গভীর মুগ্ধতা নিয়ে বউয়ের দিকে তাকালাম। সে বেশ আগ্রহের সঙ্গে শাড়ি খোঁজার চেষ্টা করছে। আমি অবাক হয়ে যাই, একটা মাত্র শাড়ি খোঁজার জন্য তো এত সময় লাগার কথা না! যে সময় নিয়ে বউ শাড়ি খুঁজছে সে সময়টুকু পেলে আমার আরামের একটা ঘুম হয়ে যেত!
মুগ্ধতা নিয়ে বউয়ের দিকে তাকানোর কারণ হলো তার ধৈর্য্য! এত সময় নিয়ে কোনো কিছু খোঁজার ধৈর্য্য আমার কোনো কালে ছিল না। কোনো কালে হবে বলেও মনে হয় না। সেই সকাল থেকে আলমারির ভেতরে যুদ্ধ চলছে। এখানকার শাড়ি ওখানে, ওখানকার শাড়ি এখানে! কোনো শাড়ির ভাঁজ খুলে যাচ্ছেতাই অবস্থা! আমি বউয়ের এমন বেহাল দশা দেখে তার হাল ধরার আশায় এগিয়ে গেলাম, ‘বউ, আমি তোমাকে একটু হেল্প করি। কেমন শাড়ি তুমি পরতে চাচ্ছো আজ?’
বউ আমার দিকে তাকাল। অদ্ভুত নয়নে, কিছুটা বাঁকাভাবে। আমি একটু সরে এলাম। বললাম, ‘এমনভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার খুব ভয় করছে। আমি কি কোনো অপরাধ করেছি?’
‘অবশ্যই অপরাধ করেছ! মহাসাগর সমান অপরাধ! তুমি শাড়ির কী বোঝো! তুমি কি মেয়ে মানুষ? মেয়ে হলে বুঝতে আমার জ্বালাটা! আমি এখন কোন জ্বালায় মরছি!’
‘নিশ্চই শাড়ি সংক্রান্তু কোনো জ্বালায়?’
‘তা নয়তো প্যান্ট সংক্রান্ত জ্বালায় মরব! আমি কি প্যান্ট পরি!’
আমি আরেকটু দূরে সরে বসি। বলা যায় না, রাগ করে শাড়ির স্ত‚পটাই আমার দিকে ছুড়ে মারতে পারে! তখন আবার শাড়ির চাপায় পিষ্ট হতে হবে! এতগুলো শাড়ির ওজন তো আর কম না। এভাবে আরও অনেক্ষণ কাটল। তারপরও বউয়ের শাড়ি খোঁজা শেষ হয় না দেখে আবারও সাহস করে এগিয়ে যাই তার কাছে, ‘আজ কোথাও কি দাওয়াত আছে তোমার?’
‘পাড়ার সাবিনা আপার আজ ম্যারেজ ডে। শুধু ঘরোয়াভাবে মহলার মহিলাদের দাওয়াত করেছেন তিনি। আমার তো আর সে ঘরে বিয়ে হয়নি যে ম্যারেজ ডে পালন করব! পোড়া কপাল আমার!’
‘যাক, কপালটা পোড়া হোক, তবুও তো কয়লা হয়নি! কয়লা হলে সেই কয়লা দিয়ে না হয় কিছু না কিছু করা যেত! এখন তো কয়লারও অনেক দাম!’
‘ফোড়ন কাটবে না বলে দিলাম। এটা আমার পছন্দ না। এমনিতেই কোন শাড়ি পরব বুঝতে পারছি না! কোনোটাই তো পছন্দ হচ্ছে না!’
‘ওমা তাই!’ অবাক হয়ে যাই আমি, ‘বুঝতেই পারছ না! তোমার তো মিনিমাম ত্রিশটা শাড়ি! এর ভেতর থেকেই পছন্দ হচ্ছে না! তাহলে তো তোমাকে পুরো দোকান দিয়ে দিতে হবে! এখন দোকান আমি কোথায় পাই বল তো!’
আরও কিছুক্ষণ নীরবে শাড়ি ঘাঁটাঘাটি করে বউ। তারপর বলল, ‘তুমি কি আমাকে শাড়ি কিনে দাও? পছন্দসই কোনো শাড়িই তো আমার নেই!’
‘তাই!’ আবারও অবাক হয়ে যাই আমি, ‘যে ত্রিশটা আছে সেগুলোর একটাও পছন্দ না! পছন্দ না করেই তুমি শাড়িগুলো কিনেছ! আর আমি তোমাকে শাড়ি কিনে না দিলে এই শাড়িগুলো কোথা থেকে এল বল তো? হাওয়ায় উড়ে তো আর আসেনি! কিংবা শাড়িগুলোর তো আর পা গজায়নি যে হেঁটে হেঁটে এখানে এসেছে!’
বউ খটমট করে তাকাল আমার দিকে। তারপর বাজখাঁই গলায় বলল, ‘যে শাড়িগুলো আছে সেগুলো সব তো মহল্লার মহিলারা দেখে ফেলেছে! এখন একটা নতুন শাড়ি না হলে কি চলে! ম্যারেজ ডে পার্টিতে যাব। সবাই এমন শাড়িই পরবে- যে শাড়িগুলো অন্যরা দেখেনি। এখন মনে হচ্ছে আমিই তেমন শাড়ি পরব যেটা সবাই এরমধ্যে দেখে ফেলেছে। তুমিই বল এতে আমার সম্মান থাকবে?’
‘না, থাকবে না। এটা আমি অবশ্যই বুঝতে পারছি।’ নীরবতা পালন করি কিছুক্ষণ।
তারপর বেশ আনন্দ নিয়ে বলি, ‘ বউ, তাহলে একটা কাজ করি। আমরা মহল্লাটাই বদল করে ফেলি! এমন এক মহল্লায় যাব যেখানে তোমার শাড়িগুলো আশেপাশের কোনো ভাবি এরমধ্যে দেখেনি। তখন সব তোমার কাছে নতুন মনে হবে, মহল্লার ভাবিদের কাছেও!’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন