিকেন থাকলেও তা কেউ ব্যবহার করে না। এর ফলে মেরামতের কাজও তেমন হয় না। যার কারণে এই পেশা ছাড়তে হয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন