বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা আমদানির বিষয়ে সিনেমাপাড়ায় তোলপাড় চলছে। শাহরুখ অভিনীত বলিউডের আলোচিত-সমালোচিত ‘পাঠান’ সিনেমা মুক্তির ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। দেশীয় হলগুলোতে সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে ছবিটি মুক্তি দিতে চেয়েছিল ‘অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। বিষয়টিকে সমর্থন করে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমদানি করা সিনেমার আয়ের ১০ শতাংশ শিল্পী সমিতিকে দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন। তবে আলোচনা প্রকাশ্যে আসার পর এর পক্ষে-বিপক্ষে মত দিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পীসহ সংশ্লিষ্টরা।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন সুমন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, কাল সমিতির সভা ডাকা হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে কথা বলবেন। তবে সমিতির সাবেক সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান নয়া দিগন্তকে বলেন, এভাবে করে চলচ্চিত্র নিয়ে তৎপরতা চালালে এ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, দর্শকদের আগ্রহ দেখতে তারা আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে সিনেমা আমদানির পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। তার মতে তাতে করে সিনেমা হলগুলো রক্ষা হবে। কিন্তু নিজেদের সিনেমা বাদ দিয়ে আমদানি সিনেমায় কিভাবে এ শিল্প রক্ষা হবে এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, সিনেমার অভাবে দেশে এখন প্রায় ৯০ শতাংশ হল বন্ধ হয়ে গেছে। তাই হল বাঁচাতে এমন সিদ্ধান্তকে তারা সমর্থন করছেন।
চলচ্চিত্র প্রযোজক গোলাম কিবরিয়া লিপু বলেন, এখন তারা নিরুপায়। এমন সিদ্ধান্তে যদিও দেশের সিনেমা শিল্পে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তার পরও দেশে সিনেমা হল টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। কারণ ছবির অভাবে কয়েকটি ছাড়া একে একে সব হল বন্ধ হয়ে গেছে। সিনেমা না থাকলে বাকি যা হল আছে তাও বন্ধ হয়ে একদিন দেশ সিনেমা হল শূন্য হয়ে পড়বে। ফলে এখন সিনেমা হল রক্ষা জরুরি হয়ে পড়ায় তারা এ সিদ্ধান্তের পক্ষে কাজ করছেন।
অন্য দিকে চলচ্চিত্র অভিনেতা ডিপজল চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, একটি চক্র চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তার মতে, হিন্দি সিনেমা মুক্তি দেয়ার ফলে নেপালের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বিলীন হয়ে গেছে। এতেই প্রমাণিত হয় আমদানি করা ছবিতে নিজেদের শিল্প রক্ষা সম্ভব নয়।
চিত্রনায়ক জায়েদ খান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে কোনো হিন্দি ছবি মুক্তি দিতে চাইলে ভারতে আমার ছবি, আমাদের সংস্কৃতির ছবি মুক্তি দিতে হবে। আর সেটা না হলে এ দেশে কোনোভাবেই হিন্দি ছবি মুক্তির পক্ষে নন তিনি। তার মতে, দেশে হিন্দি ছবি আমদানির ফলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নেপালের মতো হবে। নায়ক ওমর সানীও আমদানির বিপক্ষে তার মতামত দেন।
অপর দিকে সিনিয়র সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র বিশ্লেষক আহমেদ তেপান্তর মনে করেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প লাভবান হবে। তিনি বলেন যারা এর বিরোধিতা করছেন তারা না জেনে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা মেনেই ছবি আমদানি করা হবে। তাতে দেশের সিনেমা ও শিল্প রক্ষা হবে।
তবে শক্তিমান অভিনেত্রী ও শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য অরুণা বিশ্বাস ছবি আমদানির পক্ষে থাকলেও শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কথায় দ্বিমত পোষণ করেছেন।
হিন্দি সিনেমা চালাতে হলে শিল্পী সমিতিকে দশ পার্সেন্ট দিতে হবে বলে নিপুণ যে কথা বলেছেন তাতে অরুণা বিস্ময় প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এটা শিল্পী সমিতির কাজ নয়। এসব কথা বলার জন্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রী আছেন।
চলচ্চিত্রের সিনিয়র ও চলতি প্রজন্মের শিল্পীরা মতামত দেবেন। কারণ শিল্পীদের পাশাপাশি এর সাথে পরিচালক-প্রযোজক-ক্যামেরা থেকে শুরু করে সবার স্বার্থ জড়িত। তাই সবার সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন