আজম খান (২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ - ৫ জুন ২০১১)
আজম খান শুধু কণ্ঠযোদ্ধাই ছিলেন না। ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তার ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। আর স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তারুণ্যের যন্ত্রণা ও আশা আকাঙ্ক্ষা তার মতো করে কেই-বা এত চমৎকারিত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
১৯৫০ এর এই দিনে অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৭১ বছর। এ দিনে দু-এক কথায় শুনুন তার যুদ্ধ যাত্রার গল্প।
২১ বছরের টগবগে তরুণ আজম খানের যুদ্ধ ছিল দুইধারী তরোয়ালের মতো। ভারতের মেঘালয়ের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে কখনো বাটি, চামচ, কৌটা, ডিব্বায় টুংটাং সুর তুলে গানের তালে সহযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করেছেন; কখনো অস্ত্র হাতে যোগ দিয়েছেন সাহসী গেরিলা অপারেশনে। আর সাংগীতিক অপারেশন তো কখনই থামেনি!
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতের পর একদিন আজম খানদের বাড়িতে অস্ত্র উঁচিয়ে হাজির হয় হানাদারেরা। ছেলের খোঁজে মা-বোন-বাবাকে তিরস্কার করে গেলেন।
এ নিয়ে কয়েক বছর আগে আজম খানের মেয়ে ইমা খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “দাদাকে (আজম খানের বাবা) যখন পাকিস্তানিরা জেরা করছিলেন, তার ছেলেদের খুঁজছিলেন, ছেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে দাদা দুই রাকাত নামাজ পড়তে চান। তারা তাকে নামাজ পড়তে দিয়েছিল। সেইবার কিছু না পেয়ে হানাদার বাহিনী চলে গিয়েছিল।”
ঘরে ফিরে আজম খান পুরো ঘটনা শুনে মনে জিদ চেপে যায়। বাবাকে বলেন, যুদ্ধে যাব। সায় দিয়ে বাবা বলেছিলেন, “দেশ স্বাধীন না করে ঘরে ফিরবি না!”
এরপর কুমিল্লা বর্ডার পেরিয়ে ত্রিপুরার আগরতলা হয়ে প্রশিক্ষণ নিতে গেলেন মেলাঘরে। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের ২নং সেক্টরে মেজর এটিএম হায়দারের কাছে দুই মাস গেরিলার যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর।
প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে কুমিল্লার সালদায় প্রথম সম্মুখ সমরে অংশ নেন তিনি। ইমা বলেন, “কখনো ভয়াবহ যুদ্ধের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বাবা, সালদা নদীর পানিতে দীর্ঘসময় ডুবে থেকে সাঁতরে অস্ত্রবাহী নৌকা পারাপারের ফলে প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিলেন। অসংখ্য গুলিবর্ষণ আর বোম বিস্ফোরণসহ যুদ্ধের নানান ভয়াবহ দৃশ্য নিয়ে অচেতন হয়েছিলেন। তখন বন্ধুদের সাহায্য পেয়েছিলেন।”
সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কুমিল্লার অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে তার সঙ্গে বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন জাকির, রুমিন, সাবু, ফোয়াদ ও ছোটভাই খোকা। কুমিল্লার অপারেশনে সাফল্য পাওয়ায় ঢাকার একটি গেরিলা গ্রুপের সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয় আজম খানকে। যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, গুলশানসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সম্মুখ সমরের নেতৃত্ব দেন তিনি। ছিলেন বিখ্যাত গেরিলা অপারেশন ‘ক্র্যাক প্লাটুন’র অন্যতম সদস্য।
যু্দ্ধের মাঝে হঠাৎ খবর এলো ছোটভাই খোকাকে ধরে নিয়ে গেছে হানাদাররা; নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ভাইকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন