ঢাকাই চলচ্চিত্রে আজ শিল্পী সংকট। ঘুরে ফি রেই সেই হাতে ঘোনা কনেকজন নায়ক-নায়িকাই। অথচ একসময় শিল্পী সংকট বলতে চলচ্চিত্রে কোন শব্দ ছিলো না। কোন সিনেয়া একাধিক নায়ক কিংবা নায়িকা দেখা যেতে। যারা তাদের অভিনয় দিয়ে অল্প সময়েই দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। অল্প সময়েই চলচ্চিত্রে আলোর ঝলকানি দিয়ে হুট করে নিভে গিয়েছে সেই তারারা। বর্তমানে এদের বেশিরভাগই অভিনয় থেকে দূরে; কেউ এখনো অভিনয় করছেন ।
পাঠকের জন্য দেয়া হলো সে ধরণের কয়েকজন নায়ক-নায়িকার খোঁজ।
তামান্না
প্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘ভণ্ড’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক হয়েছিল তামান্নার। চিত্রনায়ক
রুবেলের বিপরীতে প্রথম সিনেমাতেই অভিনয় করে বাজিমাত। এরপর ‘হৃদয়ে লেখা নাম’, ‘তুমি আমার ভালোবাসা’, ‘কঠিন শাস্তি’, ‘আমার প্রতিজ্ঞা’, ‘চাই শুধুভালোবাসা’, ‘সন্ত্রাসী’ বন্ধু’সহ অনেক সিনেমায় তাকে দেখা গেছে।
২০১৩ সালে তামান্না অভিনীত মঈন বিশ্বাস পরিচালিত ‘পাগল তোর জন্য রে’ চলচ্চিত্রের পর তাকে আর অভিনয়ে দেখা যায়নি। বর্তমানে তিনি সুইডেনে আছেন। বেশ কয়েকবছর ধরেই সেখানে অবস্থান করছেন।
রত্না
একটা সময়ে ঢাকাই সিনেমায় সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন এ নায়িকা। তবে তা খুব বেশি দিনের জন্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব
হয়নি। চলচ্চি ত্রের কাজ কমে যাওয়ায় ছোটপর্দায়ও কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু এ মাধ্যমেও ততটা সফলতা অর্জন করতে পারেন নি। বর্তমানে অভিনয় জগত থেকে সম্পূর্ণদূরে রয়েছেন এই অভিনেত্রী। ব্যাবসায় মনোযোগী হয়েছেন তিনি। তামান্না ফিল্মস নামে একটি প্রযোজনা সংস্থাও গড়ে তুলেছেন রত্না। সেখান থেকে সর্বশেষ ‘সেদিন বৃষ্টি ছিল’ নামের একটি ছবি মুক্তি দেয়া হয়। সেখানেও নায়িকা ছিলেন তিনি। কিন্তু সিনেমাটিতে কোনভাবেই আলোচনা তৈরি করতে পারেন নি রত্না।
বাপ্পারাজ
এক সময়ের আলোচিত নায়ক বাপ্পারাজ। `চাপাডাঙ্গার বৌ` ছবিতে অভিনয় করে প্রথম চলচ্চিত্রে পা রাখেন তিনি। বাবা
নায়করাজ রাজ্জাকের পরিচয়ে নয়, নিজের সাবলীল অভিনয় দিয়েই দর্শকদের কাছে পরিচিত হয়েছেন তিনি। এখনও অভিনয় করছেন। তবে অনিয়মিত। সর্বশেষ তাকে দেখা গিয়েছে `পোরা মন টু` ছবিতে।
এক সা ক্ষাৎকারে বাপ্পারাজ বলেন, চলচ্চিত্রে নিয়মিত আর হব না। মাঝে কিছুছবিতে অভিনয় করেছি কারণ ছবির গল্প
গুলো ভালো ছিলো। তবে ধীরে ধীরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরে যাব। অন্য কিছুতে মনস্থির করতে হবে। কারণ, এখানে
এখন আর সিনেমা করার সেই পরিবেশটা নেই, যা আমাদের সময় ছিল। এই পরিবেশে আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়। চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিতে চাই।
শাকিবা
চিত্রনায়িকা শাকিবা বিনতে আলী। এখনো পর্যন্ত তার অভিনীত প্রায় ৪০টির বেশি ছবি মুক্তি পেয়েছে। দীর্ঘসময় ধরে চলচ্চিত্র থেকে দূরে রয়েছেন একসময়ের সুপারহিট এই চিত্রনায়িকা। শাকিবার অভিষেক হয়েছিল মমতাজুর রহমান
আকবরের ‘জীবনের গ্যারান্টি নাই’ ছবির মাধ্যমে। আমিন খানের বিপরীতে প্রথম ছবিই সুপারহিট হয়। এরপর অনেকগুলো ছবিতে কাজ করেছেন শাকিবা। যেমন- ‘ভন্ড নেতা’, ‘বাঁচাও দেশ’, ‘ মাঝির ছেলে ব্যারিস্টার’, রূপান্তর, দুর্ধষ’, ‘বস্তির ছেলে কোটিপতি’, ‘এক জবান’, ‘মাটির ঠিকানা’ ইত্যাদি।
লিমা ১৯৯৪ সালের শেষের দিকে জীবন রহমান পরিচালিত ‘প্রেম যুদ্ধ’ ছবিতে সালমানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন লিমা। পরের বছর
দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘কন্যাদান’ ছবিতেও দেখা যায় এই জুটিকে। কিন্তু চিত্রনায়িকা লিমা পরে একেবারেই হারিয়ে যান চিত্রজগত থেকে।
শাকিল খান
সালমান শাহ’র অকাল প্রয়াণে যে ক’জন নায়ক ঢাকাই সিনেমার হাল ধরেছিলেন তাদের অন্যতম একজন শাকিল খান। বহু জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল সিনেমার নায়ক তিনি। শাবনূর ও পপির সঙ্গে জুটি বেঁধে উপহার দিয়েছেন নন্দিত কিছুসিনেমা। যে তালিকায় থাকবে নারীর মন, বিয়ের ফুল, আমার ঘর আমার বেহেশত, এই মন তোমাকে দিলাম, প্রাণের প্রিয়তমা
ইত্যাদি। ১৩৪টি চলচ্চিত্রের নায়ক শাকিল খান অবশ্য এখন চলচ্চিত্র থেকে রয়েছেন বেশ দূরে। সংসার, ব্যবসা ও
রাজনীতিতে তিনি সক্রিয়। তবে চলচ্চিত্রের মা নুষদের সঙ্গে যোগাযোগটা নিয়মিতই হয় তার। অবসর পেলে জমে আড্ডাও, ঘুরে যান প্রিয় এফিডিসিতে।
সাহারা
২০০৪ সালে ‘রুখে দাঁড়াও’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চিত্রজগতে আত্মপ্রকাশ সাহারার। একসময় অশ্লীলতার তকমা গায়ে
জড়িয়েছিলেন তিনি। মাঝে ভালো কিছুছবিতে অভিনয় করে নিজেকে কিছুটা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কারও করে নিয়েছিলেন
সাহারা। ২০০৬ সালে শাকিব খানের বিপরীতে ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ চলচ্চিত্রটি বেশ ভালো ব্যবসা করেছে। ঢালিউডে শিল্পী উত্তরণে যথেষ্ট ভূমিকা রেখে এগোচ্ছিলেন এই নায়িকা। কিন্তু ২০১৩ সালে এক চিত্রপ্রযোজককে গোপনে বিয়ে করে চলচ্চিত্র থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে যান সাহারা। বর্তমানে পুরোদস্তুর সংসারী এই অভিনেত্রী।
কেয়া
চলচ্চিত্রের আরেকজন গ্ল্যামারগার্লকন্যা কেয়া । সিনেমায় এসে বেশ আলোচনা তৈরি করেছিলেন তিনি। আজ তিনি নেই। হারিয়ে গেলে ন অন্যদের মতন। কালেভাদ্রে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও ঘুরে দাড়ানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন কেয়া। তিনিও পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
শিল্পী
১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল- এই পাঁচ বছরে ৩৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন দর্শকনন্দিত নায়িকা শিল্পী। তার পুরো নাম আঞ্জুমান আরা শিল্পী। মোহাম্মদ হোসেন প্রযোজিত রানা নাসের পরিচালিত ‘প্রিয়জন’ চলচ্চিত্রের কথা মনে করিয়ে দিলেই খুব সহজেই দর্শক এই শিল্পীকে মনে করতে পারেন। কারণ তিনি প্রয়াত অমর নায়ক সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয়
করেছিলেন এতে। দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষেথেকেও ২০০০ সালে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন শিল্পী। তার অভিনীত
মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ চলচ্চিত্র দুটি হচ্ছে নায়করাজ রাজ্জাকের ‘প্রেমের নাম বেদনা’ এবং দেওয়ান নজরুলের ‘সুজন বন্ধু’। বহু নাটকেও অভিনয় করেন এ অভিনেত্রী। বর্তমানে অভিনয় ছেড়ে সংসার এবং দুই সন্তান ছেলে সানাদ ও মেয়ে অ্যাঞ্জেলিনাকে নিয়েই ব্যস্ত নায়িকা শিল্পী।
মুক্তি
অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে মুক্তি। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘হাছন রাজা’ ও ‘চাঁদের আলো’ সহ বেশ কিছুসিনেমায় অভিনয়করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একটা
সময়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন তিনি। শোনা গেছে তার মায়ের অভিনীত কিছুবিখ্যাত সিনেমা যেমন ‘শুভদা’, ‘দেবদাস’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ সিনেমাগুলো রিমেক করবেন মুক্তি। ছবিগুলোতে তিনি নিজেই অভিনয় করবেন।
সোনিয়া
নব্বইয়ের দশকে ঢাকাই সিনেমার অন্যতম ব্যস্ত নায়িকা ছিলেন সোনিয়া। পঞ্চাশটির অধিক সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন এ অভিনেত্রী। যার মধ্যে বেশ কিছুসিনেমা ব্যবসাসফল হয়েছে। সালমান শাহ, বাপ্পারাজ, রি য়াজসহ প্রথম সারির নায়কদের বিপরীতে অভিনয় করেছেন সোনিয়া। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি নাটকেও অভিনয় করতেন। একটা সময়ে এসে হারিয়ে যান মিডিয়া থেকে। প্রায় দশ বছর ধরে মিডিয়ার বাইরে এই নায়িকা। তিনি এখন লন্ডন প্রবাসী। কয়েক বছর আগে বিয়ে
করে প্রবাসী স্বামীর হাত ধরে লন্ডনে পাড়ি জমান সোনিয়া। সেখানকার নাগরিকত্বও পেয়েছেন। বৈবাহিক জীবনে
সোনিয়া
তিন সন্তানের জননী। ১৯৯১ সালে ‘মাস্তান রাজা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সোনিয়ার চলচ্চিত্র অভিনয় শুরু। এরপর প্রয়াত নায়ক রাজ রাজ্জাকের নির্দেশনায় বাপ্পারাজের বিপরীতে ‘প্রেম শক্তি’ ছবিতে প্রথম না য়িকা চরিত্রে কাজ করেন তিনি। সর্বশেষ অভিনীত দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুড় বাড়ি জিন্দাবাদ’ ছবিটি। এরপর আর নতুন কোনো ছবিতে তাকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
সিমলা
প্রথম সিনেমাতেই বাজিমাত সিমলা। আলেকজান্ডার বো এর বিপরীতে ‘ম্যাডাম ফুলি’ সিনেমার জন্য সে বছরই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। এরপর বেশকিছু প্রশংসিত সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন সিমলা। কিন্তু একটা সময় তিনিও হারিয়ে গেলে ন। সর্বশেষ ‘নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করেন। তবে আগের মত আর ফেরার সম্ভাবনা নেই এই নায়িকার।
এছাড়াও হারিয়ে যাওয়ার তালিকায় আছেন রেসি, শ্যামা, একা, বৃষ্টি, সাবরিনা ও কাঞ্চি সহ আরো অনেকে। এরা সিনেমায় এসে কোনো না কোনো সময়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। আবার কোথায় যেন হারিয়েও গেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন