ডেঙ্গু মোকাবিলায় এসেছে স্মার্টফোন অ্যাপ। সরকারের দেয়া হিসাব অনুযায়ী চলতি মাসের প্রথম ১৭দিনে যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সেটা গত জুলাই মাসে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সরকারের তরফ থেকে এই ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হলেও এর প্রকোপ কমার কোন লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছেনা। ঠিক এমন সময়ে ডেঙ্গু মোকাবেলায় সরকারকে সাথে নিয়ে ‘স্টপ ডেঙ্গু’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করার কথা জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ বা ই-ক্যাব। বিবিসি
আর তাদের সহযোগিতায় কাজ করছে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর, অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং বাংলাদেশ স্কাউটস। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বিবিসি বাংলাকে জানান যে, এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত ডেঙ্গু মোকাবিলায় দেশের প্রতিটি নাগরিককে যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে এবং সবার কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রেও অ্যাপটি কাজ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, সরকারের একার পক্ষে ডেঙ্গুর মতো এতো বড় একটি বিষয় সামাল দেয়া বেশ কঠিন। আমরা চেয়েছি এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিককে জন সচেতনতামূলক প্রক্রিয়ার সাথে সংযুক্ত করতে। যেন তারা নিজেরা সচেতন হন এবং ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে সক্ষম হন। প্রায় তিন কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন।
স্টপ ডেঙ্গু নামের ৩.৪৭ মেগাবাইটের এই অ্যাপটি প্লে স্টোর থেকে সহজেই ডাউনলোড করা যায়। ইন্সটলেশনের সময় অ্যাপটিকে আপনার ফোনের ক্যামেরা এবং লোকেশন ব্যবহারের অ্যাক্সেস দিতে হবে। ডেঙ্গুর ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে এই অ্যাপে বেশ কয়েকটি ফিচার রয়েছে। তারমধ্যে একটির কাজ হল কেউ যদি কোন জায়গায় এডিস মশার উৎপত্তিস্থল বা কোথাও পানি জমে থাকতে দেখেন, তাহলে তিনি সেটার ছবি তুলে সাথে সাথে এই অ্যাপে আপলোড করবেন। অ্যাপটি ওপেন হলেই, একটি ‘ছবি তুলুন’ বাটন এবং ‘মন্তব্য করুণ’ উইন্ডো আসবে, যেখানে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকাও দেয়া থাকবে।
এবার আপনি আপনার চারপাশে এডিস মশার সন্দেহজনক আবাসস্থলেরসন্ধান পেলে বিশেষ করে কোন পানি জমে আছে এমন স্থান দেখতে পেলে এই অ্যাপের মাধ্যমে ছবি তুলে জমা দিতে পারবেন।কোন যায়গা থেকে এই ছবি পাঠানো হচ্ছে সেটা অ্যাপে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ম্যাপিং হয়ে যাবে। এজন্য মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা জরুরি। ছবিটি সফলভাবে জমা হলে বা সাবমিট হলে সরকারের কাছে সরাসরি সেই লোকেশনের তথ্য চলে যাবে।এছাড়া যারা সেখানে কাজ করতে যাচ্ছে তারা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা এই অ্যাপের মাধ্যমে সেটারও আপডেট পাওয়া যাবে। যদি কোন কারণে লোকেশনের তথ্য পাওয়া না যায় তাহলে গ্রাহকের কাছে একটি নোটিফিকেশন আসবে। এছাড়া এই ম্যাপিং এর মাধ্যমে জানা যাবে যে কোন কোন এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপটা বেশি।
সরকারের নয়টি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। যুক্ত করা হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীদের। ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশা নিধন থেকে শুরু করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য বাড়তি জনবলকে নিয়োজিত করা হয়েছে। এখন তাদের কাছে যদি এই ম্যাপিং থাকলে জরুরি পয়েন্টগুলোতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সহজ হবে বলে মনে করেন মিঃ তমাল।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন মহলের পাশাপাশি বাংলাদেশে যে ১৮ লাখ স্কাউট সদস্য রয়েছেন তাদেরকেও এই স্বেচ্ছাসেবী কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশে যে প্রায় ৫০ হাজার ডেলিভারি ম্যান ডোর টু ডোর সার্ভিস দিয়ে আসছেন, তাদেরকেও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করছে ই কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। যেন তারাও নাগরিকদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করতে পারে এবং এই অ্যাপসের ব্যাপারে মানুষকে জানাতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন